৩১ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৮

রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় জোসেফ মুক্ত

নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তোফায়েল আহমেদ জোসেফ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত রোববার তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কেবিন থেকে মুক্তি পান বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির নিশ্চিত করেছেন।

এ দিকে জোসেফের মুক্তির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের করা মার্সি পিটিশন অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, জেল কোডের ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী রেয়াতসহ ২০ বছর সাজা খাটা শেষ হলে বিধি অনুযায়ী তার মুক্তির প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর জোসেফের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আপিলে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ।
এর আগে এ মামলায় নি¤œ আদালতে ও হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল জোসেফকে। মামলার আরেক আসামি কাবিল সরকারকে খালাস দেন সর্বোচ্চ আদালত।
১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান পিস্তলের গুলিতে নিহত হন। পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী রাশিদা পারভীন। এজাহারে তিনি লিখেন, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ ও তার কয়েকজন সঙ্গী চাঁদা না পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের লাইসেন্স করা পিস্তল কেড়ে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করেন।
১৯৯৬ সালের ৮ অক্টোবর এ মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এর রায় হয়। রায়ে তোফায়েল আহমেদ জোসেফ ও মাসুদ জামাদারকে মৃত্যুদণ্ড এবং কাবিল সরকার, আনিস আহমেদ ও হারিস আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন জোসেফ, মাসুদ ও কাবিল। বাকি দু’জন পলাতক থাকায় তারা কোনো আপিল করেননি।
২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়। এতে মাসুদ জামাদারকে খালাস দেন হাইকোর্ট। তবে জোসেফ ও কাবিলের দণ্ড বহাল রাখা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দণ্ড বহাল থাকা দু’জন। তাতে সর্বোচ্চ আদালত জোসেফের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন ও কাবিলকে বেকসুর খালাস দেন।
এ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের করা মার্সি পিটিশন অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। তিনি অসুস্থ ছিলেন, তার চিকিৎসার জন্য সাজা মওকুফ করা হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ দেশছাড়া হয়েছেন এ বিষয়ে আপনি জানেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন, জোসেফের যে প্রসঙ্গটা, তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল, তিনি অলরেডি ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। তিনি ২০ বছর কারাভোগের পর ডিউ প্রোসেসে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনটি মহামান্য রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত যায়।
জোসেফ ইন্ডিয়া চলে গেছেন কি না সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তিনি ভয়ানক অসুস্থ, বাকি এক বছর তিন মাস সাজা মাফের জন্য মার্সি পিটিশন করেছিলেন। সেই মার্সি পিটিশন খুব সম্ভব মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন।
তিনি বলেন, জোসেফের কিছু অর্থদণ্ড ছিল সেগুলো আদায় সাপেক্ষে তাকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার পারমিশন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/321501/