কাওরান বাজার আড়তে বিষাক্ত আমের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা। ছবিটি গতকাল তোলা : নাসিম সিকদার
১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২০

অভিযানেও ভয় নেই বিষাক্ত আমের ব্যবসায়ীদের

চার শ’ মণ ধ্বংসের পর হাজার মণ উঠেছে কাওরান বাজারে

বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো টসটসে আমে সয়লাব বাজার। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার থেকে শুরু করে অলিগলি সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে এই আম। বিষাক্ত এই আম ধ্বংস করতেও মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএসটিআই ও সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা বিভিন্ন অভিযানে একের পর এক ধ্বংস করছে বিষাক্ত আমসহ বিভিন্ন ফল। কিন্তু তাতে কী। এক দিকে যেমন ধ্বংস করা হচ্ছে বিষাক্ত আম। অন্য দিকে ব্যবসায়ীরা বিষ মেশানো আমে সয়লাব করে দিয়েছে বাজার।
গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে কাওরান বাজার, যাত্রবাড়ী ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন ফলের আড়তে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন, অভিযানের পরও যদি আবার বিষাক্ত আম বা অন্য কোনো ফল আনা হয় সেখানে ফের অভিযান চালানো হবে। যতবার বিষাক্ত ফল পাওয়া যাবে ততবার অভিযান চালিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু অভিযান চালালেই হবে না, এ ক্ষেত্রে ক্রেতাসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার র্যাব-২ এর সহায়তায়, র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে বিএসটিআইর ফিল্ড অফিসার মো: মাজহারুল ইসলাম ও মো: শরীফ হোসেনদের সহযোগিতায় রাজধানীর কাওরান বাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিএসটিআইর মিনিল্যাব, মেজারিং ডিভাইসসহ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই অভিযানে ৪০০ মণ বিষাক্ত আম ধ্বংস করে আভিযানিক দল। এ সময় আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। জব্দকৃত বিষাক্ত আম বুলডোজার দিয়ে পিষিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার দুই দিন না পেরোতেই আবার বিষাক্ত আমে সয়লাব হয়ে গেছে কাওরান বাজারের আমের আড়ত। গতকাল বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারের বিভিন্ন আড়তে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত আম দেখা যায়। আমগুলো প্লাষ্টিকের খাঁচায় করে নিউজ পেপার দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্যাম্পল হিসেবে কয়েক ঝুড়ি আম নিয়ে আড়তের সামনে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। দুই দিন আগেই যে এখানে অভিযান চলেছে তার কোনো আলামত নেই। আড়তদারদের কারো ভেতর কোনো ভয়ভীতিও দেখা যায়নি। আম বেচাকেনায় কোনো রাখঢাকও নেই। আড়তের মালিকদের না পাওয়া গেলেও কয়েকজন শ্রমিক জানান, এই আম আগে থেকেই অর্ডার করা হয়েছিল। মঙ্গলবারের অভিযান চলার সময় আমগুলো ট্রাকে ঢাকার পথেই ছিল। গত দুই রাতে আমগুলো আড়তে ঢুকেছে। তাদের মতে, বাজারে চাহিদা আছে এ আমের। তাই আমরা আনছি। পাবলিক না খেলে আনব কী করতে?
এ দিকে একইভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার যাত্রবাড়ী আমের আড়তে অভিযান চালায় র্যাব-১০ ও বিএসটিআই। র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে সকাল ৭টা অভিযান শুরু করা হয়। এ অভিযানে আড়তে থাকা এক হাজার মণ বিষাক্ত আম বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়। আমের রসে পিচ্ছিল হয়ে যায় যাত্রাবাড়ী বাজারের সামনের রাস্তায়। এ সময় ৯ জন আম ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা করা হয়। র্যাব বলছে, বিষাক্ত আমসহ বিভিন্ন ফলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে র্যাব। যেখানেই বিষাক্ত ফলের সন্ধান পাওয়া যাবে, সেখানেই চালানো হবে এ অভিযান। র্যাব জানায়, সাম্প্রতিককালে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বেশি লাভের আশায় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ইথোফেন, কার্বাইড ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে অপরিপক্ব কাঁচা আম পাকিয়ে বাজারজাত করছে। আর এসব কেমিক্যালযুক্ত পাকা আম সাধারণ মানুষ কিনে খাওয়ার পর বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, অভিযানগুলোতে ধ্বংস করা বেশির ভাগ আমই অপরিপক্ব। কিন্তু এসব আম ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথানল দিয়ে পাকানো। কেমিক্যাল দেয়ায় আমের ওপরের অংশ পাকা দেখা যায়। অথচ ভেতরে কাঁচা। অনেক আমের আঁটি পর্যন্ত শক্ত হয়নি। অথচ কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে তা দেখতে চকচক করছে; যা দেখে ক্রেতা মনে করছেন এটি পাকা আম। আসলে তা ঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযানের পরও যদি আবার বিষাক্ত আম বা অন্য কোনো ফল আনা হয়, সেখানে আবার অভিযান চালানো হবে। যতবার বিষাক্ত ফল পাওয়া যাবে ততবার অভিযান চালিয়ে দোষীদের কঠির শাস্তির আওতায় আনা হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/319453