১৩ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:৩৪

বন্যা ও ভাঙনের শঙ্কায় তিস্তা ধরলা যমুনা পাড়ের লাখো মানুষ

অকাল বর্ষণে উত্তরে নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি

প্রকৃতির চিরাচরিত রীতি অনুযায়ি চলতি বছরের পুরো বৈশাখ মাসে ঝাঁঝালো রোদ্দুর, তীব্র খরতাপের বদলে দেশের উত্তরাঞ্চলে যেভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে, গত ৫০ পঞ্চাশ বছরে এমনটা কখনো ঘটেনি। রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়া আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড বলছে, কেবল বর্ষাকালেই এমন অঝোর বর্ষণ সম্ভব। অসময়ের এই বর্ষণ কেবল শুধু যে দেশের উত্তরেই ঘটেছে তা’নয় একই আবহাওয়া বিরাজ করছে প্রতিবেশি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলেও। আর সে কারণেই ভারত ও নেপাল ও সিকিম সিকিম সন্নিহিত অঞ্চলের হিমালয় পর্বতের গিরি খাদের উৎসে জন্ম নেওয়া তিস্তা, করতোয়া, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রে বাড়তে শুরু করেছে পানি। ৩টি নদীর বাংলাদেশী অংশের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের নদী পাড়ের লাখো মানুষ উৎকন্ঠিত হয়ে উঠেছে নদী ভাঙনের শঙ্কায়! তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ( শনিবার ) পুর্বাভাসে দেখানো হয়েছে, এই মুহুর্তে উত্তরের কোথাও বন্যার শঙ্কা নেই। অকাল বর্ষণে নদ-নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বাড়লেও
যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, কাটাখালি ও করতোয়ার পানি এখনও বিপদ সীমার ৫০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাস্তবে কিন্তু তিস্তা, ধরলা ও ব্রম্ভপুত্র ও যমুনার অন্তত ৫০ টি পয়েন্টে নদীর ভাঙন দৃশ্যমান হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাঘাটা, বগুড়ার সারিয়াকান্দির রহদহ, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলায় এখনই ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্কবোধ করছে নদী পাড়ের মানুষ। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর নদী ভাঙনের তীব্রতা রোধ করা যাচ্ছেনা কিছুতেই। আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট একাধিক স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ি চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হিমালয়ান বেল্টের আবহাওয়া শিতল রয়েছে। তবে যে কোন সময়ে আবহাওয়ার বর্তমান শিতল ভাব কেটে গিয়ে পরিবেশ গরম হয়ে উঠলে ও সেই সাথে নতুন করে বৃষ্টিপাত হলে একই সাথে বরফ গলা ও বৃষ্টির পানি যোগ হয়ে হিমালয়ান বেল্টে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে। আর বাংলাদেশী নদ-নদীর উজানে ভারতীয় অংশে বন্যা দেখা দেওয়া মাত্র তারা ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারাজের গেট খুলে দেবে। ফলে ভাটির বাংলাদেশে দেখা দেবে বিপর্যয়।

গতকাল শনিবার বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার পাউবোর কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, কোথায় বন্যা, কোথায় নদী ভাঙন ? আমাদের ওয়েব সাইটে নজর দিন ওখানেই সব তথ্য পাবেন। বোর্ডের মহা-পরিচালক মাহফুজুর রহমান অবশ্য জানান, উত্তরের নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার অনেকগুলোই বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙন ও বসতি উজাড়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হবে। এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরম ভাঙন প্রবন এলাকা চন্দন বাইশা ইউপির রহদহ গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, ভাঙতে ভাঙতে এই ইউনিয়নের সব শেষ। কেবল এই রহদহই টিকে আছে, বাকিটা সব শেষ। ধুনটের বৈশাখী গ্রামের সাবেক বাসিন্দা ( বর্তমানে বগুড়া শহরে সেটেল্ড ) সানাউল হক বলেছেন, আমাদের স্বপ্নের বৈশাখী গ্রামের সবটাই চলে গেছে যমুনা গর্ভে। আমাদের সমবয়সীরা মারা গেলে আর কেউ নেবেনা ওই গ্রামের নাম। গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি হয়ে বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, চৌহালী, সিরাজগঞ্জ সদরের কত শত গ্রাম জনপদ ফসলী জমি যে বিলিন হয়েছে নদী গর্ভে, কত হাজার মানুষ যে ভিটে মাটি ছাড়া হয়েছে তার একটা সঠিক হিসাব কোথায়ও নেই বলে জানান ভুক্ত ভোগীরা।

https://www.dailyinqilab.com/article/131056