১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৮

রমজানে গ্যাস নিয়ে দুশ্চিন্তা

• সাধারণত শীতকালে গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকে
• গ্রীষ্মেও তিতাসের গ্যাসের চাপ নেই
• রাজধানীর অনেক এলাকায় সারা দিন চুলা জ্বলে না
পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। এতে রমজানে সাহরি ও ইফতারের খাবার তৈরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেক বাসিন্দা। গ্যাস না থাকায় পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করছে।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের গোয়ালনগর লেনে ৬০টি বহুতল ভবনে অন্তত ৭০০ পরিবার বসবাস করছে। গতকাল বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস থাকে না বলে বেশির ভাগ বাড়িতে কেরোসিনের চুলা কেনা হয়েছে। পেশায় দরজি ৯১ বছর বয়সী রমেন পাল বলেন, সকাল ছয়টায় গ্যাস চলে যায়, আসে বেলা তিনটার পর। আবার সন্ধ্যায় গিয়ে আসে গভীর রাতে। দরকারি সময়ে গ্যাস থাকে না বলে কেরোসিনের চুলা জ্বালাতে হয়। কেরোসিন কিনতে বাড়তি অনেক টাকা চলে যায়। আবার তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে গ্যাসের বিলও দিতে হয়।
তাঁতীবাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুদ্দিনের বাড়িতে ১০টি পরিবার ভাড়া থাকে। গ্যাস না থাকায় ভাড়াটেদের কেউ কেউ বাড়ি ছেড়েছে বলে তাঁকে জানিয়েছেন। রমজানে ইফতার ও সাহ্রির খাবার তৈরির বিষয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানান।
একই দুশ্চিন্তা লালবাগের শহীদবাগ, সোয়ারীঘাট, সূত্রাপুরের মালাকার টোলা, বানিয়ানগর, গোপীবাগ, কে এম দাস লেন, গেন্ডারিয়ার এস কে দাস রোড, কে বি রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেরও। এসব এলাকাতেও বেশির ভাগ সময়ই গ্যাস থাকে না।
গেন্ডারিয়া এস কে দাস রোডের ৭০ / ৬ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মমতা সরকার জানান, দিনে গ্যাসের চাপ না থাকায় গভীর রাতে রান্না করতে হয়।
সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ এলাকার আবদুল হক বিভিন্ন অফিসে দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন। গ্যাসের সংকটে সময়মতো রান্না করে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তাঁর ব্যবসা পড়ে গেছে বলে জানালেন।
পুরান ঢাকার বাইরে পল্লবী, মিরপুরের ১১ নম্বর, ১৪ নম্বর, কাফরুলের কিছু এলাকা, মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেকের কিছু এলাকাতেও গ্যাসের সংকট চলছে। তিতাসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে এসব এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস-সংকটের বিস্তর অভিযোগ করেছেন।
গ্যাস-সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান বলেন, ঢাকায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার, পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির জন্যই সমস্যা। তবে খুব শিগগির এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর সমস্যা কমে যাবে।
হোটেলে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার
তাঁতীবাজার রাধিকা মোহন বসাক লেন ও পঁচাগলি, রাজার দেউড়ি, সূত্রাপুরসহ আশপাশের অনেকগুলো খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। গ্যাসের ৩৫ কেজির সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। সেগুলো রাখা হচ্ছে চলাচলের রাস্তায়। এতে যানজটও হচ্ছে।
সবুজ বাংলা হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. আলাল বলেন, তিতাসের গ্যাস নেই। নিরুপায় হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। এ জন্য প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার করে নিজেরাও নিরাপত্তা বোধ করেন না।
এভাবে রাস্তার ওপর অরক্ষিতভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে দেখা যায় রাজার দেউড়ি, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া এলাকায়ও।
এ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহমেদ বলেন, আবাসিক এলাকায় অরক্ষিতভাবে বেশি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা খুব বিপজ্জনক। রেগুলেটরগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। বিস্ফোরণ হলে আগুন ছড়িয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব দেখভাল সতর্ক করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।

 

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1491251/