২০ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:০৪

মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ে

নদীর তীর সংরক্ষণ, নদী খনন বা ড্রেজিংয়ের প্রকল্পগুলোর খরচ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বছর গেলেই এসব প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। এমনকি বড় নদীর তীর রক্ষা ও ড্রেজিংয়ের চেয়ে ছোট নদীর এ সংক্রান্ত ব্যয় বেশি। যেখানে যমুনা নদীতে প্রতি কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে ব্যয় হচ্ছে ১০ কোটি টাকা ও গড়াইতে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা; সেখানে ইছামতি ও কর্ণফুলীর জন্য ব্যয় হচ্ছে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ফলে চট্টগ্রামের ইছামতি ও কর্ণফুলী নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প থেকে ১৬৭ কোটি টাকা বাদ দেয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৫০২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী ও এর সংযুক্ত খালগুলোর তীর সংরক্ষণ ও নদী ড্রেজিং করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে।

ব্যয় বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, এই প্রকল্পের অধীনে ১১.২২৫ কিলোমিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা এবং ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার খালের তীর রক্ষা করা হবে। আর ১৯ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। কর্ণফুলীর ৭ দশমিক ৫২৫ কিলোমিটার তীর রক্ষায় ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং ইছামতির ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার তীর রক্ষায় ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। খালের তীর রক্ষায় ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৩৪ কোটি ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আর নদী দু’টির ১৯ কিলোমিটার পথ ড্রেজিংয়ে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এখানে কর্ণফুলী ও ইছামতি নদীর ড্রেজিংয়ে খরচ হবে প্রতি কিলোমিটারে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ যমুনা নদীতে প্রতি কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে ব্যয় হচ্ছে ১০ কোটি টাকা, গড়াইতে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। মূল প্রকল্প ব্যয়ের ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থই যাবে এই ড্রেজিং কাজে। অন্য দিকে নদীর তীর রক্ষায় গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩ হাজার টাকা। যেখানে কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষায় প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর ইছামতির জন্য কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হবে ১১ কোটি ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এখানেই ব্যবধান প্রতি কিলোমিটারে সোয়া ৮ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষা কাজে প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, সেখানে চলমান অন্য প্রকল্পে ব্যয় ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ইছামতি নদীর তীর রক্ষায় প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, সেখানে সমজাতীয় সমাপ্ত প্রকল্পে ব্যয় মাত্র ৯৭ হাজার টাকা। খালগুলোর তীর রক্ষায় যেখানে ব্যয় ৮৪ হাজার টাকা, সেখানে সমাপ্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নির্মাণসামগ্রীর বাজারদর বৃদ্ধির কারণে সার্কেল রেট শিডিউল পরিবর্তন হওয়াতে একক দরের এই তারতম্য। এই দর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেট শিডিউল ২০১৬-১৭ অর্থবছর ধরে করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজের পরিমাণ ও দরের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। তারা এই ব্যয় ৫০২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩৫ কোটি ৮১ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় করার পরামর্শ দিয়েছে। এখানে নদীর তীর সংরক্ষণ ১১.২২৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১০ কিলোমিটার করতে বলেছে। ফলে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় পিইসির মতে ১৫ কোটি ২ লাখ টাকায় আনতে হবে। আর খালের তীর রক্ষা ব্যয় ৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে। প্রকল্পের তীর রক্ষার ব্যয় সমজাতীয় প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্নির্ধারণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সেচ অনুবিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/10487