৩০ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:০৪

মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকা দুর্ভোগের অন্ত নেই

নেসার উদ্দিন। মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার বাসিন্দা। চাকরি করেন মতিঝিলে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিন সকালে তিনি এক যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে বের হন। রাস্তার বেহাল দশায় রিকশার ঝাঁকুনি তাকে কাহিল করে ফেলে।

আবার অফিস থেকে বাসায় ফিরতেও একই যন্ত্রণা। পঞ্চাশোর্ধ্ব নেসার উদ্দিন যে গলিতে বাস করেন সেখানে নাগরিক সুবিধা নামে থাকলেও কাজে নেই।
যে রাস্তাটি দিয়ে মূল সড়কে যান সেটির অবস্থাও এবড়ো থেবড়ো। খানাখন্দে ভরা, ড্রেনের ময়লা কখনো রাস্তায় চলে আসে। আবার পাঁচ-দশ মিনিট বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি তলিয়ে যায় পানির নিচে। শুধু তার পাড়ার এ সড়ক থেকে বের হয়ে মূল সড়কে আসতে পারলেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলে এমনটা নয়। মূল সড়ক বেগম রোকেয়া সরণির অবস্থাও ভয়ানক। মেট্রোরেলের কাজের জন্য এমনিতেই সড়কের মাঝ থেকে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরু হয়ে গেছে রাস্তার পরিধি। আর বৃষ্টি হলে তো রোকেয়া সরণির এ অংশে পানি জমে গাড়ি চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। শুধু নেসার উদ্দিন নয়। মিরপুরের ঐ এলাকার অধিকাংশ মানুষের দুর্ভোগের চিত্র একই রকম। প্রত্যেকেই রয়েছেন কষ্টে, দুঃখে। অনেকটা নীরবে তারা এসব সহ্য করে যাচ্ছেন। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে বাড়িওয়ালারা ইদানীং ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের দক্ষিণ পাশের এলাকা সেনপাড়া পর্বতা, পূর্ব কাজীপাড়া। এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ব্যাংক এবং সরকারি অফিস। কিন্তু এ এলাকায় নাগরিক সুবিধা শুধু নামেই আছে। তবে এই এলাকার কয়েকটি গলির রাস্তা সংস্কার হয়েছে কিছুদিন পূর্বে। তবে রোকেয়া সরণির সেনপাড়া পর্বতা এলাকার পশ্চিম পার্শ্ব ধরে ভেতরে প্রবেশের রাস্তায় কোনো ধরনের সংস্কার হয়নি।

সরজমিন দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে সেনপাড়া পর্বতার দিকে যেতে প্রথম যে প্রবেশ সড়কটি তা প্রায় বন্ধ। রাস্তার মাঝখানে রিকশাসহ বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং করা। উন্মুক্ত ময়লার ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তার ড্রেনের সংস্কার কাজ চলছে। ফুটপাথও রয়েছে হকারদের দখলে। মিরপুর-১০ এর ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে মিরপুর দুই ও এক নম্বরের বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু এখন এ সড়কটি পার্কিংয়ের কারণে বাস ঢুকতেই পারে না। একই অবস্থা পূর্ব মণিপুরের প্রবেশের সড়কটির। গত দুই-তিনদিন আগের বৃষ্টির পানি এখনো রাস্তায় জমে আছে। এর ঠিক উল্টো পাশে আর হেলাল হাসপাতালের গলির সড়কে দেখা যায় ড্রেনের পানি আটকে রাস্তায় গড়াতে। এসব ড্রেনের সুয়ারেজ জ্যাম সরাতে দেখা যায় দু’জন শ্রমিককে। সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় কয়েকটি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চললেও এখন মশার প্রকোপটা কম বলে জানান এলাকাবাসী। তারা জানান, এখন এ এলাকায় মশা রয়েছে তবে তা কিছুটা কম। গত এক দেড় মাস আগে মশার কামড়ে অনেকের ডেঙ্গুসহ নানা রোগ হয়েছে। এ এলাকার ফুটপাথ বলতে বেগম রোকেয়া সরণির দু’পাশ ধরে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সেনপাড়া পর্বতা, পূর্ব কাজীপাড়া পর্যন্ত তা হকারদের দখলে। মাঝেমধ্যে কিছু জায়গা অবশিষ্ট থাকলেও তা ভাঙাচোরা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রভাবশালী মহল ও পুলিশকে টাকা দিয়ে হকাররা ফুটপাথ দখল করে বিভিন্ন দোকান বসিয়েছে। সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত উচ্ছেদ অভিযানে এটা বছরে দুই একবার উঠিয়ে দেয়া হয়। তখন কয়েকদিনের জন্য ফুটপাথ দখলমুক্ত থাকে। সেনপাড়া পর্বতা এলাকার বেলতলা, আনন্দবাজার ও পূর্ব কাজীপাড়ায় বসবাসকারীদের একই অবস্থা। পূর্ব মণিপুরের নাসরিন বেগম বলেন, আমরা এ এলাকায় ভাড়া থাকি। ছেলেমেয়েরা স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ে। এখানের মূল রাস্তার যে দশা ভেতরের রাস্তার অবস্থাও একই। একটু বৃষ্টি হলে আমাদের পাড়ার রাস্তাটিতে পানি জমে যায়। হেঁটে চলার কোনো অবস্থা থাকে না। রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্তও রয়েছে। রোকেয়া সরণিতে বের হতে হলে জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। তাই স্থানীয় ছোটবাজার থেকেই সব কেনাকাটা করি। পারতপক্ষে বের হই না।

সত্তরোর্ধ্ব আমিরুন্নেসা বলছিলেন তার এলাকায় শুধু রাস্তার বেহাল দশাই নয়, রয়েছে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটও। প্রায়ই গ্যাস থাকে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় চলে যায় বিদ্যুৎ। বলেন, তিনি যেখানে থাকেন সেখান থেকে মূল সড়কে বের হতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়। রিকশার ঝাঁকি এখন বুড়ো শরীরে নিতে পারেন না। এরপরও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করায় রিকশাও যেতে চায় না। আর গেলেও ভাড়া গুনতে হয় দুই তিনগুণ বেশি।

এলাকার মুদি দোকানদার শাহআলম বলেন, আমাদের পাড়ায় একটা না একটা সমস্যা লেগেই থাকে। কখনো রাস্তা মেরামতের নামে খোঁড়াখুঁড়ি, গ্যাসের লাইন মেরামত কিংবা ওয়াসার পানির লাইনের মেরামত। এলাকার মানুষ কোনোভাবে শান্তিতে নেই। এত উন্নয়নের পরও সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। মশার উৎপাত থেকে বর্তমানে এলাকার মানুষজন কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=119408