১৬ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৪

চান্দিনার মাধাইয়া থেকে কাঁচপুর ৪৫ কিলোমিটার যানজট

দেড় ঘণ্টার পথ ৮ ঘণ্টা : এক যাত্রীর হেলিকপ্টার ব্যবহার

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন যন্ত্রণার যাত্রা পথ। অনিশ্চিত এই যাত্রার পথ কখন শেষ হবে কেউ বলতে পারে না। যাত্রী সাধারণ সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে সড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম চলায় ওখানকার যানজট নিত্যদিনের ঘটনা, যা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত গড়িয়েছে। দাউদকান্দি বিশ^রোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ওভারলোড গাড়ি দাউদকান্দি-মেঘনা-গোমতী সেতুতে বিকল হলে এটি সরিয়ে নেয়ার আগেই যানজট অসহনীয় হয়ে ওঠে, যা মঙ্গলবার সারা দিন অব্যাহত ছিল। চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটারে পৌঁছে। যে গাড়ি রাজধানীর সায়েদাবাদে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছার কথা, অথচ এখন সময় লাগছে ৮ ঘণ্টার বেশি। চট্টগ্রাম থেকে দাউদকান্দি সীমানায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছত সে গাড়ি এখন পৌঁছতে সময় লাগছে ১২-১৪ ঘণ্টা। ঢাকায় পৌঁছে ২২ ঘণ্টায়। তবে চট্টগ্রাম-কুমিল্লাগামী যাত্রীদের চেয়ে ঢাকাগামীদের দুর্ভোগ চরমে। পথে অ্যাম্বুলেন্স আটকে থেকে রোগীরা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কেউ কেউ চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছার আগেই মারা যাচ্ছেন। ২২ ঘণ্টার পথে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যানজটে পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ডা: মো: নেছার উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি কুমিল্লার অধিবাসী হলেও শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজে। এলাকায় ফিরতে হলে ফেনী ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যানজটে পড়তে হয় তাকে।

কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো: সোহেল খান সোমবার গৌরীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে ফেরত আসেন। কুমিল্লা নার্সিং ইনস্টিটিউশনের সাবেক অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার, ডা: আবুল খায়ের, ডা: আরিফা আক্তার সোমবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর মহাখালি থেকে রওনা হয়ে রাত দেড়টায় বাসায় পৌঁছেন। সড়কের সব যাত্রীর দুর্ভোগের যন্ত্রণা একই রকম। মঙ্গলবার তিতাস উপজেলা সদরে জনসভায় যোগ দিতে নিজস্ব বাহনে রওনা করেন আওয়ামীলীগ নেত্রী সিআইপি. সেলিমা আহমাদ মেরী। কাঁচপুরে যানজটে পরে তিনি হেলিকপ্টারে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছান। ফেনীতে সড়কের উন্নয়ন, দাউদকান্দিতে ওজন স্কেল ও বিভিন্ন সময় সেতুর ওপর গাড়ি বিকল এবং চৌমুহনী সড়ক মহাসড়কে সংযুক্ত হয়ে গাড়ি প্রবেশ করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ওভারলোড গাড়ি দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতু দিয়ে যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে ওজন স্কেল থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এসব গাড়ি ঢাকার পথে সহজেই চলে যায়। অতিরিক্ত ওজনে গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলে বিকল হয়ে গেলে শেষ রক্ষা নেই মুহুর্তেই লেগে যায় যানজট। যদিও চট্টগ্রামের শেষ প্রান্তে ও কুমিল্লার প্রবেশদ্বারে ওজন স্কেল যন্ত্র থাকলেও ওখানে এসব গাড়ি আটকানো হয় না। এসব গাড়ি ভিড় জমায় দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে পূর্ব দিকে।

যানজটের বিষয়ে গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, তার এলাকা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত যানজট। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওজন স্কেল ও ফেনী থেকে যানজটের বাহনগুলোর কারণেই আমার এলাকায় যানজট। ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ জীবন হাজারী জানান, তার এলাকা চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত যানবাহন থেমে থেমে চলছে। কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি মো: মাহবুবুর রহমান জানান, তার এলাকায় যানজট না থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ফেনীর যানজটে আটকা পড়া গাড়ির কারণে অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে ও যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা রাতদিন কাজ করলেও কখন শেষ হবে যাত্রী দুর্ভোগ ও যানজট কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবারও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও চান্দিনায় তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। যানজট স্থায়ী না হলেও আধা ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে হচ্ছে প্রায় দুই-তিন ঘণ্টায়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে যাত্রীদের নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও সড়কে আটকা পড়েছে অনেক পণ্যবাহী যানবাহন। তবে হাইওয়ে পুলিশ দাবি করেছে, সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও যাত্রীরা জানান, দাউদকান্দির গোমতী সেতুতে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং টোল প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী সড়কের দাউদকান্দির অংশে রোববার রাত থেকে যানজট শুরু হয়। পরে সোমবার রাত-দিন যানজটের ভোগান্তির পর গতকাল মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই যানজট ক্রমেই বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে যানজট দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ অতিক্রম করে চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

দাউদকান্দি গোমতী ব্রিজ থেকে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার ঢাকাগামী সড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে বলে যানবাহনের চালকেরা জানিয়েছেন। এ সময় আধা ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লেগেছে ২-৩ ঘণ্টা। ঢাকাগামী এশিয়া লাইন পরিবহনের যাত্রী মিজানুর রহমান, জানান, বেলা ১টায় দাউদকান্দির গৌরিপুর থেকে টোলপ্লাজায় তিনি পৌঁছেছেন বিকেল সোয়া ৩টায়।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল কালাম আজাদ জানান, দাউদকান্দির টোলপ্লাজায় যানবাহনে ওজন নিয়ন্ত্রণ, একসাথে এত যানবাহনের টোল আদায় এবং সেতুতে যানবাহন চলাচলে একসাথে পাসিং দেয়া যাচ্ছে না, তাই ফোর লেনে চলাচলকারী মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন টোলপ্লাজার কারণে গতি কমে গিয়ে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।

রূপগঞ্জে ১২ কিলোমিটার যানজট
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে ১২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা যানজট থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেখানে যেতে সময় লাগার কথা ২০ মিনিট, সেখানে যেতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।

যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভুলতা ফ্লাইওভার ও রাস্তার নির্মাণকাজ, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা, চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো, হাটবাজারে লোড-আনলোড, অবৈধ ফুটপাথ। নিত্যদিনের এ যানজটে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। গাউছিয়া মার্কেট দেশের একটি বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার। এ মার্কেটে পাইকারি ও খুচরাসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার দোকান রয়েছে। মালামাল আনা-নেয়ার জন্য এখানে প্রতিদিন কয়েক শত গাড়ি রাখা হয়। গাউছিয়া মার্কেটের কোনো নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই চালকদের গাড়ি রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। সড়কে গাড়ি রাখায় রাস্তা অর্ধেকটা দখল হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

এ ছাড়া দেখা গেছে, গাউছিয়া মার্কেটের সামনে কয়েক হাজার ফুটপাথের দোকান রয়েছে। ফুটপাথে দোকান থাকায় মানুষজনকে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেক সময় যাত্রীদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহবুব বলেন, ভুলতা ফ্লাইওভার ও রাস্তার নির্মাণকাজ চলায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে।


 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/318907