২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১১:৩৪

সৃজনশীলে কমেনি মুখস্থপ্রবণতা

শিক্ষার্থীদের মুখস্থপ্রবণতা কমাতে পারেনি সৃজনশীল পদ্ধতি বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। বেড়েছে পড়ার চাপ, বইয়ের বোঝা। সৃজনশীল পদ্ধতি আত্মস্থ করতে শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হচ্ছে নোট গাইডসহ বিভিন্ন বইয়ের ওপর। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীদের সরকারনির্ধারিত পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ১০ থেকে ১২টি করে নোট গাইড বই পড়তে হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণীর জন্য আগে যেখানে নোট গাইডের কথা চিন্তাও করত না শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভবাকেরা সেখানে এখন নোট গাইড ছাড়া পড়ালেখার কথা চিন্তা করতে পারছেন না অভিভাবকেরা। স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের নোট গাইড কিনতে বলা হচ্ছে।

অভিভাবকেরা জানান, সৃজনশীলের কারণে যেমন নোট গাইড কিনতে হচ্ছে তেমনি ঘনঘন পাবলিক পরীক্ষার কারণেও পড়া ও বইয়ের বোঝা বেড়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। স্কুলগুলো আমাদের সন্তানদের নিয়ে ভালো রেজাল্টের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদেরও।
একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। তার জন্য ১২টি গাইড কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা এখন ১৮টি। এত বই দেখে আমাদেরই তো মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। স্কুল থেকে কিনতে বলেছে তাই কিনেছি। কিন্তু বই পড়ার সময় তো পাচ্ছে না সন্তানরা। এত বই নেড়ে চেড়ে দেখতেও তো অনেক সময় দরকার। নভেম্বরে পরীক্ষা। ছোটদের কি সারা দিন পড়ায় বসিয়ে রাখা যায়?

অনেক অভিভাবক জানালেন সৃজনশীলের কারণে মুখস্থপ্রবণতা কমেনি বরং বেড়েছে। বেড়েছে তার কারণ হলো পড়ার পরিমাণ বেড়েছে। প্রশ্ন এমনভাবে করা হয়, কেউ কিছু জানে না কোথা থেকে কি হবে। সব পড়তে হচ্ছে। না পড়লে শিশুরা উত্তর পাবে কোথায়। অনেক বেশি মুখস্থ করতে হচ্ছে। বই অনেক বড় আর পড়ার বিষয় অনেক বেশি। বইও অনেক কঠিন। আগে একটি কবিতার প্রথম আট বা ১০ লাইন লিখতে বলা হতো। কিন্তু এখন একটি লাইন লিখে দিয়ে বলা হচ্ছে পরের লাইন লিখতে। তার মানে পুরো বইয়ের সব কবিতা মুখস্থ করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা আরেফিন জানান, আমি ২০ বছর ধরে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াই। আমি জানি বর্তমানে কি পরিমাণ পড়া মুখস্থ করাতে হচ্ছে ছোটদের। কিন্তু আগে শিশুদের এত পড়া আমি দেখিনি। দিন যতই যাচ্ছে ততই শিশুদের ওপর পড়ার চাপ বাড়ছে। একই সাথে কঠিন করা হয়েছে পড়া। তিনি বলেন, সৃজনশীলের কারণে পড়া যে শুধু বেড়েছে তা নয় বরং শিশুদের পাগল হওয়ার মতো অবস্থা।

রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকদের সাথে সৃজনশীল নিয়ে কথা বলার সময় প্রায় সবাই শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকশ করে বললেন, সৃজনশীলের কারণে অনেক বেশি পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মুখস্থপ্রবণতা কমেনি বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। সৃজনশীলের কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে গণিতে। শিক্ষার্থীদের খুবই কষ্টকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এমনসব প্রশ্ন করা হয় যার উত্তর তৈরি করতে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট লেগে যায় কিন্তু সময় দেয়া হয় মাত্র এক মিনিট।
অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, সৃজনশীলের কারণে আমাদের কষ্ট অনেক বেড়েছে, শিক্ষার্থীদেরও কষ্ট বেড়েছে। এভাবে আর কতদিন চলবে।
অনেক অভিভাবক বলেছেন, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলে মুখস্থপ্রবণতা এবং কোচিং প্রাইভেট কমবে বলে আমরাও শুনেছিলাম। কিন্তু কই কিছুই তো কমেনি বরং সবই বেড়েছে। তাহলে এটা চালু করে লাভ হল কি।

২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় দুটি বিষয়ের মাধ্যমে সর্বপ্রথম দেশে চালু করা হয় সৃজনশীল পদ্ধতি। এরপর ধীরে ধীরে বাড়ানো হয় এর আওতা। ২০১২ সালে এইচএসসিতে চালু হয় সৃজনশীল। একই বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় শতকরা ১০ ভাগ সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষায় ৮০ ভাগ প্রশ্ন করা হয় সৃজনশীল পদ্ধতিতে। এ বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ প্রশ্ন সৃজনশীল পদ্ধতিতে করা হবে ।
২০১০ সালে এসএসসিতে সৃজশীল পদ্ধতি চালুর পর থেকে বর্তমানে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব বিষয় সৃজনশীলের আওতায় আনা হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/320479