১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৩

চমৎকার সে চমৎকার!

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

নির্বাচন কমিশন-ইসি বলেছে খুলনা সিটি করপোরশনে চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। সেখানকার ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ২৮৬টি কেন্দ্রে চমৎকার, সুন্দরভাবে উৎসবের আমেজে ভোট হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সচিব বলেন, কয়েকটি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে কিছু গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তা সুরাহা করেছেন। অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন, তারা ভোট কেন্দ্র গিয়ে দেখেন তাদের ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছেÑ এমন অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, এমন হতে পারে ওই ভোটার ওই কেন্দ্রের ভোটার নন বা তার নাম ওই কেন্দ্রে নেই। তবে বিষয়টি তদন্তের পর বলা যাবে। মওলানা ভাসানী বিদ্যাপীট ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ১৫০৩, আর ভোট পড়েছে ১৪৬৭। নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিল ১৫০৮, আর ভোট পড়েছে ১৩৭৮। হাজী শরীয়াতুল্লাহ বিদ্যাপীঠ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ১৮১৭, ভোট দিয়েছেন ১৮১৬, অর্থাৎ এই কেন্দ্রে একজন মাত্র ভোট দেননি। এ তথ্যগুলো নির্বাচন কমিশন সূত্রের। সুতরাং কি অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে তা সহজে অনুমেয়। এ নির্বাচনে শতকরা ৯০ ভাগ ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। যেকোনো বিচারে সেটি অসম্ভব।
এ যেন তোতা পাখির শেখানো বুলি। ছোট সময়ে যে ‘আতা গাছের তোতা পাখির কথা পড়েছি, সে তোতা পাখি অনেক ডাকাডাকিতে কথা বলেনি, আজকের তোতা পাখি অনেক কথা বলছে। যে প্রভুরা তাকে খাইয়ে-দাইয়ে নাদুস-নুদুস করেছে সে কি তাদের প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারে! এখন সে বর্ণনা শুনে বলতেই হবে ‘চমৎকার সে চমৎকার!’ তবে সে চমৎকারিত্বের বেশ কিছু বয়ান পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে একটা শব্দ এখন খুব প্রচলিত তা হচ্ছে ‘স্বআরোপিত সেন্সর’। এ জগতের প্রায় সব পত্র-পত্রিকা ও চ্যানেলগুলো সরকারের প্রশস্তিতে ব্যস্ত। তা না হলে তারা সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। সম্পাদক মুচলেকা না দেয়ায় একটি জনপ্রিয় পত্রিকা কোনো রকম সরকারি আইন-আদেশ ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়। বৈরী সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে তিনটি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়। ছিটেফোঁটা হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখানোর অভিযোগে দু-একটি চ্যানেল নীরবে দখল হয়ে যায়। সে অবস্থায় কার সাহস আছে যে ভিন্ন মত প্রকাশ করবে? মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তারা নাগরিকের অধিকার মনে না করে অনুগ্রহ মনে করেন। একসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যখন দিতে পারি তখন নেয়ার ক্ষমতাও রাখি।’ যা হোক এ অন্ধকারের মধ্যেও কেউ কেউ ছিটেফোঁটা সাহস দেখানোর শক্তি রাখেন। সে সব বর্ণনায় নির্বাচন কমিশনের চমৎকারিত্বের যৎসামান্য চিত্র ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে খুলনার এ নির্বাচনকে ‘গায়েবি ভোটের নয়া মডেল’ বলা হয়েছে। ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা ভোট ডাকাতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়। কয়েক শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে একদল বিএনপি কর্মীকে পশুর মতো কোমরে দড়ি লাগিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপক নির্যাতনের মাধ্যমে গোটা খুলনা শহরে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়। শেষের দিকে প্রচারণা তো দূরের কথা ঘরের বাহির হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও দলীয় সন্ত্রাসীর মতো আচরণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বরং নির্বাচন কমিশন প্রধান বলেছেন, তিনি অভিযোগের সত্যতা পাননি। হয়তো খুলনার জনগণের কপাল মন্দ। তাই কমিশন প্রধান চোখ থাকতেও অন্ধ। নির্বাচন কমিশন শপথ নেয়ার পর বড় বড় কথা বলেছিলেন, মানুষ ভেবেছিল সত্যি সত্যি বুঝি এবার সঠিক ভোট হবে। এখন তাদের থলের বিড়াল ক্রমশ বেরিয়ে পড়ছে। খুলনা সিটি করপোরশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে সেখানে কোনো নির্বাচন কমিশনার সশরীরে উপস্থিত হননি। এর