৩১ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৯

বাড়ছে বাজেটের আকার কমছে বাস্তবায়নের হার

বাজেট ঘোষণায় প্রত্যেক বছর রেকর্ড ভাঙছে। চাপ বাড়াচ্ছে ঘাটতি বাজেট। কোনো বছরই বাজেট বাস্তবায়নে সফলতা আসছে না। তারপরও থেমে নেই উচ্চভিলাসী বাজেট পেশের। বাস্তবায়ন যাই হোক বিশাল বাজেট দিতে হবে এমনটাই যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা প্রত্যেক বছর বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেয়ার দাবি করে আসলেও কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে সরকার একের পর এক বাজেটের আকার বাড়িয়ে চলেছে। ফলে সরকারের বাস্তবায়নহীন এ বাজেটকে অর্থহীন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজেটকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না করাতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে বাজেটের শৃঙ্খলাও নষ্ট হবে।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন না হওয়া সরকারের জন্য ব্যর্থতা। বাজেট বাস্তবায়নের হার অনবরত কমছে। এক সময় ৯৩ থেকে ৯৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হত। এখন সেটা ৮০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা বর্তমান সরকারের জন্য খুব খারাপ সংবাদ।
বাজেটের আকার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর এটা ছিল তার আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এটি ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা নবম বাজেট। প্রতিবছর বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার কাছাকাছিও বাস্তবায়ন না হওয়া আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বড় গলদ হলেও সরকার উত্তরণের পথ বাতলাতে পারেননি। এর আগের আটটি বাজেটের মতো এবছরও অর্থমন্ত্রী বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তার দিকনির্দেশনা ছিল না বাজেটে। তিনি বাজেটকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছানোর সিঁড়ি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের বাধাগুলো অতিক্রম করার কোনো নির্দেশনা রাখেননি। এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেট ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। আশানুরূপ রাজস্ব না হওয়ায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার মূল বাজেট থেকে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এবার কাটছাঁট করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। যা বিগত চার অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি।
এর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ এসে সরকার বুঝতে পারে যে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ফলে সংশোধনের পথে হাটে সরকার। মূল বাজেট থেকে কাঁটছাট করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। একইসাথে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটও পাস করা হয়। যার আকার ছিল ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এতে করে এই অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে ৩৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ সার্বিকভাবে ২৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা হ্রাস করা হয়। এ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়। অন্যান্য খাতেও রাজস্ব প্রাপ্তি সংশোধিত করায় সংশোধিত রাজস্ব আয় ধরা হয় ২ লাখ ২৩ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বছরও বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় সরকার। বছরের শেষে এসে বাজেটে ছুরি চালানো হয়। কমিয়ে আনা হয় বাজেটের পরিমাণ। এ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কমানো হয়। ফলে সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দের পরিমান দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়। সংশোধিত বাজেটে ৩৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৪৭ হাজার ১২০ কোটি ১১ লাখ টাকা হ্রাস করা হয়েছে। এ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা রাখা হয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাস হওয়া বাজেটের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বাজেটে আয় ধরা হয় ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয় ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আয় ধরা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁটের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে প্রথম দুই লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেবার আগের অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। ওই বাজেটের মধ্যে এক লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। সে হিসাবে অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে এক লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকার বাজেট বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ব্যয় হয় এক লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থবছরে মূল বাজেটের ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়।
২০১১-১২ অর্থবছরে আরও ৩১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়, যার মধ্যে ব্যয় হয় এক লাখ ৫২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়।
২০১০-১১ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ৯৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। ওই অর্থবছরের বাজেটে প্রকৃত ব্যয় হয় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় পর অর্থমন্ত্রী হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তাঁর ঘোষিত বাজেট ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
