১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১৭

হঠাৎ ছিনতাই বাড়ার নেপথ্যে তিন কারণ

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় হঠাৎ ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যের প্রধান তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে গত এক মাসে বেশ কয়েকজন পেশাদার ছিনতাইকারীর জামিনে বেরিয়ে আসা অন্যতম। তারা পুরনো সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে অপরাধজগতে। তাদের হাত ধরে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ১০ দিনের বিশেষ অভিযান। এর ফলে শিগগিরই ছিনতাইকারীদের দাপট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আসলে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটায় তা সবার নজরে এসেছে। একেবারেই অপরাধমুক্ত সমাজ কোথাও নেই। তাই অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জোরদার করা হয়েছে ছিনতাইকারী-সন্ত্রাসী গ্রেফতার অভিযান।

গত এক সপ্তাহে ঢাকা ও সাভারে অন্তত ছয়টি বড় ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নারীসহ নয়জন আহত হন। তবে ছিনতাইয়ে জড়িত কাউকে এখনও গ্রেফতার বা লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জামিনে বের হওয়া পেশাদার ছিনতাইকারীরা এসব ঘটনায় জড়িত বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কাজে পুলিশের ব্যস্ততা। গত এক মাসে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা, পুলিশ সপ্তাহসহ কয়েকটি বড় অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এ কারণে এ সময় সাধারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণমূলক কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। এ সুযোগে তৎপর হয়েছে ছিনতাইকারীরা। আরেকটি কারণ হলো অপরাধের 'সিরিয়াল প্যাটার্ন' বা ক্রমিক ধরন। অর্থাৎ একটি অপরাধ সফলভাবে সংঘটিত

হলে ওই ধরনের আরও ঘটনা পরপর ঘটতে থাকে। কারণ, সেই ঘটনা দেখে অন্য অপরাধীরা উৎসাহিত হয়।

ডিবির উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ছিনতাইকারীদের একই চক্র অথবা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ছোট কয়েকটি চক্র এসব ঘটনায় জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু উঠতি অপরাধী, যাদের হাতে হঠাৎ করেই আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে। সেই অস্ত্র ব্যবহার করে তারা ছিনতাই করছে। তাদের ব্যাপারে অনেক তথ্য মিলেছে। তাই নতুন করে কিছু ঘটানোর আগেই তারা ধরা পড়বে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর ছায়াতদন্ত করছে ডিবি। তদন্তে এরই মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ধানমণ্ডি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছিনতাইকারী চক্রটি দ্রুতই ধরা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, হঠাৎ ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও চাপে রয়েছেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও ছিনতাই ঠেকাতে তৎপর হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ও চেকপোস্ট। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ডিএমপির ৪৯ থানা এলাকায় শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এতে ছিনতাইকারী ছাড়াও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এক সপ্তাহে ছয় ছিনতাই :সর্বশেষ গত শুক্রবার টিকাটুলীতে চলন্ত বাসে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে কলাবাগানে চালককে কুপিয়ে একটি প্রাইভেটকার ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার সকালে নিউমার্কেট এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে ১২ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গুলি করা হয় এক ব্যবসায়ীকে। রোববার উত্তরায় দিনদুপুরে মা-মেয়েকে গুলি করে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারে সোমবার যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে গুলি করে ছয় লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়।
- See more at: http://bangla.samakal.net/2017/02/14/270168#sthash.lYBI1Z9H.dpuf