১২ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:০৮

আহার-নিদ্রা ছাড়াও মানুষের করণীয় অনেক

ইসমাঈল হোসেন দিনাজী : পৃথিবীতে কোনও কোনও মানুষ মনে হয় খাওয়ার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে। তারা কেবল খায় আর খায়। ভক্ষণসর্বস্ব মানুষদের মাঝেমধ্যে নেশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকোভারি প্রভৃতি টিভি চেনেলে দেখা যায়। এরা কেবল খায় আর খায় এবং মেদবহুল শরীর তৈরি করে। এদের বলে ‘মেন অব লিভ টু ইট’। এমন মানুষ কেবল খাবার জন্য বাঁচে। খাওয়া ব্যতীত তাদের কিছু নেই। এই খাইখাই মানুষ কিন্তু বেশিদিন বাঁচেও না। স্বল্পকালীন জীবন পায় তারা।
জীবনের উদ্দেশ্য কিন্তু খাওয়াদাওয়া নয়। জীবন মানে কর্ম। কর্মহীন মানুষ যেমন বেশিদিন বাঁচে না। খাইখাই মানুষও তেমনই দীর্ঘজীবী হয় না। হতে পারে না। আসলে বেঁচে থাকবার জন্য যারা পরিমিত খায় বা আহারগ্রহণ করে তারাই প্রকৃত মানুষ। এদের বলে ‘মেন অব ইট টু লিভ’। যারা হিসেব করে খায়। খাবার সময় গোগ্রাসে না গিলে পরিমাণমতো খায় এবং পান করে তারা বেঁচে থাকে অনেকদিন। এদের দ্বারা সমাজে অনেক কাজ হয়।

মানুষের দু’টো কান। দু’টো চোখ। দু’টো দু’টো করে হাত-পা। কিন্তু মুখ মাত্র একখানা। দু’খানা নয় কেন? কান ও চোখইবা একটা করে নয় কোন যুক্তিতে? এসব অকারণে? এমনি এমনি? এর পেছনে যুক্তি নেই? কোনও কারণ নেই? নিশ্চয়ই আছে। বর্জ্যনিষ্কাশনের জন্য অবশ্য আরও দু’টো দরোজা রয়েছে। প্রধানত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্বি-অন্ধ্রবিশিষ্ট একটি নাসিকাও আছে মানুষের। তার মানে মানুষের যে দেহবৈশিষ্ট্য এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাও তার কাজকর্ম ও পানাহারের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। যা লাগবে এবং প্রয়োজন তাই দেয়া হয়েছে।
আমরা কি ভেবেছি, আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংখ্যায় কমবেশ কেন? কান দু’টো, চোখ দু’টো, হাত ও পা দু’টো করে কেন? কান শোনার জন্য। চোখ দেখার জন্য। আর মুখ হলো খাবার ও কথা বলবার জন্য। এই যে পার্থক্য, ডাবল ও সিঙ্গেল। এর মূল দর্শন কী মানুষ ভেবেছে কখনও? হয়তো নিশ্চয়ই ভেবেছে। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, এসব খেয়ালখুশিমতো হয়েছে। কিন্তু না, এরও মাহাত্ম্য আছে। রহস্য রয়েছে।

