১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭

টানা চার দিন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৩০ কিমি. এলাকায় যানজট ছাড়াও দাউদকান্দি থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত সড়কে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট পরিস্থিতি গতকাল বুধবার পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঢাকা-কুমিল্লার ২ ঘণ্টার যাতায়াতে সময় লাগছে ৯-১০ ঘণ্টা। ঢাকামুখী সড়কে পণ্যবাহী যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় যানজট দেখা দিয়েছে বলে হাইওয়ে পুলিশ দাবি করেছে।

জানা যায়, গত রোববার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট শুরু হয়। যানবাহনের চাপে দাউদকান্দির গোমতী সেতু, মুন্সীগঞ্জের মেঘনা ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতুকেন্দ্রিক যানজট ক্রমেই বাড়ছে। গত তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী যানজটের চাপে অনেকটা নাকাল হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। গতকাল মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া থেকে দাউদকান্দির টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাসগুলো পৌঁছতে সময় লেগেছে ৯-১০ ঘণ্টা। ঢাকার এশিয়া এয়ারকনের চালক আবদুল খালেক জানান, এই সড়কে গত ১৯ বছর যাবৎ বাস চালাচ্ছি, টানা তিন দিন এমন বড় যানজট আর দেখিনি। তিনি বলেন, গত রাত পৌনে ৯টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে রওনা করে কুমিল্লায় এসেছি ভোর সোয়া ৫টায়। ব্যক্তিগত প্রাডো জিপ নিয়ে কুমিল্লাগামী আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী মুঠো ফোনে জানান, ভোর ৫টায় ঢাকার বাসা থেকে রওনা দিয়ে মেয়র হানিফ ফাইওভার পেরিয়ে যানজটে আটকে যাই, ৩ ঘণ্টায় কাঁচপুর ব্রিজের নিকট এসেও এক ঘণ্টা বসে থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে সুলতানা কামাল ব্রিজ পাড় হয়ে রূপগঞ্জ দিয়ে কাঁচপুর চৌরাস্তায় যাওয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বেলা সোয়া ১১টায় বাসায় ফিরে যাই।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রহমত উল্লাহ জানান, ঢাকার দিকে যানবাহনের গতি অনেক কম, এ ছাড়াও দিনে পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঢাকায় প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তাই মহাসড়কের ফোর লেনে চলাচলকারী সব যানবাহন তিনটি ব্রিজের নিকট গিয়ে থমকে যায়, এতে যানবাহনের চাপে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হাসান মাহমুদ রিপন, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন দিনের মতো বুধবারও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকা থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত হয়ে এক পাশে রাজধানী যাত্রাবাড়ী অপর পাশে মেঘনা সেতু পার হয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি ছাড়িয়েছে এ যানজট। যানজটের কারণে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। এতে এ মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়তে বাধ্য হন। প্রায় দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্ট এ যানজটের ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের। যানজটে আটকাপড়া যাত্রী সাধারণের অভিযোগ মঙ্গলবার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাঁচপুরে যানজটের পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে বুধবার থেকে যানজট নিরসন হবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আর রইল না। বরং ঘোষণার পরপরই আরো যানজট বেড়ে গেল।

এ দিকে মেঘনা সেতু টোলপ্লাজায় ওজন স্কেলে একটি মালবাহী যানবাহন কমপে ১০-১৫ মিনিট আটকে রাখা হয়। সেখানে ট্রাকচালক ও হেলপারের সাথে টোলপ্লাজা কর্তৃপরে টাকা নিয়ে বাগি¦তণ্ডার চিত্র নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এটি যানজটের একটি কারণ বলে মনে করছেন যাত্রী সাধারণ ও যানবাহনের চালক হেলপাররা। এ ছাড়া টোলপ্লাজায় টোল আদায় ধীরগতি, ওজন স্কেলের অব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা অপর্যাপ্ত ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে যানবাহন চলাচল ও মহাসড়কে সংস্কারকাজ চলার কারণও যানজটের কারণ।

মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে মহাসড়কের মেঘনা সেতু ও কাঁচপুর সেতু এলাকায় এ যানজটের সৃষ্টি। তবে চট্টগ্রামমুখী সড়কে যানজটটি তীব্র আকার ধারণ করছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় জেলাগুলোর দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে পড়ে নানা বিড়ম্বনায় কাটাতে বাধ্য হন। যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করলেও যানজট দূর করতে তারা ব্যর্থ হন। সোনারগাঁওয়ে মেঘনা সেতু এক পাশে কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং কাঁচপুর সেতু অপর পাশে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আটকা পড়ে থাকে যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন। প্রতিটি যানবাহনের চাকা চলছে ধীরগতিতে। যানবাহনের চাকা এক ঘণ্টা পর পর ঘুরছে। কাঁচপুর এলাকা দেখা গেছে, অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে। মহাসড়কের এক পাশে রিকশা করে ও হেঁটে স্থানীয় যাত্রী সাধারণকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী জোনাকী পরিবহনের চালক আসাদুর রহমান আসু জানান, ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে এসে মেঘনা সেতু পর্যন্ত আসতে ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। প্রতিদিনই এ যানজট। দ্রুত এ যানজট নিরসনের প্রয়োজন।

মেঘনা সেতু টোলপ্লাজায় যানজটে আটকে থাকা ট্রাকচালক আজিজ জানান, টোলপ্লাজার কর্মকর্তারা যেকোনো মালবাহী ট্রাক দেখলেই কমপে দুই হাজার টাকা আদায় করেন; কিন্তু রসিদ দেন মাত্র পাঁচ শ’ টাকার। তাদের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/319169