ঈদ উপলক্ষে গাবতলী বাস কাউন্টারে অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভিড় :নয়া দিগন্ত -
৩১ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৫

নিমেষেই উধাও বাসের অগ্রিম টিকিট

সড়ক নিয়ে আতঙ্কে বাস কোম্পানিগুলো

এবারো নিমেষেই উধাও হয়ে গেল বাসের কাক্সিত অগ্রিম টিকিট। কাউন্টার খোলার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে হাওয়া হয়ে গেল ১৪ জুনের টিকিটগুলো। যার কারণে শেষ রাত থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই তাদের কাক্সিত তারিখ ও সময়ের টিকিট পাননি। বাধ্য হয়ে ১৩ ও ১৫ জুনের টিকিট কিনছেন যাত্রীরা। তবে এ ক্ষেত্রেও বরাবরের মতো অধিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় এবার বাসের কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। অন্য বছরে কাউন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এ বছর তেমনটি চোখে পড়েনি। আবার এই অনলাইনের কারণেই কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন যাত্রীরা। গতকাল ৩০ মে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথমদিন ছিল। এই দিনে দু-একটি বাস কোম্পানি ছাড়া বেশির ভাগ বাস কোম্পানি তাদের অগ্রিম টিকিট ছাড়েনি। এ দিকে বাস কোম্পানিগুলো মহাসড়কের দুরবস্থা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন, টিকিট বিক্রি শুরু করলেও মহাসড়ক নিয়ে তাদের আতঙ্ক কাটছে না। বিশেষ করে টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে যানজটের কথা মনে হলে তারা আঁতকে উঠছেন। কারণ বাস সময়মতো না ফিরলে পরবর্তী ট্রিপের যাত্রী বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সবগুলো কাউন্টারই ফাঁকা। কমফোর্ট লাইন, সেবা গ্রিন লাইনসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টারে অগ্রিম টিকিটের খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারা ১৫ রমজানের আগে অগ্রিম টিকিট ছাড়ছেন না। ঈগল পরিবহনের কাউন্টার থেকে জানানো হলে বুধবার অর্থাৎ গতকাল বিকেল থেকে তারা অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করবেন। তবে দেশে শীর্ষ বাস কোম্পানি হানিফ পরিবহন গতকাল নির্ধারিত সময়ে টিকিট বিক্রি শুরু করলেও মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে ১৪ তারিখের সব টিকিট উধাও হয়ে যায়। বরাবরের মতো এবারো গাবতলী বালুর মাঠে আলাদা করে বসানো হয়েছে হানিফের কাউন্টার। বিভিন্ন রুটের কাউন্টার ভাগ করে দেয়া হয়েছে এখানে। সকাল ৭টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও সেহরির পর থেকেই মানুষের ভিড় জমতে থাকে কাউন্টারের সামনে।
মিরপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা গোলাম হায়দার জানান, সপরিবারে গ্রামের বাড়ি রংপুরে ঈদ করতে যাবেন বলে চারটি টিকিট কিনতে কাউন্টারে আসেন তিনি। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজের পর অন্ধকার থাকতেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। এরপর হনিফ পরিবহনের বালুর মাঠের কাউন্টারে উপস্থিত হন। ওই সময় এসে তিনি ৭ নম্বর সিরিয়ালে পড়েন। তিনি ১৪ তারিখের টিকিট পেয়ে খুবই খুশি। তবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন কলাবাগানের বাসিন্দা লুবনী। তিনি ভোরে কাউন্টারে গিয়ে প্রচুর ভিড় দেখে ফিরে যান। তিন ঘণ্টা পরে ফিরে দেখেন মানুষের ভিড় তেমন নেই। সহজেই কাউন্টারে চলে যান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে কাক্সিত ১৪ তারিখের টিকিট উধাও হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আগের দিন ১৩ তারিখ রাতের টিকিট করেন তিনি। ঠাকুরগাঁওগামী জাহাঙ্গীর জানান, উত্তরা থেকে গাবতলী পৌঁছতে গিয়ে তার দেরি হয়ে গেছে। যার কারণে তিনি লাইনের প্রায় শেষের হ দিকে ছিলেন। বেলা সাড়ে ১০টায় তার সিরিয়াল এলেও তিনি ১৪ তারিখের টিকিট পাননি। বাধ্য হয়ে ১৫ তারিখ সকালের টিকিট নিয়েছেন। এদের সবাই অভিযোগ করছেন, অন্য বছরের মতো এবারো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে।
কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, এখন বেশির ভাগ বাস কোম্পানি অনলাইনে টিকিট বিক্রি করে থাকে। আবার অনেক অ্যাপসভিত্তিক কোম্পানি বিভিন্ন বাসের টিকিট ক্রয় করে অনলাইনে বিক্রি করছে। যাত্রীরাও অনলাইনে টিকিট কিনছেন। যার কারণে কাউন্টারে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তবে যাত্রীরা বলছেন, বিভিন্ন কোম্পানি কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে চড়া দামে অনলাইনে বিক্রি করছে। যার কারণে কাউন্টারে টিকিট থাকছে না। এটাও এক ধরনের কালোবাজারি।
এ দিকে ঈদে মহাসড়কে শিডিউল মেনে বাস চলাচল নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পরিবহন কোম্পানিগুলো। হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন জানান, ঈদে নির্ধারিত সময়ে যাত্রী পরিবহন নিয়ে বাস কোম্পানিগুলো শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কগুলোর অবস্থা ভালো নয়। রাস্তা ভাঙা-চোরা থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের সময় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তখন দেখা দেবে চরম বিশৃঙ্খলা। ঈদের সড়ক-মহাসড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/321520/