কান ও চোখ দু’টো করে। কিন্তু মুখ একটা। অথচ মুখের কাজ বেশি। তাইনা? হাত-পাও দু’টো করে। কিন্তু কেন?
এই যে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংখ্যার তারতম্য, এর দর্শন বা ফিলোসফি ও রহস্য হচ্ছে: মানুষ শ্রবণ করবে বেশি বেশি। দেখবে বেশি বেশি। কাজ করবে বেশি বেশি। ভ্রমণও করবে বেশি বেশি। তবে আহার করবে কম কম। কথাও বলবে কম কম। শ্রবণে জ্ঞান বাড়ে। দর্শনে অভিজ্ঞতা বাড়ে। ভ্রমণেও তাই। কর্মে আয়ু ও উপার্জন বৃদ্ধি পায়। কম খেলেও তাই। আর কম কথা বলবার অভ্যাস করলে মানুষের বিপদ আপদ কম হয়। তাই মানুষের কোনও কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দু’টো করে হলেও কাজ একটা করেই। মুখ একখানা। কিন্তু কাজ হচ্ছে দু’টো, যাতে কম খায় ও কম কথা বলে। এই দর্শন বা রহস্য মানুষকে সবসময় মনে রাখতে হবে। তাহলে সাফল্য আসবে অনেক এবং সহজে। হয়তো অনেকে বলবেন, এ নিয়ে কথা কেন? খামাখা বিতর্ক সৃষ্টি মাত্র। আল্লাহতায়ালা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই মানুষের হাত-পা, চোখ-কান, মুখ-নাক প্রভৃতি হয়েছে। হ্যাঁ, তাতো নিশ্চয়ই। আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতীত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিশ্চয়ই এমনি এমনি হয়নি।

আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করেছেন। সবকিছুর ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আধিপত্যবিস্তারের সুযোগ দিয়েছেন এই মানুষকে। এর মানে মানুষকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে অনেক। শুধু খেয়েদেয়ে শুয়েশুয়ে ঘুমোবার জন্য মানুষকে এই সুন্দর শস্যশ্যামল ধরণীতে প্রেরণ করা হয়নি। আল্লাহর বান্দারা এতো অগণিত নিয়ামত উপভোগ করবে কিন্তু দায়িত্ব পালন করবে না, তা কি হয়?
মানুষকে পদযুগল দেয়া হয়েছে হাঁটবার জন্য। ভ্রমণের জন্য। পা দিয়ে মানুষ হাঁটবে। দুনিয়া দেখবে দু’চোখ দিয়ে। মানে হাঁটবে আর দেখবে। দেখবে আর হাঁটবে। হাঁটবার আর দেখবার অবশ্য প্রকারভেদ আছে। আগের দিনে পদব্রজেই হাঁটতে হতো। তারপর আসে যানবাহন তথা গাড়িঘোড়া, মটরযান, রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ, রকেট। আজকাল এমনও যানবাহন মানুষ বানিয়ে ফেলেছে যার সাহায্যে চাঁদ ছাড়া আরও দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্রে এমনকি মঙ্গলগ্রহে গিয়েও মানুষ বসতি গড়বার তোড়জোড় শুরু করেছে। হয়তো একদিন তাও সম্ভব হবে। তবে কাজটি ওতো সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না আদৌ।

আজকাল অবশ্য যানবাহন, উড়োজাহাজ, রকেট ইত্যাদি ব্যবহার না করে কম্পিউটারের মতো ক্ষুদ্রযন্ত্রের সুইচ ঘরে বসে টিপলেই সৌরজগত ভ্রমণ করা যায়। এটাও আসলে ভ্রমণই। এর মাধ্যমে যেমন ভ্রমণ হয়। তেমনি অফুরন্ত জ্ঞানার্জনও সম্ভব।
কম্পিউটারের সুইচ টিপে যেমন নায়েগ্রা ওয়াটারফল কিংবা মঙ্গলপৃষ্ঠ ঘুরে আসা যায়, তেমনি অন্তর্চক্ষু ব্যবহার করে সৃষ্টিজগতের অনেক জ্ঞানও অর্জন সম্ভব। অর্থাৎ জ্ঞানার্জন করতে হলে আগে যেমন পদব্রজের ও চর্মচক্ষুর প্রয়োগ বেশি করতে হতো, তেমনি বিজ্ঞানের এ উৎকর্ষের যুগেও মানসিক পা ও চক্ষুর দারুণ ব্যবহার হচ্ছে।

