১২ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৬

রোজার অজুহাতে দাম বেড়েছে চিনি পেঁয়াজ মুরগি ও সবজির

পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু সংযমের মাসের অজুহাতে বাজারে নতুন করে বেড়ে গেছে চিনি, পেঁয়াজ, মুরগি এবং সবধরনের সবজির দাম। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।
গতকাল রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৮ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। রমজানে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির দাম গত দুই দিনে বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৫৭ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিদরে চিনি বিক্রি হয়েছিল এক মাস আগেও। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে টমেটো, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কাঁকরোল, করলা, পটোল, ঢেঁড়স, বরবটিসহ সব ধরনের সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে সব সবজির দামই চড়া। সবজির এ চড়া দামের ক্ষেত্রে রোজা কারণ হিসেবে জানিয়েছেন তারা। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ধুন্দলও।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পেঁপের দাম এখনও চড়াই আছে। আগের সপ্তাহের মতোই ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। বাজার ও মানভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁকরোলের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। ৫০ টাকা কেজির নিচে শুধু করলা ও পটোল মিলছে। তবে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, ডিম, রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা সবাই বলছেন এবার মজুদ পর্যাপ্ত আছে। দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। তাহলে হঠাৎ করে চিনি, পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে। এর মূল কারণ সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাজারকে অস্থির করছে। অন্য দিকে যানজট, জাহাজজট, চাঁদাবাজিসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণেও এ দাম বাড়ছে।

গোলাম রহমান বলেন, গত সপ্তাহে বেশ কিছুদিন সরকারি ছুটি ছিল। এটাকে পুঁজি করে আমদানি কম হয়েছে। এ অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু চিনির দাম বাড়াচ্ছে পুরোই সিন্ডিকেট করে। একটি পণ্য ১-২ টাকা বাড়তে পারে। কিন্তু এক দুই দিনের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়া অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, সরকারে উচিত বাজার মনিটনিং করা। একই সাথে যারা অনৈতিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রোজা উপলক্ষে এক সাথে অধিক পরিমাণ পণ্য না কিনে স্বাভাবিক সময়ে যেভাবে পণ্য কেনা হয় সেভাবে কিনতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়াতে পারবে না।

দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসা এখন ব্যবসায়ীরা করছে না। এটা এখন রাজনৈতিক দলের কাছে চলে গেছে। ফলে সব ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আগে একটি দোকানের জন্য ভাড়া দিতে হতো ৩ শ’ থেকে সাড়ে ৩ শ’ টাকা। এখন ৩০ হাজার টাকার বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপরে।
তিনি বলেন, প্যাকেটজাত পণ্য সরাসরি মিল থেকে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যায়। ফলে এর দাম কম বাড়ে। কিন্তু খোলা পণ্য খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে তিন চার হাত বদল হয়। ফলে এর দাম বাড়ে বেশি। আমাদের দেশে সবজি বা কাঁচা পণ্য সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই বেশি উৎপাদন হলেও বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এবার টমেটো বেশি উৎপাদন হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজ নেই। কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ কারণে রমজানে চাহিদা বাড়লে দাম বেড়ে যায়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে এসব পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়ত না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/317728