এক দিকে তীব্র যানজট; অন্য দিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা। এই ছিল গতকাল আরামবাগ এলাকার দৃশ্য
১ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৫

সকালের বৃষ্টিতে সারা দিন দুর্ভোগ

জলাবদ্ধতা ও যানজটে গতকাল চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন রাজধানীবাসী। সকালে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বেশির ভাগ সড়ক পানিতে ডুবে যায়। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথায় কোমর সমান পানি জমে যায়। এতে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতার সাথে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট গর্তের ঝামেলায় সারা দিনই রাজধানীজুড়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়।
গতকাল সকালে রাজধানীতে মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এখানে। কয়েকদিনের তীব্র গরমের পর এই বৃষ্টিপাতে জনজীবনে স্বস্তি নেমে এলেও বেশির ভাগ সড়কেই পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় নগরবাসীকে। এ পরিস্থিতি যান চলাচল ও ঈদ কেনাকেটায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সকালে অফিসগামীরাও বিপাকে পড়েন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির নানা চিত্র। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলার কারণে মিরপুরবাসীকে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ছয় মাস ধরে। সব সময় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল মিরপুর-১০ থেকে কাজীপাড়া সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। রাস্তা সরু হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন তীব্র যানজটের শিকার হয়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায়। এ ছাড়া গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে যাত্রীরা আহত হন। কাজীপাড়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এক ব্যক্তিকে নৌকা নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা যায়। ৫০ টাকার বিনিময়ে তিনি যাত্রী পারাপার করছিলেন। বাধ্য হয়েই অনেকে নৌকায় চড়ে পথ পাড়ি দেন। এ ছাড়া রিকশা-ভ্যান চালকেরাও জলাবদ্ধতার সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে নেন।
ওই এলাকায় বসবাসকারী আরমান আলী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই কাজীপাড়া তলিয়ে যায়। দীর্ঘ দিন থেকেই এ অবস্থা। এখন আবার মেট্রোরেলের কাজের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষের কষ্টের সীমা নেই।

শুধু এ এলাকায় নয়, মিরপুর-১, ২ ও অন্যান্য সড়ক, কালশী, মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, আজিমপুর, উত্তরার আশকোনার বিভিন্ন সড়ক, মালিবাগ, রামপুরা, মগবাজার, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, মানিক মিয়া এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় অলিগলি পানিতে ডুবে যেতে দেখা যায়।
মতিঝিল, কমলাপুর, আরামবাগ, শাজাহানপুর এলাকায় চার-পাঁচ মাস ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। জাতীয় প্রেস কাবের সামনের সড়ক, পল্টনসহ আশপাশের অন্যান্য সড়কও খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক খুঁড়ে রেখেছে সিটি করপোরেশন। বাসাবোর বিভিন্ন সড়ক ছয় মাস ধরে খুঁড়ে রাখায় সড়ক সরু হয়ে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
গুলিস্তানে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বেশ কয়েকবার অত্যাধুনিক সাকার মেশিন দিয়ে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারের চেষ্টা করলেও গুলিস্তান থেকে বঙ্গভবনমুখী সড়কের দুই লেনেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকালের বৃষ্টির পানি রাত পর্যন্ত জমে থাকতে দেখা যায় সেখানে।

জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল প্রতিটি সড়কেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব, সাতরাস্তা থেকে মহাখালি-বনানী, মালিবাগ থেকে নতুনবাজার, মতিঝিল থেকে আরামবাগ-ফকিরাপুল-বিজয়নগর-কাকরাইল সড়ক, পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা, জাতীয় প্রেস কাবের সামনের সড়ক, খিলগাঁও ফাইওভার থেকে রাজারবাগ সড়কসহ সব সড়কেই যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

বৃষ্টির কারণে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর গেটের একটু সামনে থেকে নিউমার্কেট এক নম্বর গেটের একটু আগ পর্যন্ত রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। এ রাস্তা দিয়ে পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, নবাবগঞ্জ ও হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর, বিভিন্ন মার্কেটের কর্মচারীসহ নি¤œআয়ের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। প্রধানত তারা হেঁটে কর্মস্থলে যান। কিন্তু গতকাল সকালের বৃষ্টির কারণে তারা মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের অনেকেই জামা-কাপড় ভিজিয়েই নিউমার্কেট পার হন। তবে এ পথে বেশির ভাগ মানুষ সকালে জনপ্রতি ১০ টাকা ও ১১টার পর থেকে ৫ টাকায় পানি পার হন। ওই সড়কে হৃদয় নামে ১০/১১ বছরের এক শিশু ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘পানি পার, মাত্র পাঁচ টাকা, এুনি ছাইড়া দিমু’ বলে লোকজনকে ডাকাডাকি করছিল। সাত-আট বছর বয়সী তার ছোট বোন আরিফা শুকনা কাপড় দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ভ্যানের পাটাতন পরিষ্কার করছিল। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের দু’জন ছাত্রী সাহস করে রাস্তার ডিভাইডার ধরে হেঁটে নীলতে মোড়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে হৃদয়ের ভ্যানগাড়িতে উঠে বলছিলেন, হায়রে কপাল, সকালের বৃষ্টির পানি দুপুরেও নামছে না। বেলা ১১টায় নিউমার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারগুলো পানি কেটে সামনে এগোচ্ছে। এর ফলে ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। আজিম নামের এক সিএনজিচালক জানান, পানি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। সড়কে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে ডিএসসিসির কর্মচারীদের পানি নামানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়। খুদে ভ্যানচালক আরিফ জানায়, ভ্যানটি তার ভাত বিক্রেতা মামার। এ ভ্যান দিয়ে তার মামা ভাত টানে। ওরা দুই ভাই-বোন মামার কাছে আবদার করে ভ্যানটি নিয়ে এসেছে। বেশ ভালোই রোজগার হচ্ছে বলেও জানায় আরিফ। নিউমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী জানান, একটু বেশি বৃষ্টি হলে তাদের ব্যবসায় লাটে ওঠে। এই ঈদের বাজারেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো কিছুই বিক্রি করতে পারেননি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/321702