১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১

ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা

একের পর এক ব্যর্থতা তবুও নতুন প্রকল্প

ঢাকার চারটি পয়েন্টে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু * ব্যয় হবে ৪৫ কোটি টাকা * আইটিএস কার্যকরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ও গাড়ি শনাক্তকরণ যন্ত্র বসানো হবে

একের পর এক ব্যর্থতার পরও ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানী ঢাকার চারটি পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করে সফলতা পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ বড় পরিসরে শুরু করা হবে। এরই মধ্যে সে লক্ষ্যে ঢাকার চারটি পয়েন্টে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে অন্তত ৪৫ কোটি টাকা। এর আগে অর্ধডজন প্রকল্পে বিপুল অর্থ খরচেও ন্যূনতম সাফল্য মেলেনি। তারপরও সরকারের এ নতুন প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসন বা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রথমে দরকার সড়ক প্রশস্তকরণ, গণপরিবহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সেসব উদ্যোগ গ্রহণ না করে ট্রাফিক সিগন্যাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনো সাফল্য আসবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকার ৫৯ সড়কের ৭০টি স্পটে আধুনিক ট্রাফিক সিস্টেম গড়ে তুলতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়। ২০১৫ সালে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ঢাকার ৬২ স্পটে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়। এ দুটি প্রকল্পের কোনোটিতে কোনো সাফল্য ধরা দেয়নি। ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ৭০টি স্পটে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিস্টেম চালু করে। এতে খরচ হয় ১৩ কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর পুলিশও ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৭টি বড় এবং ১৪টি ছোট ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করেছে। প্রায় ৪ হাজার পুলিশ সদস্যকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উপযোগী করে গড়ে তুলেছে ডিএমপি। ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রথম ট্রাফিক সিগন্যালিং সিস্টেম চালু করলেও সে উদ্যোগ কয়েক দিনের মধ্যে ব্যর্থ হয়। এরপর পুনরায় সনাতনী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসে ডিএমপি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরের পরীক্ষামূলক আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা হচ্ছে ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস)।’ এই পদ্ধতিতে কোনো গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে, সেটা শনাক্ত করা যাবে। আর সড়কে থাকা পথচারীদের সংখ্যা অনুযায়ী সড়ক পারাপারের সংকেত দেবে আইটিএস। সড়কের কোন অংশে গাড়ির চাপ কেমন, সেসব সংকেতও দেবে আইটিএস। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আর পরীক্ষামূলক এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ।

ডিটিসিএ সংশ্লিষ্টরা জানান, আইটিএস কার্যকর করতে এসব মোড়ে বসানো হবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ও গাড়ি শনাক্তকরণ যন্ত্র। সড়কে গাড়ির সংখ্যা হিসাব করতে পারবে আইটিএস। কোন লেনে গাড়ির চাপ কেমন হবে, তা নির্ণয় করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। কোনো গাড়ি আইন অমান্য করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে সিগন্যাল বাতি। কোন গাড়ি আইন অমান্য করল, সেটিও শনাক্ত করবে আইটিএস। ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সম্ভাব্য প্রকল্প ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে ৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ঋণ অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।

ডিটিসিএ’র পরিচালক সৈয়দ আহম্মদ যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিরসনে কোন সংস্থার প্রকল্পে কী ব্যর্থতা ছিল, সেটা সেসব সংস্থাই ভালো বলতে পারবে। তবে ডিটিসিএ গৃহীত প্রকল্প সর্বাধুনিক। এ পদ্ধতির ট্রাফিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক সুফল পাচ্ছে উন্নত দেশের শহরগুলো। আশা করি, এ ফর্মুলা ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছু পূর্বশর্ত থাকে, যা এখানে নেই। বিআরটিসি প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে। গাড়ির গতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
প্ল্যানার্স ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ে সরকার বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্প নিয়েছে। সেগুলোয় সাফল্য আসেনি।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/49531