৩ জুন ২০১৮, রবিবার, ৯:১৯

কারবারিদের পালানোর ‘সুযোগ দিয়ে’ অভিযান!

মূল অভিযান শুরুর আগেই পুলিশের একটি অগ্রগামী টিম এলাকায় গিয়ে ঘুরে আসে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে যখন বিশেষ অভিযান শুরু হয়, ততক্ষণে তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এরপর হাতে থাকা মাদক তালিকা ধরে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু প্রকৃত মাদক কারবারিদের সন্ধান মেলেনি। একপর্যায়ে রাস্তা থেকে সন্দেহভাজনদের আটক করে গাড়িতে ওঠায় পুলিশ। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাচাই-বাছাই করার কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনির হোসেন।

তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোয় তারা খুশি হয়েছে; কিন্তু যারা এলাকায় নিয়মিত মাদক কারবার করে তাদের একজনও ধরা না পড়ায় তারা বিষয়টি ভেবে কিছুটা সন্দিহান। ধরা না পড়ায় শীর্ষ মাদক কারবারিরা ফের এলাকায় এসে মাদক বেচাকেনা করবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে। সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
সারা দেশের সঙ্গে রাজধানীতেও চলছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। চলমান এই মাদকবিরোধী অভিযানে গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মিরপুর কালশী এলাকায় অভিযান চালায় ডিএমপি। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, স্পেশাল আর্মড ফোর্স ও ডগ স্কোয়াডের সম্মিলিত অংশগ্রহণে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনির হোসেন বলেন, মিরপুরের কালশী, বিহারি কলোনি ও এর আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা, ৬৭৪ গ্রাম হেরোইন, ছয় কেজি গাঁজা ও ৬০ লিটার চোলাই মদ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কালশী এলাকায় পাঁচটি বিহারি ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল মাদক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মধ্যে মো. মোস্তাক, কাল্লু, আফসার ওরফে আফসানিয়া ও তাঁর মাসহ আরো আন্তত ১৫ জন শীর্ষ পর্যায়ের মাদক কারবারি রয়েছে। অভিযানে তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহভাজন ২৭ জনকে ক্যাম্পের আশপাশের বিভিন্ন সড়ক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বি বলেন, বিশেষ অভিযানের আগেই সকাল ৭টার দিকে পোশাক পরা পুলিশের এক দল সদস্য এসে এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। তাঁরা বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কানে কানে কথা বলে চলে যান। এরপর সকাল ১০টার দিকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এ সময় কয়েক শ অস্ত্রধারী পুলিশ এলাকা ঘিরে নিয়ে অভিযান শুরু করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের অভিযান চলে। তখন যেসব সাধারণ মানুষ ছিল তারা বিপাকে পড়ে। তল্লাশি চালোনো হয় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। তবে রহমত ক্যাম্প, কলসেল ক্যাম্প, আবেদা ভবন, এমসিসি ক্যাম্প, ফুটবল গ্রাম, মিল্লাত ক্যাম্পে পুলিশের টিম তেমন অভিযানই চালায়নি। অথচ এসব ক্যাম্পের ভেতরেই মাদক কারবার চলে।

বিশেষ করে মিল্লাত ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করেন মো. মোস্তাক। প্রায় ৫০ জন সহযোগী রয়েছে তাঁর। মোস্তাককে এলাকার লোকজন মাদক ‘ডন’ হিসেবে মনে করে। পুলিশের তালিকায়ও তিনি এক নম্বরে আছেন। এ ছাড়া আরো যেসব মাদক কারবারি রয়েছে তারাও রাত-বিরাত এ এলাকায় অবস্থান করে। অথচ থানার পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হয়। পুলিশ একটু তৎপর হলেই এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজের (বাংলাদেশ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ এসে এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে। তারা যাদের মাদক কারবারি মনে করেছে তাদের ধরেছে। তবে এলাকার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক মাদক কারবারি পুলিশের অভিযানের আগেই পালিয়েছে। তাদের ধরতে না পারলে এলাকায় মাদক কারবার বন্ধ হবে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, অভিযান চালানোয় তারা খুশি হয়েছে, তবে প্রকৃত মাদক কারবারি ধরা না পড়ায় তারা অভিযানের সুফল কতটুকু পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
র্যা বের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫ : অন্যদিকে গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর এলাকায় পৃথক অভিযান চালায় র্যা ব-২। এ অভিযানে ৯৩টি ইয়াবা, কিছু গাঁজাসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/06/03/643532