সাধারণ পা, চর্মচক্ষু এবং মানসিক পা ও চোখের ভ্রমণ ও দর্শন নিয়ে কথা বলছিলাম। মানুষের হাত ও কান দু’টো করে। হাত দিয়েই মানুষ সাধারণত কাজ করে। কাজ যতো হয়, উপার্জনও ততো হয়। মানে কাজ বেশি, আয়ও বেশি। কাজের চাবিকাঠি হলো হাত। হাত অচলতো কাজও অচল। অতএব বেশি কাজ সম্পন্ন করতেই মানুষকে দু’টো হাত দেয়া হয়েছে।
যার হাত নেই, তার কাজও নেই। হাত মানে কাজ। কাজ মানেই জীবন। বেশি হাঁটবার জন্য যেমন দু’পা দেয়া হয়েছে, তেমনি বেশি কাজ করে জীবনমান বাড়াতেও ডবল হাত দেয়া হয়েছে মানুষকে। একপা দিয়ে যেমন হাঁটা যায় না, তেমন একহাত দিয়ে কাজও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না। এই হচ্ছে মানুষকে ডবল ডবল হাত, পা, চোখ ও কান দেবার তাৎপর্য। এক কান দিয়ে হয়তো শোনা যায়, একচোখ দিয়ে দেখা যায় কিছুটা। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। যাদের এক কান নেই তারা বোঝেন এতে কত অসুবিধে। যাদের একচোখ নেই তারা বোঝেন চলাফেরায় কী কষ্ট।
হাত-পা থাকলেই কিন্তু হবে না। এদের সহযোগী হিসেবেও দেয়া হয়েছে ২০টি আঙ্গুল। বলুন, আঙ্গুল না হলে কি হাত ও পা দিয়ে কোনও কাজ চলবে? নিশ্চয়ই না। অর্থাৎ হাত ও পায়ের কাজ অনেক। সঙ্গীও একাধিক। একলা হলে চলবে কেন?
মানুষের অনেক বদ অভ্যাস থাকে। কথা বলে বেশি। কাজ করে কম। কথা বেশি বলা মানে বিপদ ডেকে আনা। কথায় আছে না, বোবার শত্রু নেই? একথা আমি অবশ্য পুরোপুরি মানি না। বোবারও শত্রু থাকে। বিপদ ঘটে। বোবার বউ বাগিয়ে নেয় কেউ। বোবা প্রতিবেশীর জায়গা-জমি দখল করতে অনেকেরই বেশ সুবিধে হয়। কারণ তার মুখের ভাষা নেই। মনের কথাগুলো অন্যকে জানাতে তার কষ্ট। কোনওমতে জানাতে সক্ষম হলেও সময় লাগে বেশি। ততক্ষণে শত্রু পগারপার। কাজেই যারা বলেন বোবার শত্রু নেই, তারা ভুল বলেন। আমার একথার পর তাদের নিজেকে শুধরে নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বলছিলাম বোবারও শত্রু থাকে। তবে কম থাকে। আর যারা বেশি বেশি কথা বলে বাজিমাত করতে চায়, তাদের বিপদ হয় বেশি। অবশ্য কখনও সখনও কথায় যে চিড়ে ভেজে না, তা কিন্তু নয়। কথায় চিড়ে ভেজেও। তবে সবসময় নয়। কথা বেশি বলতে বলতে অনেকেই ধরা খায়। মানে নিজের গুমোর নিজেই ফাঁক করে দেয়। বিপদে পড়ে। বেশি কথা বলতে বলতে বেখেয়ালে যা বলবার দরকার নেই তাও বলা হয়ে যায়। বিপদ ঘটে তখনই।

বেশি কথা বলে এমন একজন এক চায়ের স্টলে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ইনিয়েবিনিয়ে নানা কাহিনী বলছে। একপর্যায়ে বলে বসলো, একচোর চুরিকরা মালসহ পালাচ্ছিল। মানুষের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে চোরের কাছ থেকে একটা থলে পড়ে যায়। বাচাল লোকটি বলে, সে নাকি ওই থলে নিয়ে বাসায় গিয়ে দেখে অনেক টাকা। সে টাকা থেকেই নাকি এখন তার অঢেল সম্পদ। জমিজমা। বাড়ি সবকিছু। ওই চায়ের দোকানেই ছিল এক ডিবি পুলিশ। ঘটনাক্রমে ডিবি পুলিশের বাড়িতেই হয়েছিল চুরিটা। ছদ্মবেশধারী ডিবি পুলিশ বাচালের কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেন সবকিছু। ঘটনা প্রায় পঁচিশ বছর আগের। বাচালের এখন কী অবস্থা তা নিশ্চয়ই বুঝতে কারুর অসুবিধে হবার কথা নয়। অথচ লোকটি এসবই বানিয়ে বলছিল নিজের কৃতিত্ব জাহিরের জন্য। এবার যেমন বাচাল, তেমন ক্যাচাল। বেশি কথা বলতে গিয়ে বেচারা গেল ফেঁসে।

