জুরাইনের প্রধান সড়কে যানজট আর কাদাপানিতে চরম দুর্ভোগ সাধারণ মানুষের
৪ জুন ২০১৮, সোমবার, ১১:৩০

কাদা আর জটে নাকাল রাজধানীবাসী

‘উন্নয়নমূলক’ কাজের জন্য দৈনিক বাংলা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তা কাটা। কোনো অংশে বড় বড় গর্ত। পাশেই মাটি আর বালুর স্তূপ। একটু বৃষ্টি হলেই সেই বালু আর মাটিতে পুরো রাস্তায় কাদা জমে যায়। কাদার ওপর দিয়ে হাঁটতে অথবা গাড়ি চালাতে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয় পথচারীদের। বৃষ্টি হলে কাদা, রোদ হলে ধুলো, অন্য দিকে যানজট এসব মিলে রাজধানীর মানুষ চরম নাকাল হচ্ছেন।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে রাজধানীর যানজট ততই বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর অলিগলিতেও ছিল তীব্র যানজট। কাদা আর যানজটে পথচারীরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে রোজাদারদের কষ্টের যেন সীমা ছিল না। সকাল থেকেই যানজট অসহনীয় রূপ নেয়। ভুক্তভোগীরা জানান, ভোর থেকে পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত গাড়ির বিশাল লাইন পড়ে যায়। একইভাবে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে শুরু করে মাওয়া হাইওয়ে পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট। সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, পুরো মিরপুর রোড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট, নাবিস্কো থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা ও মহাখালী থেকে ফার্মগেট, এয়ারপোর্ট থেকে কাকলীসহ রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই গতকাল অবরুদ্ধ ছিল। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দুপুরের দিকে রাজধানীর বাংলামোটর সিগনালে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকের রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহনগুলো এক ইঞ্চিও নড়তে পারেনি। এরপর ভিআইপি রোড কিছুটা ফাঁকা হলে যানবাহনের কিছুটা চলাচল শুরু হয়। এ দিন রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে যানজটের তীব্রতা। দুপুরের পর দেখা যায় মৎস্যভবন মোড় থেকে চার দিকের রাস্তাগুলো একেবারে বন্ধ। গাড়িগুলো কোনো দিকেই চলতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ একদিক থেকে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আবার সে দিকের রাস্তাও একটু পরে আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাপে।

এই যানজটের সাথে যোগ হয়েছে নতুন ভোগান্তি-রাস্তায় বড় বড় গর্ত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সংস্কারের অভাবে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গুলিস্তান থেকে টিকাটুলি পর্যন্ত বঙ্গভবনের পাশের রাস্তাটিতে এখন বড় বড় গর্ত। দিনে অসংখ্য যানবাহন গর্তে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গোলাপবাগ মাঠ থেকে মুগদা পর্যন্ত বিশ্বরোডের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গত দেখা যায়। সেই গর্তে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। তখন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে এই রাস্তায়। এসব গর্তের কারণে রাস্তায় যান চলাচলের গতি কমে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে শুরু তীব্র যানজট। মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দুইপাশ জুড়ে দেখা যায় শত শত গাড়ি পার্কিং করা। বড় বড় ভবনেরও নিজস্ব কোনো পার্কিং না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই সব ভবনের সামনে গাড়ি রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা যায় কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্তও। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যস্ত মার্কেট থাকলেও ওই সব মার্কেটের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ক্রেতারা তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে মার্কেটে ঢুকছেন। কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর সড়ক, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, দিলকুশা, নর্থসাউথ রোড, ইংলিশ রোড, বংশাল, নবাবপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য তীব্র যানজট।

কোনো কোনো এলাকার রাস্তা পুরোটাই দখল করে পার্কিং বানানো হয়েছে। ওই সব পার্কিংয়ে বিশেষ করে সরকারি যানবাহনই দেখা যায়। সচিবালয় ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাঝের রাস্তাটি পুরো পার্কিং স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশে যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তার আকৃতি ছোট হয়ে যায়। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। নটর ডেম কলেজের সামনে রাস্তার দক্ষিণমুখী লেনে এখন অঘোষিত বাস ডিপো বানানো হয়েছে। এখানে থামিয়ে রাখা হয় কয়েক শ’ গাড়ি। এর মধ্যে বিআরটিসির গাড়িও রয়েছে। এভাবে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার ওপর মিনি টার্মিনাল বানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই যানজটের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কাদা আর ধুলা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে যায় কাদা। আর রোদ উঠলে ধুলা। গতকাল বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ এলাকার রাস্তায় কাদা জমে যায়। রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার এখন এই একই দশা। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/322646