২১ মে ২০১৮, সোমবার, ১০:২৮

তীব্র যানজটে রাজধানীবাসীর চরম ভোগান্তি

১৪ দফা পরামর্শ ডিএমপির

রোজা শুরুর পর প্রথম কার্যদিবস ছিল রোববার। প্রথম দিনেই তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক। ফলে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে যানজটের যন্ত্রণা- দুয়ে মিলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। এদিকে রাজধানীতে যানজট কমিয়ে আনতে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোসহ ১৪ দফা পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেরিনা আক্তার বলেন, আমার বাসা কল্যাণপুরে। সেখান থেকে কারওয়ান বাজারে কর্মস্থলে আসতে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। রোববার একই পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। তিনি বলেন, রোজা রেখে রাস্তায় গরমের মধ্যে এত দীর্ঘ সময় কি বাসে থাকা যায়?
সরকারি চাকরিজীবী মারিয়া হোসেন জানান, মতিঝিল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় নতুন বাজার যেতে বাসে উঠেছি। পৌঁছেছি ৬টা ৫ মিনিটে। এক ঘণ্টার পথ যেতে লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে নগরীতে রিকশার আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নানান অসঙ্গতি দেখছি। একটি সিগন্যালে পাঁচ মিনিট গাড়ি চলতে দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে আরেকটি সিগন্যালে ২০ মিনিট গাড়ি চলতে দিয়েছে পুলিশ। এ কারণে সিগন্যালগুলোতেও বেশি সময় লেগেছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। এর সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। আজকে (রোববার) ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, রোজায় যানজটের তীব্রতার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হয়নি।
ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্য বলেন, রোজা শুরু হলেই রাজধানীতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জেলা থেকে শপিং করতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ঢাকায় পণ্য নিতে আসেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতারের আগেই বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে। সব মিলিয়ে অন্য সময়ের তুলনায় রোজায় রাজধানীতে ট্রাফিক জ্যাম কিছুটা বেশি থাকে। অন্যান্য বছরগুলোতে একই চিত্র ছিল।

রোববার ডিএমপির এক বার্তায় বলা হয়- ইফতারের আগে বাড়ি ফিরতে হবে এমন মনোভাব নিয়ে উল্টোপথে গাড়ি চালানো হতে বিরত থাকুন। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালান, সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে সৃষ্টি হবে অসহনীয় যানজট। কোনো অবস্থায় আপনি যানজটের কারণ হবেন না এটা মনে রেখে গাড়ি চালাবেন।
বার্তায় আরও বলা হয়, রমজানে সারাদিন রোজা রেখে সবাই ক্লান্ত থাকে, সেক্ষেত্রে অযথা গাড়ির হর্ন বাজাবেন না। হাইড্রলিক হর্ন ও অননুমোদিত হর্ন ব্যবহার পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাড়াহুড়া করে গাড়ি না চালিয়ে নিয়ম মেনে নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালান। রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে গাড়ি রেখে রাস্তা সংকীর্ণ করে গাড়ি চলাচলের স্বাভাবিক গতি রোধ করে যানজট সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। মার্কেট ও শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিং করা থেকে বিরত থাকুন।

লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। এতে করে রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত স্থান ছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করবেন না। সরকারি সিদ্ধান্ত ও মোটরযান আইন মেনে গাড়ি চালান। গাড়ির চালকরা আরও বেশি যাত্রীর আশায় রাস্তায় অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করবেন না।
ডিএমপির বার্তায় আরও বলা হয়, রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন। যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে গাড়ি চলার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পথচারীর জীবনের হুমকিও রয়েছে। ভিআইপি ও অতি ব্যস্ত সড়কে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির মতো স্বল্পগতির বাহন চালানো থেকে বিরত থাকুন। রাস্তা ও ফুটপাতে কেউ দোকানপাট বসাবেন না এবং বসাতে নিরুৎসাহিত করুন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/50902