২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ৯:২১

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা : যাত্রীরা ঝুঁকছেন ট্রেনের দিকে

ঈদযাত্রায় নিয়ে আতঙ্কিত রাজধানীবাসী। যারা প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতে চান তাদের মনে নানা শঙ্কা। বাসে নাকি ট্রেনে যাবেন-তা নিয়েও আছে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব। দেশের প্রধান চারটি মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। রমজানের আগে থেকেই যানজট লেগেই আছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। গত বছরের তুলনায় দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোর ভগ্নদশা প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। প্রতিবেদন বলছে সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রংপুর জোন। অথচ রংপুরের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বাস্তবে মোটেও ভাল নেই। ঢাকা থেকে রংপুর যেতে এখন ১২/১৩ ঘণ্টা লাগে। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদ যাত্রায় গাড়ির ভিড়ে এর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগতে পারে। সড়কপথে যানজট ভোগান্তির কারনে এবারের ঈদ যাত্রায় ট্রেনের টিকিট পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব হবে বলে অনেকেরই ধারনা। আগামী ১ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। তার আগেই শুরু হয়েছে টিকিটের জন্য তদ্বির। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার টিকিটের কি দশা হবে তা বলাই মুশকিল। কোটা পদ্ধতির বাইরেও টিকিটের জন্য ভীষন চাপ আছে। সে হিসাবে এবার সাধারণ যাত্রীদের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

গত বছর সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের একতৃতীয়াংশ বেহাল অবস্থায় ছিল। গেল বর্ষায় যে সব সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করার পর আবার বেঙে গেছে। এবার বর্ষা আগেভাগেই এসে পড়ায় সেগুলো পুরোপুরি মেরামত করার আগে আবার নতুন করে সেগুলো ভেঙে গেছে। ঈদের আগে সেগুলো মেরামত করা কোনোমতেই সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। বরং এই খারাপ অংশই ভারী বর্ষা, অত্যধিক গাড়ির চাপ কিংবা দুর্ঘটনা মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।

সওজ সূত্র জানায়, গত বছর ঈদুল ফিতরে ৩২ শতাংশ মহাসড়ক খারাপ ছিল। সে তুলনায় এবার মহাসড়কের অবস্থা ভাল বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ঈদযাত্রা শুরু হতে না হতেই মহাসড়কগুলোতে ২০/৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ঘরমুখী মানুষদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এখনও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৮/৯ ঘণ্টা লাগছে। ঈদ যাত্রায় আরও বেশি সময় লাগবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মাকি সমিতির ওই নেতা বলেন, এবার ভোগান্তির কি অবস্থা হবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। সড়কের বেহাল দশার কারনে যাত্রীরা ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে বলেও জানান তিনি। হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনগুলো দ্রæতগতিতে গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর কাছে এসে জড়ো হয়ে মেঘনা ও গোমতীর টোল প্লাজায় সারিবদ্ধ হয়। এরপর সেতুতে ওঠার সময় যানবাহনের গতি অন্তত ৮০ ভাগ কমে যায়। চার লেনের গাড়িগুলো দুই লেনের সেতুতে ধীর গতিতে চলায় যানজট দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দাউদকান্দির টোল প্লাজায় একসঙ্গে এত যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণ, টোল আদায় ও চলাচলের পাসিং দেওয়া যায় না। এ কারনে যানজট দীর্ঘায়িত হয়। ঈদে একই সমস্যায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারন করে। অপরদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের কাজ চলছে। এখনও অনেক অংশে মাত্র এক লেন দিয়ে গাড়ি পার হয়। ঈদ যাত্রায় গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। তখন কি অবস্থা হবে তা আঁচ করতে পেরে উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রীই এবার ট্রেনের আশায় আছে। জানতে চাইলে গাবতলী বাস টার্মিনালের একজন বাস মালিক বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেহাল অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। এখনও বঙ্গবন্ধু সেতুর আগে ৮/১০ কিলোমিটার যানজট লেগেই থাকে। ঈদ যাত্রায় এ যানজট বেড়ে ঘরমুখি মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, সেতুর ওপাড়ে সিরাজগঞ্জ অংশে এখনও সড়কের বেহাল অবস্থা বিদ্যমান। বাকী দিনগুলোতে সেগুলো মেরামত করাও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা গত বছরের তুলনায় আর খারাপ। চার লেনের কাজ শুরু হয় হচ্ছে করে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি সেভাবে মেরামত করা হয়নি। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ঈদ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হবে রুপগঞ্জে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দু’পাশে। এখনই সেখানে ৫/৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। ঈদ যাত্রায় এটি বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বরিশাল জোনের জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা। এ জোনের ১১৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে জরিপ চালিয়ে ২৭ কিলোমিটারের বেশি ‘খুব খারাপ’ অবস্থায় পেয়েছে এইচডিএম। ‘দুর্বল’ ও ‘খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে আরো প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক। বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের শেখ জামাল সেতু থেকে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। কোথাও কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও ইট-খোয়া সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল জোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কটির এ দশা সীমাহীন ভোগাচ্ছে স্থানীয় মানুষ ও কুয়াকাটামুখী পর্যটকদের।ঈদ যাত্রায় এ ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা ভুক্তভোগিদের। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কিছু অংশ চলাচলযোগ্য হলেও এখনও বেশিরভাগ অংশ চলাচলের অযোগ্য। অন্যদিকে, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের অবস্থাও বেহাল। এইচডিএম এর প্রতিবেদন বলছে, বরিশালের পরেওই খারাপের তালিকায় রয়েছে রাজমাহী জোনের নাম। সুতরাং ঈদ যাত্রায় রাজশাহীসহ নাটোর, পাবনা, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ উত্তরের কমপক্ষে ১৬টি জেলার যাত্রীরা এবারের ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়বে। ###

https://www.dailyinqilab.com/article/133640