একমুখ দিয়েই মানুষ কতো কথা বলে! দু’মুখ হলে আরও কতো সর্বনাশ হতো কে জানে! একমুখ সত্ত্বেও মানুষকে কখনও কখনও দু’মুখো বলা হয়। কেন জানেন? যাদের নীতি ঠিক নেই। সকালে এককথা বলেতো বিকেলে আরেকরকম। মানে কথা ঠিক রাখতে পারে না। এদেরই দু’মুখো বলে। এদের মানুষ ভালো চোখে দেখেন না। সমাজে এরা সাধারণত ঘৃণার পাত্র। কারণ এদের মুখ ঠিক থাকে না। আবার মুখ থেকে যাদের অশ্লীল কথা বা গালমন্দ বেরোয় হরহামেশা তাদেরও মানুষ ভালো চোখে দেখে না। সমাজে তাদের ঠাঁই হয় না। দামও থাকে না। এর মূল কারণ তাদের মুখ। এ মুখই তাদের কাল। নষ্টের গড়া তাদের মুখ। অর্থাৎ মুখ যার ভালো, লোক হিসেবেও সে ভালো। তবে আরেকটি কথা আছে। সেটি হলো: মিষ্টকথা দিয়ে লোক ভুলিয়ে কাজ বাগানোটা কৃতিত্ব হলেও সম্মানজনক কাজ নয়। ওই যে কথায় বলে, দুষ্টলোকের মিষ্টকথা। বেশি মিষ্টিকথার লোকও তেমন সুবিধেজনক নয়।
এ হলো মুখের একটি কাজ তথা কথা বলা নিয়ে। কথা বললেই মানুষ চেনা যায়। হাঁড়ির একদু’টো ভাত টিপে সবভাতের যেমন অবস্থা আন্দাজ করা যায়, তেমনি দু’এক কথা বলেই মানুষের ভেতর চিনে ফেলা যায়। কথা ও কর্ম হচ্ছে মানুষের আইডেন্টিটি। কথায় যেমন মানুষ চেনা যায়, কাজেও তাই। ফলেন পরিচিয়তে। কথা আর কাজ হচ্ছে মানুষের ফল। কথা ও কাজ দেখেই মানুষ চেনা সহজ।
খাদ্যগ্রহণ হচ্ছে মুখের অন্যতম কাজ। মানুষ বেঁচে থাকবার জন্য খায় মুখ দিয়ে। খাওয়ার ধরণও আছে কয়েকরকম। গোগ্রাসে গেলা। হাপুসহুপুস করে খাওয়া। গয়ালের মতো খাওয়া। তবে এবম্বিধ খাওয়া বুদ্ধিমানের খাওয়া নয়। বুদ্ধিমান মানুষ হিসেব করে খায়। কথায় আছে, ‘মানুয় বেঁচে থাকবার জন্য খায়। খাবার জন্য বেঁচে থাকে না।’ আল্লাহর রসুল বলেছেন, পেটের তিনভাগের একভাগ খাবার দিয়ে ভরতে। একভাগ পানি দিয়ে ভরতে। আর বাকি একভাগ খালি রাখতে। এটা হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ। রসুল (স) এর হাদিস আর আধুনিক খাদ্যবিজ্ঞানের মিল দেখছেন? আধুনিক খাদ্যবিজ্ঞান এমনটাই বলে। কিন্তু একশ্রেণির আদম আছে তারা কেবল খাবার জন্যই বেঁচে থাকে। শুধু খাইখাই করে। চর্ব্যচোষ্য যা পায় গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করে। এরা কিন্তু খেয়ে খেয়ে নাদুসনুদুস শরীর বানায়। খায় আর ঘুমোয়। ঘুমোয় আর খায়। কাজকাম করতে তেমন পারে না। খেয়ে খেয়ে নধর দেহটাকে এমন করে স্নেহপদার্থের গোডাউন বানায় যে কাজকাম তাদের দিয়ে হয় না। এরা শেষতক হয় সমাজের বোঝা। অবশ্য বেশিদিন এরা বাঁচেও না। আসলে