১৬ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৫

ভূমি উন্নয়ন ও সমীক্ষাতেই ২১৮৩ কোটি টাকা

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অংশীদারিত্বে

দাতাসংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে মূল প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূমি তৈরি বা উন্নয়নের ব্যয় সরকাকে নিজের টাকাতেই করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের মহেশখালীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ একর জমি পুরোপুরি প্রকল্পের জন্য প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এরপর জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্বে আসবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যয়বহুল আমদানিকৃত তেল দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। দেশের জিডিপির বৃদ্ধির হার মাঝারি হলেও ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৪৩৩ কিলোওয়াট, যা খুবই নগণ্য। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায়। কিন্তু নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা এখনো বহু দূরের পথ। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) মহেশখালীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
সিপিজিসিবিএল এবং জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের, মধ্যে প্ল্যান্ট তৈরির ব্যাপারে ২০১৭ সালের অক্টোবরে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়। ওই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী উভয়ের ৫০ শতাংশ মালিকানায় সংস্থা দুটি একটি কোম্পানি গঠন করবে। ওই কোম্পানি কারিগরি ও আর্থিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এবং কোম্পানির ইক্যুইটির মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় নির্বাহ করা হবে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, দেশীয় ও আমদানিকৃত কয়লার মাধ্যমে ৫০ শতাংশ, দেশীয় ও আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি আকারে) মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস যেমন, তেল, পারমাণবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানির মাধ্যমে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতসহ স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার ৮২১ মেগাওয়াট। আর বছরে বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী ২০২১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালে চাহিদা হবে ৩৩ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৪ শতাংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক ইউনিট থেকে।

সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানকার তথ্যানুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করতে হবে। মূল প্রকল্পটি সুমিতোমো করপোরেশনের যৌথ মালিকানায় বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ১৫০০ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এখানে একর প্রতি দর হচ্ছে ৬৯ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৮৮ ঘনমিটারে ৮১৬ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় এক হাজার ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। যেখানে চলমান প্রকল্পে ১৪১৯.২৪ একর ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, সেখানে একই এলাকায় বিদ্যুতের অন্য প্রকল্পে ১৫০০ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি অর্থাৎ ৮১৬ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/318893