২১ মে ২০১৮, সোমবার, ১০:২৪

ব্যয় ছয় গুণ বাড়িয়ে সাত বছর পর একই প্রকল্প

আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীবন্দর নির্মাণ

প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশের হলেও আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীর বন্দর স্থাপন প্রকল্পের কাজ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। সাত বছর আগের পুরনো প্রকল্পটি বাতিল করে এখন ছয় গুণ বেশি ব্যয়ে একই প্রকল্প নতুন করে হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি নেয়া হলেও সমীক্ষা না হওয়ায় এবং ভারতের অর্থায়ন না পাওয়ার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি এখন এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছাল। নতুন করে জমি অধিগ্রহণে প্রতি হেক্টরে মূল্য ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সাত বছর পর প্রকল্পটি এখন নতুন করে অনুমোদনের জন্য একনেকে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের জন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে পরিণত করা হচ্ছে। আর এ লক্ষ্যে সরকার ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্প স্থাপনের নামে ট্রানশিপমেন্ট বন্দর নির্মাণকাজ ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন দেয়। ওই সময় তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, এটি নির্মিত হলে ভারতীয় কনটেইনারগুলো কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ নৌরুট হয়ে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোয় বা সেভেন সিস্টার এলাকায় সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। ভারতীয় ঋণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারতের ব্যবহারে জন্য চুক্তি হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। এতে নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে আমরা ফুয়েল বহন করতে পারব।
তৎকালীন প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারত যৌথ ইশতেহার অনুযায়ী বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং ওই এক বিলিয়ন ডলারের অংশ থেকে ২১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঋণসহায়তা দেবে। আর বাংলাদেশ সরকার দেবে মাত্র ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল।
প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে, ভৌগোলিক অবস্থান ও নৌ যোগাযোগে আশুগঞ্জের গুরুত্ব অনেক। ২০০৪ সালে আশুগঞ্জকে নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি আশুগঞ্জ নৌবন্দরটিকে বাংলাদেশ-ভারত নৌ যোগাযোগ ও বাণিজ্য প্রটোকলের আওতায় ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ওই প্রটোকলের ধারা ২৩ অনুযায়ী আশুগঞ্জ ও শেরপুরে জাহাজ থেকে খালাসকৃত পণ্য বাংলাদেশী ট্রাক বা ট্রেইলারে সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পরিবহন করা যেতে পারে। ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে উভয় দেশের নৌযানের মালামাল লোডিং বা আনলোডিং সুবিধা দেবে। ওই প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ বন্দর পর্যন্ত নৌপথে পরিবহনকৃত ভারতীয় মালামাল বাংলাদেশের ট্রাক বা ট্রেইলারের মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারব। আশুগঞ্জ ও কলকাতা নৌরুটের মাধ্যমে কনটেইনার নৌ ভেসেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে। আশুগঞ্জ থেকে ওই কনটেইনারগুলো ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে আগরতলা পর্যন্ত পরিবহন করা হবে। শুধু কলকাতা-আশুগঞ্জ নৌরুটে বছরে চার লাখ টিইইউ কনটেইনার পরিবাহিত হবে। আর এ বন্দরটি আপাতত এক লাখ টিইইউ কনটেইনার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করে নির্মিত হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর দুই লাখ টিইইউ কনটেইনার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বন্দরে রূপান্তরিত হবে। আশুগঞ্জ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সুবিধাদি স্থাপন করা হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চলসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১১ সালে নেয়া প্রকল্পটি ভারতীয় প্রথম এলওসির অর্থায়নের প্রস্তাব ছিল। প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা না থাকায় প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকারের মঞ্জুরি সহায়তায় ওয়াপকোস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে আশুগঞ্জের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ধারণাগত ড্রইং ডিজাইনসহ প্রকল্পটির ওপর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। পরে আগে ২০১১ সালের অনুমোদিত প্রকল্পটি বাতিল করে নতুনভাবে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা থেকে এখন ভারতীয় দ্বিতীয় এলওসির ঋণসহ মোট এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে; যার মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৪৩১ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকারের ৮৬২ কোটি টাকা। আগামী ২০২১ সলের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় ধরা হয় ৮৩১ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় বাড়ছে ৩৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

প্রকল্প ব্যয়ে দেখা যায়, ২৫০ টিপিএইচ ক্ষমতার মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, কনটেইনারের জন্য একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, রেল ওয়াগন বা ট্রাক লোডার চার কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ টন লেভেল লাফিং ক্রেন ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর ১২.৮৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৭৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এখানে হেক্টরপ্রতি দর হলো ৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। রেললাইন সংযোগে ব্যয় ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, চলমান পানগাও কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের সাথে তুলনা করে অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/10708