খাবার জন্য যারা বেঁচে থাকে, তারা বেশিদিন বাঁচে না। বাঁচতে পারে না। অতিরিক্ত খাবারই তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বেশি খেলে মানুষ যেমন কর্মক্ষমতা হারায়, তেমনি জীবনীশক্তিও হারিয়ে বসে। অর্থাৎ মৃত্যুকে আহ্বান করা হয় বেশি খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। মানুষকে ভালোভাবে বেঁচে থেকে কর্মক্ষম থাকতে চাইলে খেতে হবে কম। কাজ করতে হবে বেশি। এই হচ্ছে মানুষের একমুখ থাকবার দর্শন। মানুষ হাঁটবে বেশি। কাজ করবে বেশি। তাই মানুষের দুইপা, দুইহাত। দেখবে বেশি। এজন্য চক্ষুও দুটো। শুনবে বেশি। এজন্য কান দুটো। অথচ মানুষ করে উল্টো। দুইহাতে কাজ করে কম। দুইপায়ে হাঁটে কম। দুইকান দিয়ে শোনে কম। বেশি দেখতেও চায় না দুইচোখ দিয়ে। অথচ একমুখ দিয়ে খেতে চায় বেশি। হালাল-হারাম বাছবিচার নেই। পেলেই খায়। তাও হাপুসহুপুস করে। গোগ্রাসে। এই অতিভোজন, অতিকথন, অতিশয়ন সবই আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির সৃষ্টিদর্শনের পরিপন্থী। খাওয়া ও ঘুম ছাড়া মানুষের আরও অনেক কাজ আছে। এসব কাজ সম্পন্ন না করলে মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। মানুষ যেমন সৃষ্টির সেরা; তেমন দায়িত্বও বড়। কেবল বড় নয়। অনেক বড়। শুধু খেতে আর ঘুমোতে মানুষের সৃষ্টি হয়নি। আরও বহু দায়িত্ব আছে মানুষের। এসব কর্ম সম্পন্ন না করলে মানুষ বলে গণ্য হওয়া মুশকিল।
সমাজকে আবার মানুষের বাসোপযোগী করে তুলতে চাইলে ওপরে আলোচিত মানুষের কার্যক্রম, খাদ্যগ্রহণ, মানুষের সঙ্গে চলাফেরা, ওঠাবসা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন সববিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। হিসেব কষতে হবে সবকিছুর। পুলিশ দিয়ে বা আইন প্রয়োগ করে সবসময় মানুষকে জাগানো সম্ভব নাও হতে পারে। সর্বোপরি মানুষকে জেগে উঠতে হবে অন্তরের অতল গভীর থেকে। শুধু নিজেকে ভালোবাসলেই চলবে না। সমাজের মানুষসহ পরিবেশকে নিজের ভালোবাসার জগতে ঠাঁই দিতে না পারলে সৃষ্টির সেরা বলে দাবি করবার সার্থকতা কোথায়? তাই আসুন আমরা প্রয়োজনমাফিক খাই। বাঁঁচবার জন্য খাই। যতোটুক দরকার ততোটুক খাই। কাজ করি বেশি। দেখি বেশি। ভ্রমণ করি বেশি। শুনি বেশি। কিন্তু কথা বলি কম। কারণ বেশি কথা বললে ভুল হয় বেশি। অনেক সময় বেশি কথায় বিপদ হয়। অনর্থক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বেশি কথা বলাতে।

http://www.dailysangram.com/post/330147