১ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪০

বাজার সয়লাব ভারতীয় আমে

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান: বাংলাদেশের বাজারে নেই দেশী আম। দেশী আম বাজারে আসার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সে মেয়াদ আরও একদফা বাড়ানো হয়েছে। এতে রমযান মাসে দেশী আম খাওয়ার তেমন একটা সুযোগ থাকলো না দেশবাসীর। অথচ ভারতের কাঁচা থেকে পাকা সব আম রয়েছে দেশের বাজারে। ভারতের কাঁচা আমও কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বলা চলে ভারতীয় আমে বাজার সয়লাব। অথচ দেশী আমের ওপর খড়গ নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা এলাকা থেকে রাজধানীতে আম আনলে তা ভ্রাম্যমান আদালতের নজরে পড়ে। ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগে নষ্ট করা হয় হাজার হাজার মণ আম। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন, আমে যে ফরমালিন দেয়া হয় তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছেন, দেশে ফরমালিন আমদানির সুযোগ নেই। তাহলে কীভাবে ফরমালিন ব্যবহার হচ্ছে। আবার আমে যদি ফরমালিন ক্ষতিকর না হয় তাহলে কেন হাজার হাজার মণ আম ধ্বংস করা হলো। এ সব প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বাংলাদেশের আমের বাজার ভারতীয়দের হাতে তুলে দিতে কৌশলে আমের মৌসুম পিছিয়ে ও অভিযান চালিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে দেশী আমের বাজার। একইসাথে বাংলাদেশের আমের বাজার ভারতের হাতে চলে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা ভারতের আম আসার সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীতে ফরমালিন মিশিয়ে আম পাকিয়ে বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীদের আড়ত থেকে মে মাস জুড়ে কয়েক হাজার মণ আম ধ্বংস করে ভ্রাম্যমান আদালত। বিক্রির অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীকে কারদ- দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় রাজধানীর বেশ কয়েকজন আম ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, রমযান উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আমের চাহিদা থাকায় আমরা দেশের কয়েকটা জেলা শহর থেকে আম কিনে ঢাকায় নিয়ে আসি। সবেমাত্র বিক্রি শুরু হয়েছে এমতাবস্থায় ভ্রাম্যমান আদালত কোনো বাচবিচার ছাড়াই সব আম বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে করে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠে গেছে। পুঁজি হারিয়ে এখন আমাদের পথে বসার অবস্থা। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে আমরা আম বিক্রি করতে পারবো না। অথচ ভারতের আম দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। তাদের বেলায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নিষেধাজ্ঞা শুধু আমাদের ওপর। তারা বলেন, আম যদি বিক্রি করা না যায় তাহলে দেশে অন্য কোনো দেশের আমও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। দেশের মানুষের যে আমের চাহিদা থাকে তা যদি বিদেশের আমে পূরণ হয়ে যায় তাহলে তারা দেশের আম খাবে কেন। সরকারের উচিত যারা বিদেশী আম আনতে সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তারা বলেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশী আমের বাজার ধ্বংস করতে চায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কৌশলে আমের মৌসুম পিছিয়ে ও অভিযান চালিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে দেশী আমের বাজার। কৌশলে বাংলাদেশের আমের বাজার ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে একটি কুচক্রি মহল।

জানা যায়, রাজশাহীতে ২০ মে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ মে’র পর গোপালভোগ জাতের আম বাজারজাত করা যাবে বলে সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু মে মাস শেষ হতে চললেও বাজারে দেখা মিলছে না দেশীয় সুস্বাদু আমের। রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে আম উঠলেও সেগুলোর অধিকাংশই গুটি (আঁটি) জাতের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারেও একই অবস্থা বলে জানা গেছে। বিগত বছরগুলোতে এমনটা দেখা যায়নি। যে কারণে স্থানীয় ভোক্তারা অনেকেই বিস্মিত। নির্ধারিত সময়ের পরও কেন সুস্বাদু জাতের আম মিলছে না তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (পূর্বনাম আঞ্চলিক আম গবেষণা কেন্দ্র) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের মুকুল এসেছে প্রত্যাশিত সময়ের প্রায় একসপ্তাহ পরে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে আম সংগ্রহ করা যায়নি। ঠা-া আবহাওয়ার কারণে আম পাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। রাজশাহী ফল গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিনও দেরিতে আম পাকার ব্যাপারে একই রকম ব্যাখ্যা দেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে এ বছর ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন। সূত্রমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জেই এবার আমের আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। এছাড়া রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার, নওগাঁয় প্রায় ১৩ হাজার ও নাটোরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে যথাক্রমে ২ লাখ ১৮ হাজার মে.টন, ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪২ মে. টন ও ৫৬ হাজার ২১ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে যেসব সুস্বাদু আমের আবাদ হয় তার মধ্যে গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, আ¤্রপালি, ফজলি ও আশ্বিনা জাত প্রধান। এ অঞ্চলে মোট আমের আবাদের আনুমানিক ৩ শতাংশ গোপালভোগ, ২০ শতাংশ ক্ষিরসা, ১৫ শতাংশ আম্রপালি, ১৫ শতাংশ ফজলি, ২৮ শতাংশ আশ্বিনা ও ১০ শতাংশ গুটি (আঁটি ও অন্যান্য) জাতের আমের আবাদ হয়।

