২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৯

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার : পুনরায় উৎসাহী কেন ?

গত ১৭ এপ্রিল গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাতিল ও সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই সময় কমিশন বিএনপির কিছু প্রস্তাবে একমত পোষণ করলেও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। সিইসি বলেন, কমিশন আগেই বলেছে, এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই।

ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে ১৭ এপ্রিলে ইসি সচিব হেলালউদ্দিন বৈঠকে বলেন, বিএনপি ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি তুলেছিল। কমিশন বলেছে, আইন ও বিধিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন থেকে বিএনপির প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, এ প্রযুক্তি খুবই আধুনিক। এটি হ্যাক করার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকলে ‘আপনারা এসে এটি দেখুন, কোনো সমস্যা থাকলে বলুন,’ বলে বিএনপি প্রতিনিধিদলকে পরামর্শও দেন।
বিএনপির বক্তব্য হলো, ইভিএম কার্যক্রম শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এ যন্ত্রটির নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দুই-তিন সপ্তাহ আগে ‘এবার আড়াই হাজার ইভিএম কিনছে ইসি’ শিরোনামে ঢাকার এক দৈনিকে প্রকাশিত (২১ এপ্রিল ২০১৮) খবরে বলা হয়, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিতর্কের মধ্যেই প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ৫৩৫ সেট ইভিএম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এসব ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে কিনতে ইসি চিঠিও দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজারের মতো ইভিএম কিনলেও পরে আরো পাঁচ থেকে ১০ হাজার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
এর মধ্যে সর্বশেষ, ঢাকার এক দৈনিক পত্রিকায় (৩ মে ২০১৮) ‘চারগুন দামে কেনা হচ্ছে নতুন ইভিএম’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়Ñ আবারো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) দিকে ঝুঁকছে কে এম নূরুল হুদা কমিশন। দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশনকে এক রকম তন্দ্রায় রেখে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। শোনা যায়, এ জন্য নাকি আপিল করেছে বিভিন্ন মহল, যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নামও আছে সবার শেষে।

চার গুণ বেশি দামে ইভিএম কেনার ব্যাপারে বলা হয়েছিলÑ গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে কয়েকটি কেন্দ্রে এগুলোর ব্যবহার করা হবে এবং কার্যক্ষমতা পরখ করে দেখা হবে। আর সে জন্য যত রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, তা করা এবং প্রয়োজনে এতদসংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপকেও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির তৈরি নতুন ইভিএম দেখানোর পরিকল্পনাও ইসির রয়েছে মর্মে খবরটিতে বলা হয়েছে। সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করার বিষয়ে তৎপর কম হলেও ইভিএম বিষয়ে ইসির কর্তাদের কোনো ভাটা নেই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি দায়িত্ব নেয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে নূরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে (যা ২০১৮ সালের শেষ সপ্তাহ বা ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা) সাত দফা রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছিলেন জনাকীর্ণ সাংবাদ সম্মেলনে। সাত দফার মধ্যে আসন্ন নির্বাচনে ইলেকট্রিক ভোটিং (ইভিএম) ব্যবহার বিষয়ে (সীমিত বা ব্যাপকভাবে) কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না দিলেও তিনি আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে তাল রাখার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও ইভিএম ব্যবহারের সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অত্যন্ত খোলামেলাভাবে, তার ঘোষিত সাতদফা রোডম্যাপের বাইরে।
তা ছাড়া, ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করার উদ্যোগের কথা তখন তিনি বলেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এ প্রযুক্তিকে পিছিয়ে রেখে আমরা এগুতে পারব না। তা ছাড়া সাধারণ ভোটাররা ইভিএমএ সঠিকভাবে ভোট দিতে পারেন। এরপরও ইভিএমকে আরো নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য করতে বুয়েটের সঙ্গে বিগত নির্বাচন কমিশনের অনেক আলোচনাও হয়েছে।

ইভিএমের যাত্রা শুরু কিভাবে?
গত ১১ মে ২০১৭ এ বিষয়ে এক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়Ñ এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। ২০১০ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির মুখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল; কিন্তু ওই কেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি ক্রটি ধরা পড়ে। এ নিয়ে মামলাও হয়। ইভিএম নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। জটিলতার কারণে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হয়েছিল ইসিকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও একটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হয়ে যায়। এসব কারণে ২০১৩ সালের পর থেকে আর কোনো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। সেই সময়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ শ’ ইভিএম তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে এসে বিগত কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন আগের প্রযুক্তিটি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তির একটি ভোটিং মেশিন তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘ডিজিটাল ভোটিং মেশিন’ (ডিভিএম)। এই মেশিনটি তখন কমিশনের সামনে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