আগে অন্যান্য নির্বাচনে তাদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও এবার অজ্ঞাত কারণে তারা সেখানে যাননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চেহারাও কোথাও এ ক’দিনে প্রদর্শিত হয়নি। হয়তোবা তিনি কৌশলগত কারণে গাঢাকা দিয়েছেন। রাজধানীতে বসে ‘চমৎকার সার্টিফিকেট’ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। দুপুরে যখন পাইকারি কেন্দ্র দখল এবং ভোট ডাকাতি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল তখন আমার এক ছাত্র আমাকে আগাম বলে দেয় যে, ‘স্যার দেখবেন রাতে সরকার ও কমিশন একসাথে বলবে, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কী পরিহাস যে সেরকম কথাই জনগণকে নির্বাচন শেষে শুনতে হয়েছে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপির জন্য সামনে আরো বড় হার অপেক্ষা করছে। তার অর্থ এই হতে পারে যে, আগামী নির্বাচনগুলোয়ও তারা একই ধরনের কারসাজি করার বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলেছেন। এদের রাজনীতির ভাষা শুনলেই বোঝা যায় যে, হিটলার মুসোলিনির প্রেতাত্মা এদের ওপর ভর করেছে। তাদের ভবিষ্যৎ নেতা বলেছেন, ‘বিএনপি পুরোপুুরি একটি অসৎ দল।’ এর আগে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ আছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিএনপি পাগল-উন্মাদের মতো মিথ্যাচার করছে।’ এ দেশের রাজনীতিকদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে অনেক কথা আছে। এখন দেখা যাচ্ছে এরা সব সীমা অতিক্রম করেছে।
এবার নির্বাচন কমিশন কথিত ‘চমৎকার’ নির্বাচনের কিছু বর্ণনা দেয়া যাক। নির্বাচনে অন্তত ১৫০টি কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেয় আওয়ামী ক্যাডাররা। নানা অভিযোগে ২৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ২০২ নাম্বার ইকবাল নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭৭ লবণ চড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হলেও অন্যান্য দখল করা কেন্দ্রের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মজার ব্যাপার, এখানে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের পাশাপাশি প্রিজাইডিং অফিসারকেও বের করে দেয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেকের সমর্থকেরা। এসব কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে নগরীর জেলা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট আলী আকবরকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকু। একই ওয়ার্ডে নতুন বাজার হাজী আবু হানিফ কেরাতুল কুরআন কেন্দ্রে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি। খুলনা জেলা স্কুল কেন্দ্রের আটটি বুথেও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ধানের শীষের কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়নি। নির্বাচনের দিন ৩টার দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর কাশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী ক্যাডাররা দুই রাউন্ড গুলি করে কেন্দ্র দখল করে নেয়। এরপর তারা ব্যালট পেপার সিল মেরে বাক্স ভরে। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৫ নাম্বার ভোট কেন্দ্র সোনাপাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী ক্যাডারদের ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে দেখা যায়। খালিশপুর ওয়ার্ডে জামিয়া তৈইয়্যাবিয়া নূরানি তালিমুল কুরআন মাদরাসা কেন্দ্রে বিএনপির একজন কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। অপরজনকে মারধর করা হয়। অনেক কেন্দ্রে বেলা ২টার দিকে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা যায়। এসব কেন্দ্রে পুলিশ সরকারি বাহিনীর প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করে কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান মেহেদি রিজভী অভিযোগ করেন যে, ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। অন্য কাউন্সিলর প্রার্থী মাজেদা খাতুন বলেন, অভিযোগ করায় আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোট কারচুপি হচ্ছে। কোনো কথাও বলতে দেয়া হচ্ছে না। বেলা ১১টার দিকে রূপসা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ৫ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার উজ্জ্বল কুমার পাল বলেন, ‘হঠাৎ পাঁচ-সাতজন লোক এসে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়। পরে তারা নৌকায় ভোট পেটায়। তার থেকে কেড়ে নেয়া এক শ’ ব্যালট পেপার সিরিয়াল নম্বর ০০৪৫৮৪০১-০০৪৫৮৫০১ পর্যন্ত। