২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১১:৩৬

অফিস শুরু ও শেষের সময়ে হঠাৎ সিটিং সার্ভিসে পরিণত

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের নামে ৯৬ শতাংশ বাস চলছে দরজা বন্ধ করে। আসনের অতিরিক্ত যাত্রীও তোলা হচ্ছে। অথচ, ভাড়া নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত। আর ৬২ শতাংশ যাত্রী বাস চলা অবস্থায় ওঠা-নামা করতে বাধ্য হচ্ছে।

রমজান মাসে যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে বলা হচ্ছে, মিটারের বদলে ৯৪ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে চুক্তিতে। ফলে পবিত্র রমজানও যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
আজ শনিবার জরিপটি প্রকাশ করা হয়। সমিতি বলছে, গণপরিবহনে চলছে চরম নৈরাজ্য। জরিপে অংশ নেওয়া ৯২ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, প্রতিদিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে মালিক সমিতি বা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা জরিপকালে দেখতে পায়নি যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপকমিটির পাঁচটি দল ১৯ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ৬ দিন রাজধানীর ১৩টি জায়গায় যাত্রীদের ভোগান্তি ও ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় ৩১০টি বাস এবং ২১৪টি অটোরিকশার ভাড়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ৫৫৭ জন বাসযাত্রী, ১৮৫ জন অটোরিকশা যাত্রী, ৫৬ জন ট্যাক্সি ক্যাব যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জরিপকারীরা।
জরিপের জায়গাগুলো হলো শনির আখড়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মহাখালী, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারা।
জরিপে দেখা যায়, অফিস যাওয়া এবং অফিস ছুটি শেষে ইফতারকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের ঘরমুখী যাত্রার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি অধিকাংশ লোকাল বাস রাতারাতি সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও ২৮ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ৯৮ শতাংশ বাসযাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর ৬২ শতাংশ যাত্রী চলন্ত বাসে ওঠা–নামা করতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে নগরে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলছে চালকদের আধিপত্য। জরিপে দেখা যায়, ৯৮ শতাংশ অটোরিকশাচালক মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিশ দাবি করছেন। আগে ১০ থেকে ২০ টাকা বকশিশ চাইলেও রমজানে চালকেরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বকশিশ দাবি করছেন। অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৯০ শতাংশ চালক।
জরিপকারীরা দেখতে পান, নগরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক যাত্রীছাউনি না থাকায় এবং যাত্রীছাউনিগুলো বেদখলে থাকায় বৃষ্টিতে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ছে যাত্রীরা, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা। গণপরিবহনের নৈরাজ্যের মধ্যে পাঠাও, উবারসহ অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনগুলো যাত্রীদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।

রমজানেও গণপরিবহনে এমন নৈরাজ্যে যাত্রীরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে হেনস্তার শিকার হলেও কোথায় অভিযোগ করতে হয়, সেটি জানেন না ৯৩ শতাংশ যাত্রী। আর ৮৮ শতাংশ যাত্রী মনে করেন অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেলেও তা নিরসনে মালিক সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা জরিপকারীরা দেখতে পাননি।

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1496861