জানা যায়, নতুন এই পদ্ধতিতে শুধু আঙুলের ছাপ শনাক্ত হওয়ার পরই ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। এটি জাল ভোট ঠেকানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও দাবি করেছেন। বলা হলোÑ মেশিন ভেঙে ফেললেও বা পানিতে ডুবিয়ে দিলেও ব্ল্যাকবক্সের মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের হিসাব পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে এনআইডির তদানীন্তন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো: সালেহউদ্দিন জানান, বর্তমানে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ রয়েছে। আঙুুলের ছাপ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কেউ ভোট দিতে পারবেন না। তিনি বলেন, আগের ইভিএমের বিভিন্ন ক্রটিবিচ্যুতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার পর এই নতুন ইভিএম তৈরি করা হয়েছে। তার দাবি, এটি হ্যাক করাও সম্ভব হবে না। ইভিএম ব্যাপারে রয়েছে বিভিন্নমুখী মতামত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের। ড. অ্যালেক্স হালডারমেন নামে প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএমের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছিলেন, আমেরিকায় ইভিএম টেম্পারপ্রুফ নয়। ফলে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তখন আমেরিকায় ২২টির বেশি অঙ্গরাজ্যে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোও নিষিদ্ধ হওয়ার পথে। পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ দেশে ই-ভোটিং পদ্ধতি নেই। যে কয়েকটি দেশ এটি চালু করেছে, তারাও এটি নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড ই-ভোটিং পরিত্যাগ করেছে। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জার্মানির ফেডারেল কোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়। ২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট তিনটি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের ফলাফল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করে। নেদারল্যান্ডে ই-ভোটিং কার্যক্রমের প্রয়োগ হলেও, জনগণের আপত্তির মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, জালিয়াতির সুযোগ থাকায় এক চাপেই ইভিএম এ ৫০টি ভোট দেয়া সম্ভব। বলা হয়, বিদেশের মাটিতে বসেও ইভিএম হ্যাকিং করা যায় এবং একটি ইভিএম হ্যাকিং করতে এক মিনিটের বেশি লাগে না। আগে থেকেই বিএনপি ইভিএম এবং ডিভিএম ব্যবহারের সরাসরি বিরোধিতা করছে। অন্য দিকে, আওয়ামী লীগ তখন ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করেনি। নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে তখন থেকেই।

ইভিএমের সাম্প্রতিকাল
এখন সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের দিকে নজর দিতে চাই। ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গত ১৯ মার্চ ঢাকার এক দৈনিক পত্রিকায় ‘ভারতে ইভিএম নয়, ব্যালটে ভোটের দাবি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়, ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রের (ইভিএম) বিরোধিতা দেখা দিয়েছে ভারতে। দেশটির সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছেÑ ইভিএমের বদলে আগামী দিনের সব নির্বাচন আগের মতো কাগজের ব্যালটে নেয়া হোক। আর সাধারণ ভোটারের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, তা দূর করতেই পুরনো ব্যালট পেপারে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়ার প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছে দলটি। দিন কয়েক আগে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বলা হয়েছে, ইভিএমের ব্যাপক অপব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য জনমতের উল্টো ফল বেরোয়। এই আশঙ্কা দূর করতেই ব্যালটে ভোট ফের চালু করা দরকার।

কয়েক বছর আগের কথা। ভারতের সাধারণ নির্বাচন ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে ঢাকার এক বহুল পঠিত পত্রিকায় (১৯ জানুয়ারি ২০১২) ‘সারা ভারতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন : আলোচনার পরামর্শ আদালতের’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়েছিল, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশন সারা দেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দল আদালতে গেলে দিল্লি হাইকোর্ট এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল, ইসি ও সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা শতভাগ রক্ষা করা যায়; সেই আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ইভিএম যেহেতু একটি যন্ত্র, তাই এটা কারচুপির সুযোগমুক্ত নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আদালত নির্বাচন কমিশনকে কোনো আদেশ দেবে না বলে জানায়। পরিবর্তে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবাই মিলে কিভাবে ইভিএমকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নেয়া যায় সেই আলোচনা করা যেতে পারে।