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিজাইডিং অফিসার স্বীকার করেন যে, এ কেন্দ্রে ১০০ সন্ত্রাসী ব্যালট পেপারে ছিল মারে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূর নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও আওয়ামী ক্যাডারদের ব্যালটে সিল পেটাতে দেখা যায়। খবর পেয়ে র্যাবের একটি টিম ঘটনা স্থলে উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যায়। অনেক কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্র দখলের বিরুদ্ধে পুলিশি সহযোগিতা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার পুলিশের মারধর সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেটা পুলিশের ব্যাপার। এরকম অসংখ্য ঘটনার সরেজমিন চিত্র প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে।
একটি জনপ্রিয় দৈনিকে একটি মজার ঘটনা ছাপানো হয়েছে। একটি কেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, এস এম মনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি শিশুপুত্রকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন। বাবা ছেলের দু’জনের হাতের আঙ্গুলে ভোট দেয়ার সময় লাগানো অমোচনীয় কালি ছিল। কারণ জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেও ভোট দিয়েছে।’ ছেলে স্থানীয় কিন্ডার গার্ডেনের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র বলে জানালেন তিনি। ছেলেটি বলে, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছি। টিপু আঙ্কেলকে ভোট দিয়েছি।’ উল্লেখ্য, এই টিপু আঙ্কেল হচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবর টিপু। অনেক ভোটকেন্দ্রে প্রকৃত ভোটারেরা এসে দেখেন ভোট দেয়া হয়ে গেছে। ব্যালট পেপার ফুরিয়ে গেছে জানিয়ে তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। সে অপেক্ষা আর কখনো শেষ হয়নি। এখানে আওয়ামী লীগ ব্যতীত সব মতের সব পথের প্রার্থীরা বিরাট ভোট ডাকাতির অভিযোগ করে এর প্রতিকার চেয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে প্রধান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে।
নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে প্রতিভাত হয় যে আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অভিনব কারসাজি ও কারচুপির প্রমাণ দিয়েছে। গেল কয়েক বছর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনে তাদের অনুরূপ কারসাজির কেরামতি ঝরাতে দেখা গেছে। এ অভিনব কারসাজিকে সহজ বাংলায় বলা যায় ‘উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট।’ আগেই শোনা যাচ্ছিল যে, পরিকল্পিত রণকৌশল অনুযায়ী কিছু কেন্দ্রে প্রকৃত ভোট এবং অন্যান্য কেন্দ্রে কৃত্রিম ভোট অনুষ্ঠান করা হবে। বিরোধী পক্ষ যাতে কারচুপি রুখতে না পারে সে জন্য আগেই হামলা, মামলা, ভীতি প্রদর্শন করে মাঠ খালি করা হয়েছে। পরে তারা খালি মাঠে গোল দিয়েছেন। একটি দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থান কৃত্রিমভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। এ অবস্থাকে একটি জনপ্রিয় পত্রিকা ‘পরিবেশ দৃশ্যত শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে’ বলে প্রচার করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘মানুষ এখন স্বস্তিতে-শান্তিতে আছে।’ তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ‘শান্তি আছে, তবে তা কবরের শান্তি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনার এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছিল নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি এসিড টেস্ট। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গোটা জাতির আস্থা বিশ^াস ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এটা আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ^াসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের যে, দাবি জানিয়ে আসছে তা অপরিহার্য। একই সাথে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন কার্যত সরকারের তল্পিবাহক। তা না হলে এত প্রামাণ্য অভিযোগের পর কমিশন অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ‘চমৎকার’ বলে মন্তব্য করতে পারত না। কমিশন সচিব কবি নজরুলের একটি ছড়ার প্রথম লাইন, ‘চমৎকার সে চমৎকার’ শুনিয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় লাইন তিনি শোনাননিÑ আর তা হলো ‘হুজুরের কথায় অমত কার?’ হুজুরের কথার অমত করার তাকত কি তাদের আছে?হ
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/319344