উল্লেখ্য, গত ৯ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে জানানো হয়, গাছে পাকলেই গুটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। তবে ২০ মের আগে গাছ থেকে পাড়া যাবে না গোপালভোগ জাতের আম। হিমসাগর, খিরসাপাত ও লক্ষণভোগ পাড়া যাবে না ১ জুনের আগে। আর ল্যাংড়া পাড়া যাবে জুনের ৬ তারিখ থেকে। আম্রপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে পাড়া যাবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মে থেকে আগাম জাতের গোপালভোগ ও গুটি জাতের আম, ২০ মে খিরসাপাত/হিমসাগর এবং ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও বোম্বাই আম বাজাবজাতকরণ করা যাবে।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে জ্যৈষ্ঠ মাসকেই সাধারণত মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু চৈত্রের শুরু থেকে বাংলাদেশের বাজার দখলে নেয় ভারতীয় আম। আমদানিকৃত ভারতীয় আম পথে-ঘাটে মিলছে। তবে স্বাদ দেশি আমের ধারে কাছেও নেই। বাজারে মিলছে ভারতীয় জাতের সুন্দরী, লালমনি, গোলাপফ্রেশ, পিএম নামের আম। এসব আম দেখতে সুন্দর দেখালেও স্বাদের দিক থেকে দেশী আমের ধারে-কাছেও নেই। ভারতীয় এসব আম ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা জানান, চৈত্রের আগ থেকেই ভারতীয় আম আমদানি করা হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ কাঁচা এ আম বাংলাদেশে আনা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনির বিভিন্ন আড়ত থেকে দেশের সব জায়গায় এ আম যায়। কাঁথা দিয়ে ঢেকে কাঁচা আম জাগ দিয়ে পাকানো হয়। এদিকে বেশ ক’জন ক্রেতার সাথে কথা হয় ভারতীয় আমের প্রসঙ্গ নিয়ে। তারা জানান, বর্তমানে বাজারে আমদানিকৃত ভারতের যেসব আম বাজারে মিলছে তা দেখতে যতোটাই দৃষ্টিনন্দন হোক না কেনো, স্বাদ কিন্তু দেশী আমের মতো নয়। বাজারে থাকা এসব আম শখের বশে বা অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্যই মূলত লোকজন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের আমের স্বাদ তো আর ভারতের আমে পাওয়া যাবে না।
এদিকে রাজধানীতে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে অপরিপক্ব আম পাকিয়ে বিক্রির অভিযোগে গত ১৮ মে মিরপুর-১ নম্বর মাজার রোড এলাকার ফলের আড়তে অভিযান চালিয়ে ১১০০ মণ আম বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যা বের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেছিলেন এ বছর বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় মিরপুরে অভিযান চালানো হয়। সেখানে থাকা আমের আড়তের আম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওই আমে ইথোফেন হরমোন স্প্রে করা হয়েছে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো হয়েছে। বেশি মুনাফার আশায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এসব আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান তিনি। অভিযানে ছয়জন আম ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। র্যািব ছাড়াও অভিযানে অংশ নেয় বিএসটিআই এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
পবিত্র রমযান শুরুর একদিন আগে বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ীতে ফলের আড়তে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার মণ আম ধ্বংস করা হয়। ফরমালিন মেশানো এমন আম বিক্রির দায়ে আশা বাণিজ্যালয়ের লুৎফুর রহমান ও জাকির হোসেনকে এক বছর করে, মোস্তফা এন্টারপ্রাইজের মো. মোস্তফা ও সাতক্ষীরা বাণিজ্যালয়ের মো. ইয়াসিনকে ছয় মাস করে এবং অন্যান্যদের ১৫ দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত কারাদ- দেয়া হয়।

