স্বামী সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাঈল
১২ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:৪২

মালয়েশিয়ার প্রথম নারী উপ-প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকের গল্প

এই নারী চিকিৎসককে চেনেন? উনি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। দৃষ্টি সমস্যায় যারা ভুগেন তাঁদের আরোগ্যের কারিগর তিনি। তার পরিচয় এটুকুতেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না তার পরিচয় আরও অনেক বড়। তিনি হতে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ার প্রথম নারী উপ-প্রধানমন্ত্রী।
তার নাম ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাঈল। তিনি মালয়েশিয়ার বিরোধী দলের কারারুদ্ধ নেতা আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী এবং বর্তমানে দলের সভাপতি।
আনোয়ার ইব্রাহীম রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে জেলে যাওয়ার পরে তিনিই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন।

১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ডা. আযিযাহ ইসমাইল। বিখ্যাত Tunku Kurshiah কলেজে অধ্যায়নের পরে তিনি আয়ারল্যান্ডের রয়াল কলেজ অব সার্জনে পড়তে যান। সেখানে গাইনোকলোজি ও অবসটেট্রিকসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর হিসাবে গোল মেডেল পান।
পরে অপথ্যালমলজিতে বিশেষজ্ঞ হন। সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার পরে দীর্ঘ ১৪ বছর চিকিৎসা সেবা দেন। এরপরে সামাজিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং জাতীয় ক্যান্সার কাউন্সিলের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে তার আগমন অনেকটা হঠাৎ করেই।
১৯৯৮ সালে যখন আনোয়ার ইব্রাহীম গ্রেফতার হন তারপর থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৯ সালে Keadilan Rakyat নামে দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। তার দল পরে মালয়েশিয়ান পিপলস পার্টির সাথে একীভূত হয়। সেখানেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ডাঃ আযিযাহ ইসমাইল প্রথম সংসদ নির্বাচন করেন ১৯৯৯ সালে এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে তার দল মাহাথির মোহাম্মাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে।মূলত আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে দলকে ধরে রাখা, সামাজিকও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বৈষম্য দূর করাই ছিল তার রাজনীতিতে আসার মূল কারণ। পেশা এবং রাজনীতির বাইরে তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তিও। ৬ সন্তানের জননী তিনি। নাতি নাতনি নয়জন। সবারই তার প্রতি মুগ্ধ।

মায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার বড় মেয়ে, যিনি নিজেও একজন সংসদ সদস্য, নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার বলেন, ‘আমার মা জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছেন। তিনি একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। সবকিছুতে তিনি স্রষ্টার ওপর নির্ভর করেন। শত ব্যস্ততার পরেও তিনি পরিবারকে সময় দেন। সপ্তাহে একদিন সন্তান ও নাতি নাতনিদের নিয়ে একসাথে বসেন পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে।’
সবসময় হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করেন আযিযাহ ইসমাইল। আনোয়ার ইব্রাহীম গ্রেফতার হওয়ার পরে ২০০০ সালে একবার এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকরা তাকে বলেন, কষ্টের মাঝেও আপনি দেখছি সবসময় হাসিমুখে। জবাবে তিনি বলেন, আমি কুরআন পড়ি। ওখানে একটা আয়াত আছে যে, আল্লাহ কাউকে তার দায়িত্ত্বের ওপরে কিছু চাপিয়ে দেন না। তাই আমি মনে করি যা কিছুই ঘটুক তার পেছনে কল্যাণ আছে।

হতে পারে আমাদের এই দুঃখ-কষ্ট মালয়েশিয়ার জনগণকে সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে সাহায্য করেছে। এই সংগ্রামী নারীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে লেখা হয়েছে “স্ট্রাগল ফর জাস্টিস: দি স্টোরি অব ডা.ওয়ান আযিযাহ ওয়ান ইসমাইল অব মালয়েশিয়া”নামক বইটি।
এই বইতে উঠে এসেছে আনোয়ার ইব্রাহিম গ্রেফতার হওয়ার পরের কঠিন সময়ে কীভাবে সবকিছু সামাল দেন তার গল্প।একজন সুযোগ্য কন্যা, একজন মমতাময়ী মা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, একজন সমাজসেবক, একজন রাজনীতিবিদ – সবকিছুর সমন্বয় ঘটেছে ৬৫ বছর বয়সী এই নারী চিকিৎসকের জীবনে। অভিনন্দন ডা. ওয়ান আযিযাহ ওয়ান ইসমাইল–মালয়েশিয়ার প্রথম নারী উপপ্রধানমন্ত্রী!
সূত্র: লস এঞ্জেলস টাইমস
লেখক: ডা. মুনিম রেজা, মেডিকেল অফিসার, হাই-টেক মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, ঢাকা

https://www.jugantor.com/doctor-available/47731