রাজধানীতে গতকাল যানজটের বিভীষিকা। পল্টন এলাকার দৃশ্য
২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:২৬

কেমন যানজট

রাজধানীর কাকলী থেকে বিমানবন্দর রাস্তাটিতে দিনভর যানজট। এই রাস্তাটুকু পার হতে সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টা। এভাবেই রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা গতকাল যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। পথচারীরা বলেছেন, ঈদ যত এগিয়ে আসছে রাজধানীর যানজট ততই তীব্র হচ্ছে। যানজটের সাথে রাস্তায় বড় বড় গর্ত এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়িতে ছারখার অবস্থা। মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এসবে। কোথাও কোথাও ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে চলছে ব্যবসায়।

গত রোববার থেকেই রাজধানীতে ভীষণ যানজট। গত দু’দিন তা ছিল অসহনীয় পর্যায়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার অনেকেই যানজটের কারণে রাস্তায় ইফতার করতে বাধ্য হয়েছে। টঙ্গির বাসিন্দা আরিফ জানান, বিকেল ৩টায় মতিঝিল থেকে রওনা হয়ে ইফতার করেছেন রেডিসনের সামনে। মহাখালী থেকেই যানজট। কাকলির পরে গাড়ি আর আগাচ্ছিলো না। আরিফ জানান, তার মতো হাজার হাজার মানুষ গাড়ির মধ্যেই ইফতার করেন। কাকলী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তায় কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি আটকে গেলে যানজট আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

ই¯্রাফিল নামের এক যাত্রী জানান, বিমানবন্দর থেকে মহাখালী আসছিলেন। এই রাস্তাটুকু আসতে তার সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। এভাবেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে। পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। সময় যত বাড়তে থাকে যানজটের মাত্রাও ততই বেড়ে যায়। বেলা ১০টার পর থেকেই যানজট অসহনীয় রূপ নেয়। ভূক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, পুরো মিরপুর রোড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট, নাবিস্কো থেকে তেজগাঁও সাত রাস্তা এবং মহাখালী থেকে ফার্মগেটসহ রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তাঘাটই অবরুদ্ধ ছিল গতকাল। এমন অনেক এলাকা ছিল যেখানে রাস্তাঘাটে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। গিয়াস নামের এক পথচারী জানান, দুপুরের দিকে মতিঝিল থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত বাসে যেতে তার সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। অথচ হেঁটে এই পথ অতিক্রম করতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা না। ১২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর সিগন্যালে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকের রাস্তায় কেবল গাড়ি আর গাড়ি। প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহনগুলো এক ইঞ্চিও নড়তে পারেনি। এরপর ভিআইপি রোড কিছুটা ফাঁকা হলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। গতকাল রাজধানীর প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে যানজট। বেলা দেড়টার দিকে দেখা যায় মৎস্যভবন মোড় থেকে চারিদিকের রাস্তা বন্ধ। গাড়িগুলো কোনো দিকেই চলতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ একদিকের গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আবার সেদিকের রাস্তাও একটু পরে আটকে যাচ্ছে। গাড়িতে বিকেল ৫টার দিকে গিয়াস নামের এক যাত্রী বাসে উঠে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মতিঝিল থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছেন।

এই যানজটের সাথে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে রাস্তার বড় বড় গর্ত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সংস্কারের অভাবে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গোলাপবাগ মাঠ থেকে মুগদা পর্যন্ত বিশ্বরোডের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত দেখা যায়। এই গর্তের কারণে রাস্তায় যান চলাচলের গতি কমে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে যানজট। মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দুই পাশজুড়ে দেখা যায় শত শত গাড়ি পার্কিং করা। বড় বড় ভবনেও কোনো পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ভবনের সামনে গাড়ি রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা যায় কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যস্ত মার্কেট থাকলেও পার্কিং ব্যবস্থা নেই। মার্কেটগুলোতে আসা লোকজন বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে মার্কেটে ঢুকছেন। রাজধানীর কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা, অ্যালিফ্যান্ট রোড, মিরপুর সড়ক, নিলক্ষেত, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, দিলকুশা, নর্থসাউথ রোড, ইংলিশ রোড, বংশাল, নবাবপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের তীব্র যানজট।
কোনো কোনো এলাকার রাস্তা পুরোটাই দখল করে গাড়ি পার্কিং চলছে। ওই সব পার্কিংয়ে সরকারি যানবাহনই দেখা যায়। সচিবালয় এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাঝের রাস্তাটি পুরো পার্কিংএ স্থলে পরিণত হয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশে যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তা ছোট হয়ে যায়। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। নটর ডেম কলেজের উল্টো পাশের রাস্তা এখন অঘোষিত বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। এখানে থামিয়ে রাখা হয় কয়েক শ’ গাড়ি। এরই মধ্যে বিআরটিসির গাড়িও রয়েছে। এভাবে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার রাস্তা বাসের পার্কিং স্থান বানানো হয়েছে।

এ দিকে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার ফুটপাথ এখন হকারদের দখলে। অনেক এলাকায় ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তার ওপরও পসরা সাজিয়ে বসেছে হকারেরা। বিশেষ করে গুলিস্তানের বেশ কয়েকটি রাস্তা এখন হকারদের দখলে। এ কারণেও অনেক এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে মতিঝিলে দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ট্রাক থামিয়ে তরিতরকারী ও মাছ নামানো হচ্ছে। বিকেল থেকেই এই রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাজুড়ে বসে যায় তরিতরকারী ও মাছের বাজার। যে কারণে বিকেল থেকে এই স্থানটিতে সৃষ্টি হয় দুঃসহ যানজট।

এ দিকে কোনো কোনো এলাকায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে রেখেছে। মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনির সামনের রাস্তাটি খুঁড়ে রেখেছে কয়েক মাস ধরে। সেখানে জমে আছে হাঁটু পানি। একদিকে গর্ত আর একদিকে পানি; প্রতিনিয়ত এখানে যানজটের সৃষ্টি করছে। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
নগরীর ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, রোজা এবং ঈদের আগে রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বেড়ে যায়। এ সময় বিপুলসংখ্যক রিকশা রাস্তায় নামে। কোনো কোনো এলাকায় মওসুমি রিকশাওয়ালাদের জন্য যানজট আরো বাড়ে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/11283