দিল্লির হাইকোর্ট ১৮ জানুয়ারি ২০১২ তাদের রায়ের সঙ্গে দেয়া মন্তব্যে বলেছিলেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট দেয়ার যন্ত্র ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভারতের নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণের প্রধান অবলম্বন হতে যাচ্ছে। তবে যন্ত্রটি দিয়ে কারসাজি করার সুযোগ রয়েছে।
সে দিন শুনানিতে ভারতের নির্বাচন কমিশন জানায়, ভবিষ্যতের নির্বাচন আয়োজনে সনাতন পদ্ধতির কাগজে ব্যালটে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই। কারণ হিসেবে বলা হয়, ভারতে ৭৩ কোটির বেশি ভোটার আছে। এখানে বহু রাজনৈতিক দলের অনেক লোক নির্বাচনে প্রার্থী হন। তাই ব্যালট ও আনুষঙ্গিক কাজ ছাপানোর জন্য বিপুল অর্থের অপচয় করতে হয়।
ভারতের বিগত লোকসভা ও দিল্লিসহ কয়েকটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত (২০১৪) নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং কিছু দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক রাজ্যে (দিল্লিসহ) ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠতে থাকে ও বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ ছোট-বড় সামাজিক মাধ্যমে তথ্যসমৃদ্ধ অভিযোগ বিভিন্ন বক্তব্য আসতে থাকে। তবে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত প্রশ্নাতীত আস্থা অর্জনকারী, নির্বাচন কমিশন ইভিএম-সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করতে থাকে এবং এতদসংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণের নমুনা পেশ করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে।

ভারতের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে বিজ্ঞ জনদের অভিমত হলোÑ ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনেক সুবিধা আছে। তবে যদি যন্ত্রটির ব্যবহারে টেম্পারিং করার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, তা হবে এক কথায় ভয়ঙ্কর (Disastrous) ও বিধ্বংসী ঘটনা।
ভারতে ইভিএম সংক্রান্ত অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের শুরু হয়েছিল ইভিএম পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে কেরালা রাজ্যের একটি নির্বাচনী এলাকায় ১৯৮২ সালে ব্যবহারের সময়ে। আর বাংলাদেশে ইভিএম নিয়ে প্রাথমিক নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১০ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদার আমলে।

উত্তর প্রদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে ব্যাপক সন্দেহ ও নেতিবাচক আবহ থাকার প্রেক্ষাপটে সে প্রদেশের নির্বাচন কমিশনার গত ১৪ এপ্রিল ২০১৭ জারিকৃত আদেশে এখন (নতুন, আধুনিক ও পরিপূর্ণ Flawless EVM সরবরাহ না করা হলে) অতি নিকটবর্তী সময়ে সে রাজ্যে অনুষ্ঠিতব্য ১৪টি পৌর করপোরেশন, ১৯৩টি মিউনিসিপাল বোর্ডে এবং ৪২৭টি নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাগজের ব্যালট দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে, এর অন্যথা নয়, মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কে সি মিত্তাল, সেক্রেটারি লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্ট, অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে বক্তব্য উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি বলেনÑ.... Even in the 2014 Lok Sabha election, the Vote Pattern going to BJP was noticed by election officials at Jorhat Parliamentary Constituency and two more EVMs were removed and seized by the EC on identical performance from Bhopal”

অতি সম্প্রতি মার্চ (২০১৮) মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের সবচেয়ে পুরনো ও বড় দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আগামীতে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন ইভিএমের বদলে আগের মতো কাগজের ব্যালটে অনুষ্ঠানের দাবি দলীয়ভাবে যেহেতু উত্থাপন করা হয়েছেÑ সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ইভিএম নিয়ে সময়, অর্থ, অতিউৎসাহ, তোড়জোড়, বাদানুবাদ ইত্যাদি পরিহার করে সামনের নির্বাচনগুলোতে (সংসদ নির্বাচনসহ) ইভিএম ব্যবহার বাদ দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হবে ইসি দেশবাসীর তা-ই প্রত্যাশা। ‘দাওয়াত দিয়ে’ সমস্যা ডেকে আনার দরকার কী?হ
লেখক : সাবেক সচিব,

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/10459