অর্থনীতি এখন মূলত ৬ শতাংশের ফাঁদে আটকে গেছে। আরও খারাপ দিক হচ্ছে, গত কয়েক অর্থবছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগতভাবে কমছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় বাজেটের আয়তন যতই বাড়াচ্ছেন প্রবৃদ্ধি ততই কমছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে এম এ মুহিতের প্রথম বাজেটটি ছিল ২০০৯-১০ অর্থবছরের। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এরপরের দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। এরপর থেকেই মূলত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে কমে হয় ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার বলেছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর প্রাক্কলন ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবারই অর্থমন্ত্রী বিশাল প্রাক্কলন করেন কিন্তু অর্জন করতে পারেন না একবারও। তবে সরকারের প্রাক্কলনের সাথে বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলনের হিসাব বরাবরই ফারাক থাকছে। সরকার যা দাবি করছে বিশ্বব্যাংক তা মানতে নারাজ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ৬ শতাংশের নিচেই রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের চ্যালেঞ্জ হলো সম্পদ আহরণ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দুই ক্ষেত্রেই তাল মেলাতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী।
বাড়তি টাকা খরচের লক্ষ্যে প্রতি বছরই বাড়ছে দেশে বাজেটের আকার। যদিও পিছিয়ে পড়ছে বাস্তবায়ন হার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১০-১১ থেকে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমে ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর মূল কারণ হলো লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ না হওয়া, বিদেশী সাহায্য না পাওয়া এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ঘাটতি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছর বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় মূল বাজেটের ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাস্তবায়ন হয়েছে মূল বাজেটের ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জানায়, বিগত পাঁচ বছরে সংশোধিত বাজেটের তুলনায় মোট বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪.৫ হতে ৯২.৮ শতাংশের মধ্যে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যয় ৮৯.৯ শতাংশ হতে ৯৩.০ শতাংশের মধ্যে।
বাজেট যত বাড়ছে বাস্তবায়নের হার ততো কমছে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সরকারের উচিত উচ্চভিলাসী বাজে না দিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেয়া।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতির সক্ষমতার তুলনায় বাজেট অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাসী হওয়ায় বাস্তবায়নের হার কমছে। প্রশাসনের দক্ষতা ও সচেতনতার অভাব বাজেট বাস্তবায়নের হার পিছিয়ে দিয়েছে। বরাদ্দ তো সব বছরই অতিমাত্রায় বড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো বাস্তবায়ন। যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকছে তার বাস্তবায়ন আনুপাতিক হারে কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু বরাদ্দ রাখলে হবে না। বরাদ্দ দিয়ে মানুষকে তুষ্ট রাখা যেতে পারে যে আমরা এ কাজের জন্য এত টাকা বরাদ্দ দিয়েছি, ওই কাজের জন্য এত বরাদ্দ দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবায়ন কতটা হলো সেটার তো কেউ খোঁজ রাখে না। কাজেই বাস্তবায়নহীন বরাদ্দ বাড়ানো অর্থহীন। বাস্তবায়নের সক্ষমতার বাইরে গিয়ে বড় ধরনের বাজেট দিলে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। এজন্য উচ্চাভিলাসী বাজেট না দেওয়াই ভালো।
এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবছরই দেশের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এর আকার। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি তিনটি বাজেট পেশ করেন। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৯৯৫ কোটি টাকা। এবং ১৯৭৪-১৯৭৫ অর্থবছরের বাজেট ছিল এক হাজার ৮৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা।
৭৫-এর পর খন্দকার মোস্তাক সরকারের আমলে ১৯৭৫-১৯৭৬ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করেন তৎকালিন অর্থমন্ত্রী ড. আজিজুর রহমান। এসময়ে বাজেটের আকার ছিল এক হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ঘোষিত দুটি বাজেটের আকার ছিল ১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থবছরে এক হাজার ৯৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং ১৯৭৭-১৯৭৮ অর্থবছরে বাজেটের পরিমান ছিল দুই হাজার ১৮৪ কোটি টাকা।
এরশাদের শাসনামলে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৮২-১৯৮৩ ও ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছরে যথাক্রমে চার হাজার ৭৩৮ কোটি ও পাঁচ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। ১৯৮৪-১৯৮৫ অর্থবছর থেকে ১৯৮৭-১৯৮৮ অর্থবছর পর্যন্ত মোট চারটি বাজেট ঘোষণা করেন এম. সায়েদুজ্জামান। তার সময়ের বাজেটের আকার যথাক্রমে ছয় হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, সাত হাজার ১৩৮ কোটি টাকা, আট হাজার ৫০৪ কোটি এবং আট হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।
এরশাদ সরকার পতনের পর ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বিএনপির এম.সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে ২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা এবং ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার আগের আমলে ১৯৯৬-১৯৯৭ থেকে ২০০১-২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ছয়টি বাজেট পেশ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তার বাজেটের আকার যথাক্রমে- ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি, ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি, ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি, ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি, ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি এবং ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক আমলে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।
এদিকে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরেও বিশাল বাজেট আসছে। বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

 

http://www.dailysangram.com/post/332460-