৩ জুন ২০১৮, রবিবার, ৯:১০

দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক পাচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা

৭ জুনের পর অর্থ ছাড়

চলতি মাসেই মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে চরম মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বাজেটে রাখা ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাত থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে এই জন্য ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেয়া হবে। এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করা এবং এই অর্থ মূলধন বাদে অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা চলবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, গত মার্চ মাসে আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকাজে ব্যস্ত থাকার কারণে এই অর্থ দেয়া সম্ভব হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাব দেয়া হবে। এরপরই ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা বাবদ অর্থ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ মাসের মধ্যে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাংককে কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে তা নিরূপণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ছয়টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হয়। তাতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের অধীনে ‘ব্যাংক মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরে যেন ছয়টি ব্যাংকে অর্থ প্রদান করা হয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চাহিদাপত্রে চলতি বছর সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের জন্যও ৪০০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের জন্য ৩০০ কোটি টাকা এবং বেসিকের জন্যও ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য চাওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, ৬৩৭ কোটি টাকা এবং ১৬১ কোটি টাকা। একই সময়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক বেসিককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংক। তাকে দেয়া হয়েছে তিন হাজার তিন কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
এর আগে এ বছরের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিই ‘হল মার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিও ‘অ্যাননটেক্স’ নামের একটি অখ্যাত গ্রুপকে নিয়মনীতি না মেনে পাঁচ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

দুর্নীতির কারণে আলোচিত ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজন এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এখাতে চেয়েছে যথাক্রমে সাত হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা এবং ৮০০ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/322381