১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৫

বেগুনের সেঞ্চুরি

রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। রোজা শুরুর আগে থেকেই ধাপে ধাপে বাড়ছে বেগুনের দাম। গতকাল বেগুনের দাম ছিল ১০০ টাকা। আরও বেশ কিছু সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এ ছাড়া মসলা, চিনি, মুড়িসহ ইফতারসামগ্রীর দামও বাড়ছে ব্যাপকভাবে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই দাম বাড়ছে। তাদের ওপর নজরদারি করা গেলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের সাত মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এবার রোজায় তদারকি জোরদার করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বাজারদরে তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর শাহআলী, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর টাউন হল, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্যের কেনাবেচা কয়েক গুণ বেড়েছে। ইফতারের অন্যতম উপকরণ লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১০০ ও গোল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। দু'দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আগের সপ্তাহে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি। মিরপুর আনসার ক্যাম্প বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহীন বলেন, বেগুনের চাহিদা বেড়েছে, তাই দাম বাড়ছে।

রমজানের এক সপ্তাহ আগেও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে শসার দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এখন বেশি কেন- জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. মামুন জানান, রোজা শুরু হচ্ছে, তাই দামটা একটু বেশি। পাইকারি বাজার থেকে ৪০ টাকা কেজিতে কিনে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। এত বেশি দামে কেন বিক্রি করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজান মাসে খরচ বেশি, তাই দামও বেশি পড়ছে। এ ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দামও একই হারে বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। তা ছাড়া পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, কাঁকরোল, করলাসহ অন্যান্য সবজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। লেবুর হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানালেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাঁচামালের দাম বাড়ছে। তা ছাড়া বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও সবজি কম আসছে। এ কারণে গত কয়েক দিনে বেশি বেড়ে গেছে।

শুধু কাঁচাবাজারই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ছে। বাজারে পণ্যের দরের তালিকা থাকলেও মানছেন না বিক্রেতারা। গতকাল সিটি করপোরেশনের একটি দল হাতিরপুল কাঁচাবাজার তদারকিতে আসে। এ সময় বিক্রেতারা দরের তালিকা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু অভিযানের আগে ও পরে ঠিকই বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার রোজায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও মহানগর পুলিশ বাজার অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানানো হয়েছে। এসব সংস্থা রোজার শুরু থেকে বাজার তদারকি জোরদার করার কথা বললেও তেমন অভিযান লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

রমজান সামনে রেখে প্রতি কেজি খোলা মুড়ির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এখন সরু মুড়ির কেজি ৭০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ৬০ টাকা ছিল। এ ছাড়া বরিশালের হাতে ভাজা মোটা মুড়ি প্রতি কেজি ১২০ টাকা। আগে দাম ছিল ১০০ টাকা। ইফতার তৈরিতে প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের মসলার ব্যবহার হচ্ছে। নামিদামি বিভিন্ন কোম্পানির তেহারি, হালিম, চটপটি, বোরহানি, মাংস, মাছ, মুরগির আলাদা মসলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব গুঁড়া মসলার দাম কেজি হিসেবে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ৫০ গ্রাম চটপটির মসলা ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ গ্রাম মুরগির মসলা ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। ইফতারসামগ্রীতে বেশি ব্যবহার হয় চিনি। পাইকারিতে চিনির দাম কমে প্রতি কেজি ৫২ টাকা। কিন্তু খুচরায় ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর প্যাকেটজাত চিনির মোড়কে নির্ধারিত মূল্য ৬২ টাকা থাকলেও বিভিন্ন বাজারে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও মুরগি। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে না। গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫২০ ও খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

http://samakal.com/economics/article/18051039/