১৯ মে ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৭

রোযার প্রথম দিনেই আকাশচুম্বী সবজির বাজার ॥ বেগুনের কেজি ১শ টাকা

প্রথম রোযার দিনেই এক লাফে আকাশচুম্বী বেগুনের দাম। কেজি প্রতি ১শ টাকা বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পেপে, শশা ও গাজরের দাম। বাজারে ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি নেই। সবজির বাজারের অস্থিরতার সাথে যোগ হয়েছে মুরগী ও চিনির দাম। আর পেয়াঁজের দাম অনেক আগেই বেড়ে আছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। আর চিনির কেজি ৬৪-৬৫ টাকা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, রমযানের প্রথম দিনেই বেশকিছু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বেড়েছে সবজির দাম। তার মধ্যে বেগুনের দাম ১শ টাকায় উঠেছে। বেগুনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শশা, গাজর ও কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম। এদিকে গরুর গোশতের দাম না বাড়লেও বেড়েছে মুরগীর গোশতের দাম। ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫টাকা। ব্্রয়লার মুরগী বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে চিচিঙ্গা। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১শ টাকা কেজি। পেপের দাম ৬০-৮০ টাকা। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি।
গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম কিছুটা বেড়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বরবটি ও ঢেঁড়স। এ দু’টি সবজি আগের সপ্তাহের মতো ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে পাকা টমেটো ও করলার দাম নতুন করে কিছুটা বেড়েছে। ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
দামের এ উত্তাপ শাকেও লেগেছে। লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আটি, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫-১০ টাকা আটি। আর ২০-২৫ টাকা আটি বিক্রি হওয়া পুইশাক ও লাউ শাক বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।

কাঁচামরিচের দাম কিছুটা বেড়ে ১৫-২০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০-১৫ টাকা পোয়া। দেশি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের মতো ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ী বেলাল বলেন, রোজা, রোজার কারণেই এখন সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা বেশি। রোজা চলে গেলে হয়তো সব সবজির দাম কমে যাবে। শসা ও বেগুনের দাম রোজার পর অবশ্যই কমবে। তবে রোজার ভেতর এ দু'টি পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে রোযার আগেই বেড়েছে পেয়াঁজের দাম। গতকাল পেয়াঁজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। গত এক বছর ধরেই পেয়াঁজের দাম ছিল বেশি। টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
টিসিবির প্রতিবেদন মতে, গত বছরের একই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ টাকায়। কিন্তু এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টকায়।
ব্যবসায়ীদের মতে, উৎপাদন ও আমদানির ওপর নির্ভর করে পেঁয়াজের দাম। যে বছর উৎপাদন ও আমদানি ভাল থাকে সে বছর দামও কম থাকে।
এ বছর বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই এই ক্ষতির শিকার। এর ফলে এবছরের একটি সময়ে পেঁয়াজের বাজার ছিল ১৫০ টাকার উপরে।
তবে এখন সংকট নেই বলেই মন্তব্য ব্যবসায়ীদের। পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ থাকায় পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।

বাজারে দেখা গেছে, রমযানে প্রতিদিন ইফতারে ব্যবহৃত ছোলার দামও বাড়তে শুরু করেছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ১ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা আর ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৪৮৫ থেকে ৫৩০ টাকা। মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও রসুন ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বৃদ্ধি পাওয়া চালের দাম এখনো কমেনি। তবে নতুন করে দাম বাড়েনি। গুটি স্বর্ণা ৪২ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল মানভেদে ৫০ থেকে ৭৪ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু, খাসির গোশতের দাম। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ টাকা, খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকা, দেশি মুরগি ২৪০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি প্রতি পিস আকারভেদে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা ও পাকিস্তানী কক মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে মাছের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। রুই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতল ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, চাষ করা শিং মাছ ২২০ টাকা ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০ টাকা, কই ১৬০-১৮০ টাকা, পাঙাশ ১৩০-১৫০ টাকা, পাবদা ৫০০-৫৫০ টাকা এবং মাগুর মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/330915