১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৩

জনশক্তি রফতানির বাজারে সিন্ডিকেট

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ বায়রার দশ জন সদস্য মিলে সিন্ডিকেট করে বিদেশে জনশক্তি রফতানির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে সোয়া লাখ জনশক্তি রফতানি করেছে। বাকী আরও ৫ লাখ জনশক্তি রফতানির পরিকল্পনা করলেও মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের কারণে সে সুযোগ পাননি। একারণে বহু সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে টাকা এবং পাসপোর্ট জমা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কোন রকম রশিদ ছাড়াই টাকা নিয়েছিলেন বলে আইনী বিষয় থেকে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তাদের এ সিন্ডিকেটের বাইরে অন্যদের জনশক্তি রফতানি করার সুযোগ দেয়নি। কিন্তু মালয়েশিয়ায় নির্বাচন হয়ে সরকার পরিবর্তনের কারণে তারা বেকায়দায় পড়েছে। তবে এই সিন্ডিকেট মালদ্বীপেও একইভাবে রফতানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পরবর্তীতের তারা দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এককভাবে জনশক্তি রফতানি করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ অন্য এজেন্সির মালিকদের। সিন্ডিকেটের কারণে অন্যরা কাজ করতে পারছে না। এতে ক্ষুব্দ প্রায় ১৩ শ’ জনশক্তি রফতানিকারী রিক্রটিং এজেন্সির মালিকরা।

সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো--নূর আলীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনিক ইষ্টার্ন আর এল নম্বর -২১, শেখ আবদুল্লাহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান শানজারি ইন্টারন্যাশনাল আর এল নম্বর-৭৪২ , মুহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপনের ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল আর এল নম্বর- ৫৪৯ ,জয়নাল আবেদিন জাফরের আল- ইসলাম ওভারসিস আর এল নম্বর-১০৬, মিস্টার গোলাম মোস্তফার প্রান্তিক ট্রাভেলস এ- ট্যুরিজম লিমিটেড, মিস্টার আরিফ আলমের প্যাসেজ এসোসিয়েটস আর এল নম্বর- ৪৬৮, মিস্টার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহার মালিকানাধীন ডায়নামিক ট্রেড সিন্ডিকেট আর এল নম্বর- ৮৯৭ , তুহিন সিদ্দীকির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইএসএমটি, আর এল নম্বর ১১৯৪, মিস্টার মুহাম্মদ বশিরের মালিকানাধিন রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল আর এল নম্বর-২৫৮, মিস্টার রুহুল আমিনের আমিন ট্যুরস এ- ট্রাভেলস আর এল নম্বর- ৯৮১।
জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহারাত অ্যাসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী মো: শফিকুল আলম ফিরোজ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত চিঠি রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের (ট্রেড সংগঠন) কাছে জমা দিয়ে দ্রুত প্রতিকার চেয়েছেন। শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের স্বাক্ষরসহ চিঠির এক স্থানে তিনি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন পেছানোর আদেশ বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ রয়েছে, মালয়েশিয়ার টপ পলিসি মেকারদের (সাবেক) সাথে যোগসাজশ করে ঢাকার ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সরকার নির্ধারিত ১০ গুণের বেশি টাকা নিয়ে (সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা) মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাচ্ছে। এই মনোপলি ব্যবসার একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে বায়রার নির্বাহী কমিটির নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ সদস্যরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হলেও সিন্ডিকেট করে কিছু এজেন্সির মালিককে লাভবান করার স্বার্থ ঠিক রাখার জন্যই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির দোহাই দিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোর যে কারণ দেখানো হচ্ছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। গত রোববার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) কার্যনির্বাহী কমিটির ২০১৮-২০২০ মেয়াদের নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে ডাকা জরুরি বৈঠকে হট্টগোল হয়েছে। পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার লেডিস ক্লাবে সাধারণ সদস্যরা বৈঠক করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।
বায়রা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতির কাছে কমিটির এক সদস্য জানতে চেয়েছেন, নির্ধারিত ২৪ জুন বায়রা নির্বাচন করতে সাধারণ সদস্যদের কোনো সমস্যা না থাকলেও আপনি কী কারণে নির্বাচন পেছাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত দিয়েছেন? আর এই বিষয়টি আগেই আমাদের কেনো মিটিং করে জানালেন না ? জবাবে সভাপতি লিখিত বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, যে সময়টাতে আসলে নির্বাচনের তারিখ পড়েছে, সেই সময়টায় মাহে রমযান ও ঈদুল ফিতরের পর নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কষ্টসাধ্য। তাছাড়া অনেক সদস্য ইতেকাফ উপলক্ষে পবিত্র কাবা শরিফ এবং মসজিদে নববীতে অবস্থান করে থাকেন। আবার জুলাই-আগস্ট বর্ষাকাল এবং আগস্ট মাসের শেষে ঈদুল আজহা। এরপর অনেকেই হাজীদের নিয়ে হাব ও আটাবের সদস্যরা হজ্ব ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। উপরন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হতে পারে। বায়রার অনেক সদস্য জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এসব কারণে বায়রা নির্বাচন বোর্ড ২০১৮-২০২০ মেয়াদের নির্বাচন পেছানোর সুপারিশ করেছে। তবে সভাপতির এমন যুক্তি মানতে না পেরে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন সদস্য তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং হইচই শুরু করেন। এ সময় বাইরে অপেক্ষমাণ শতাধিক সাধারণ সদস্য নেতৃবৃন্দের কার্যালয়ের সামনে হইচই করতে থাকেন। এ সময় তারা ‘সিন্ডিকেট মুক্ত বায়রা চাই, যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন। একই সাথে তারা নেতৃবৃন্দের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। পরে বায়রা সভাপতি ৪-৫ দিন পর আবার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় বায়রার সাবেক সহসভাপতি মো. শফিকুল আলম ফিরোজ, সাবেক মহাসচিব মনসুর আহমেদ কামাল, সাবেক সহসভাপতি আবুল বারাকাত ভূঁইয়া, নাসির উদ্দিন মজুমদার সিরাজ, কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল, আনোয়ার হোসেন, কাজী আবদুর রহিম, ওবায়দুল আরিফ, মতিউর রহমান, আজিজুল হক মজুমদার, সেলিম ও রবিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি বেনজির আহমদ বলেন, বায়রায় রোববার ইসি বৈঠক ছিল। আমাদের কমিটির মেয়াদ তো ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিয়েছে কমার্স মিনিস্ট্রি। তবে সিন্ডিকেট নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

 

http://www.dailysangram.com/post/330833-