এর আগে ১৫ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফরমালিন মিশিয়ে আম পাকিয়ে বিক্রির দায়ে ফলের আড়ত থেকে ৪০০ মণ আম জব্দ করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যািবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি জানান, অপরিপক্ব আম বিক্রির অভিযোগে আট ব্যক্তিকে দুই থেকে তিন মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে। র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তায় ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বিএসটিআই।
বাংলাদেশে খাদ্যে ফরমালিন নিয়ে সম্প্রতি সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, ফলমূল সবজি টাটকা রাখতে ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ে জনমনে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে শাক-সবজিতে বা ফলে ফরমালিনের ব্যবহার হয় না। বলা হয় ফরমালিন শুধুমাত্র প্রাণীজ প্রোটিনের ওপর কার্যকরী, সুতরাং ফলমূল-সবজি টাটকা রাখতে এই রাসায়নিক আদৌ কার্যকরী নয়। সাম্প্রতিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, খাদ্যে ফরমালিন প্রয়োগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মনজুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ফরমালিন নিয়ে জনমনে নানা অস্পষ্টতা এবং বিভ্রান্তির কারণে খাদ্য নিয়ে বহু মানুষের মধ্যে অনর্থক ভীতি তৈরি হয়েছে সেটা ভাঙ্গা প্রায়োজন। মানুষজন হরহামেশা বলেন, ফরমালিনের ভয়ে ফলমূল খাওয়া তারা ছেড়ে দিয়েছেন, এ ধরণের খাদ্য-ভীতি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে ফলমূলে যে অতি-আবশ্যিক পুষ্টিগুণ রয়েছে তা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি মনে করেন, দেশের খাদ্য সম্পর্কে মানুষের আস্থা পোড় খাচ্ছে। এতে খাদ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণœ হচ্ছে, পর্যটনের জন্যও খাদ্যের এই ইমেজ খারাপ।
২০১৩ সালে খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। একই সাথে খাদ্য সংরক্ষণে যে কোনো অনুনোমোদিত রাসায়নিক প্রয়োগের অপরাধে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান তৈরি হয়। পরে ২০১৫ সালে সরকার ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরি করে এবং খাদ্যে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এখন ফল, শাক-সবজি কিংবা মাছ সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় তিনি এই দাবি করেন। বাংলাদেশে পচনশীল খাদ্যপণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ফরমালিন ব্যবহার গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন করার পর বাণিজ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য আসে। মন্ত্রী বলেন, ফরমালিন এখন আর ব্যবহার হয় না। এ কথা আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি বাংলাদেশ এখন ফরমালিনমুক্ত।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজল হক সম্প্রতি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ফরমালিন বিরোধী অভিযানে ফলমূল, শাকসবজিতে ফরমালিন শনাক্তের পদ্ধতি সঠিক নয়। এই ভুল পরীক্ষা পদ্ধতি ও ভুল রিপোর্টে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ফলমূল ও শাকসবজি ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগ এনে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে, ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন আছে বলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। ফলমূল ও শাকসবজিতে কোনো ফরমালিন নেই। শুধু শুধু প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ফল ও শাকসবজি তারা অযথা নষ্ট করে। ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তিনি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে মেশিন দিয়ে ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন পরীক্ষা করে তা পরীক্ষার জন্য সঠিক মেশিন কিনা তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, তারা পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতিও জানে না। খোলা আকাশের নিচে ফরমালিন পরীক্ষা করে। তিনি বলেন, আমাদের ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, ব্যবসায়ীরা না বুঝে ফরমালিন ব্যবহার করে কি-না? কিন্তু আমরা কোথাও ফরমালিনের অস্তিত্ব পাইনি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বলেছে ফরমালিন ব্যবহার করে না।

মাহফুজুল হক বলেন, নিরাপদ খাদ্য অনেক ব্যাপক বিষয়। সরকার একা দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমকে নিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে ২৫ লাখ খাদ্য ব্যবসায়ী আছেন। খাদ্যের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এ ব্যাপারে ১২০টি আইন ও বিধিবিধান রয়েছে। ৬৪টি জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ৭৪টি আদালত নিরাপদ খাদ্যের জন্য কাজ করছে।

http://www.dailysangram.com/post/332626