২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৯

রাজধানীতে দিনভর দুর্ভোগ

বৃষ্টি। পানি জমে যথারীতি রাজধানীবাসীর চরম দুর্ভোগ। পরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। এরই মধ্যে কাওরান বাজারে জমে থাকা পানিতে আনন্দ খুঁজছে এই পথশিশুরা - ছবি : নাসির উদ্দিন
কাজীপাড়া ভাড়া ৩০ টাকা। আর শেওড়াপাড়া ৪০ টাকা। কই যাবেন, দ্রুত উঠেন। এভাবেই যাত্রীদের ডেকে ডেকে ভ্যানে তুলছিলেন আবদুল হালিম। তিনি বলেন, পানি ডিঙিয়ে ভ্যানে করে যাত্রীদের নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে দেই। গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকার একাধিক সড়কে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এ কারণে সড়ক পারাপার এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার ভ্যানে চড়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করে। গতকাল বৃষ্টি হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা, এতেই নাকাল হয়ে পড়ে রাজধানীবাসী। দিনভর পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় রাজধানীর অনেক এলাকার সড়ক তলিয়ে যায় পানির নিচে। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। একাধিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক সড়কে সৃষ্টি হয় চরম যানজট। অফিসগামী সাধারণ মানুষজন পড়েন দুর্ভোগে। সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকার একাধিক এলাকা ডুবে যায় পানির নিচে। মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া সড়কে পানি আটকে গাড়ি চলাচলই বন্ধই হয়ে যায়। এসময় বিকল্পপথে দারুসসালাম-মিরপুর রোড দিয়ে এ গাড়িগুলো চলাচল করে। এ সড়কে তখন সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অন্যদিকে মিরপুর-১ নম্বর থেকে টোলারবাগ পর্যন্ত সড়কও পানিতে ডুবে যায়। একই অবস্থা সৃষ্টি হয় রাজধানীর আরো একাধিক এলাকায়। মতিঝিল, মালিবাগ, আরামবাগ, বিজয় নগর, খিলগাঁও, রামপুরা, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, বাংলামটর, পান্থপথ, আগারগাঁও, কল্যানপুরেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এসব সড়কে যাত্রীদের গাড়ি পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কবি নজরুল এভিনিউয়ের মতো ভিআইপি সড়কও প্লাবিত হয়ে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সড়কে ছিলো ভয়াবহ যানজট। অন্যান্য সংযোগ সড়কে গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়। সালেহা বেগম। রোকেয়া সরণি হয়ে তার গন্তব্য ফার্মগেটে। এক ঘণ্টা সময় মিরপুর ১০ নম্বরে আটকে থেকে তিনি পায়ে হেঁটে রওনা দেন। রাস্তায় পানি থাকায় ফুটপাথ দিয়েই হাঁটছিলেন। কিন্তু আল হেলাল হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার পরে দেখেন ফুটপাথও পানিতে ডুবা। উপায়ন্ত না পেয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনিও ভ্যানে উঠে পড়েন। একই অবস্থা আয়েশা বেগমের। তিনি তিতাস গ্যাস অফিসে যাচ্ছিলেন কাজে। কিন্তু তিতাস অফিসের গলির রাস্তা পর্যন্ত যেয়ে ফিরে আসেন। রোকেয়া সরণি থেকে তিতাস অফিসের গলি রাস্তায় ছিলো পানিতে ডুবা। মিরপুর-১১ নম্বর থেকে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন আবুল হোসেন। রোকেয়া সরণি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি যাচ্ছিলো মিরপুর-১ নম্বর হয়ে। তখন এ সড়কে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। মিরপুর-১০ থেকে টোলারবাগ পর্যন্ত সব গাড়ি জ্যামে আটকে ছিলো। আবুল হোসেন বলেন, বেলা ১২ টায় বাসা থেকে বের হয়েছেন। দুপুর ২ টায়ও মিরপুর-১ নম্বর এ বসে আছেন। কখন গুলিস্তান যাবেন সে হিসেব করছেন। একই অবস্থা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসানের। সকালে অফিসের উদ্দ্যেশে বের হয়ে পৌঁছতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টার উপরে। তিনি জানান, তার শ্যামলীর বাসা থেকে সকালে যখন বের হন তখনই বৃষ্টি শুরু হয়। আর কাওরানবাজার পর্যন্ত পৌঁছতে নজরুল ইসলাম এভিনিউ পানিতে ডুবে যায়। তখন গাড়ি পিপড়ার গতিতে চলে কোনমতে মতিঝিল পৌঁছে। সেখানেও দেখেন রাস্তা অর্ধ ডুবন্ত। পরে রিকশা নিয়ে অফিস যান। আবার বিকেলে যখন বাসায় ফিরেন একইভাবে জ্যামে আটকে থাকতে হয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। শুধু গতকালে ঢাকা শহরের চিত্র এমন ছিলো তাই নয়। একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীবাসীকে পড়তে চরম ভোগান্তিতে। পথেই ব্যয় করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় এসব জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও তা কোন কাজে আসছে না।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=118652