১০ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:০৭

বাড়ছে বজ্রপাতের ভয়াবহতা একদিনে নিহত ২৬ জন

দেশজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ের সঙ্গে চলছে বজ্রপাত। এতে প্রতিদিনই ঘটছে প্রাণহানি।বজ্রপাত এখন ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে। গতকালই দেশের ১৩ জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ২৬ জনের। দগ্ধ হয়েছেন আরও ৩১ জন । এছাড়া বৈশাখ মাসে সারা দেশে বজ্রপাতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৭০জন। গতকাল নিহতদের মধ্যে হবিগঞ্জে ৬, কুমিল্লার মুরাদনগর ও রাজশাহীতে ৩, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, মানিকগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে ২ এবং সিরাজগঞ্জ, নরসিংদীর মনোহরদী, জামালপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ১জন করে মারা গেছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট : হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। এরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকপুর গ্রামের হরিচরণ পালের ছেলে নারায়ণ পাল ও আমড়াখাই গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে আবু তালিব, মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রামচরণ সরকারের ছেলে জহরলাল সরকার, লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের জাহেদ মিয়ার ছেলে চকি মিয়া, সুনামগঞ্জের ধাইপুর গ্রামের বসন্ত দাসের ছেলে স্বপন দাস ও সিরাজগঞ্জের নওসের মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়া। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, বেলা ১১টায় বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই স্বপন দাস মারা যান। প্রায় একই সময়ে মাইচ্ছার বিল হাওরে বজ্রপাতে মারা যান জয়নাল মিয়া। এসময় আহত হন আরও চার ধানকাটা শ্রমিক। তাদের বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন চকি মিয়া। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নবীগঞ্জের বৈলাকপুর হাওরে বজ্রপাতে নারায়ণ পাল ও আবু তালিব নিহত হর। একই সময়ে মাধবপুরের পিয়াইম হাওরে নিহত হন জহরলাল সরকার।

জামালপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চরে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন নাদু জানান। নিহত মো. হাবিবুর রহমান (৪৭) মৌলভীর চরের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। জয়নাল আবেদীন বলেন, হাবিবুর কৃষি শ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই ধান কাটতে যান। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তিনি ধানকাটা বাদ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে বজ্রপাত হলে তিনি সংজ্ঞা হারান। স্থানীয়রা তাকে প্রথমে সানন্দবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের নিকলী ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছে। এরা হলেন নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদপাড়া গ্রামের শাহ জালাল (২৪) ও পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আশুতিয়া গ্রামে দিপালী রানী বর্মণ (৩৫)। শাহ জালাল হাওরের জমি থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে ধান আনার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন জানান। আর বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন দিপালী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ জানান।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছে। এ সময় মুক্তাগাছায় আটজন আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার চর নীলক্ষীয়ায় বজ্রপাতে মারা যান আলাল উদ্দিন (৬০)। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আলাল উদ্দিন গরু আনতে যাচ্ছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা জানান, উপজেলার নতুন বাজার গরুর হাটে বজ্রপাতে আটন আহত হয়। আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও শাল্লায় বজ্রপাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)। ধরমাপাশা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ন‚র ইসলাম জানান, দুপুরে জুয়েল মিয়া বাড়ির পাশে কাইলানী হাওরে ধান কাটতে যায়। ধান কাটার সময়ই বজ্রপাতে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাল্লা থানার ওসি দোলোয়ার হোসেন জানান, আলমগীর মিয়া ট্রলি চালিয়ে ছায়ার হাওরে যাচ্ছিলেন কাটা ধান বাড়িতে আনতে। পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় গতকাল বজ্রপাতে ছাত্র, কৃষকসহ ২জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯ ছাত্র। উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান মানিক জানান, দুপুরে টিফিনের সময়ে ছাত্ররা বিদ্যালয়ের পাশে টিফিন খাচ্ছিল এমন সময়ে বজ্রপাত হয়। তাতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয় এবং ৯ ছাত্র গুরুতর আহত হয়। আহতদেরকে উপজেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বজ্রপাতে নিহত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র উপজেলার তালুকনগর গ্রামের মো. শহীদুলের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলাম অন্তর (১১)। অপরদিকে নিহত কৃষক উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের কৈল হাসাদিয়া গ্রামের মৃত হাফেজ শেখের ছেলে ইয়াকুব আলী শেখ (৫০)। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, বজ্রপাতে নীলফামারীর জলঢাকায় দুইজন নিহত হয়েছে। গতকাল সকালে জেলা জুড়ে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সময় বজ্রপাত তাদের মৃত্যু হয়। এরা হলেন উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রামের আসমা বেগম (৫০) ও কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের নূর আমিন (৪৫)।
বালাগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিপন ও কাঁঠালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তুহিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এদিকে একই সময়ে ডিমলা উপজেলার প‚র্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর গ্রামে বজ্রপাতে পাঁচটি গাভির মৃত্যু হয়েছে।
তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রাজশাহীর তানোরে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। গতকাল সকালে উপজেলার দুবাইল, চক্রতিরা ও বাতাসপুর গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাতাসপুর গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০), দুবইল প‚র্বপাড়ার কিশোর সোহাগ আলী (১৬) ও কলমা ইউনিয়নের চক্রতিরাম গ্রামের বেলাম হেমব্রমের স্ত্রী এলেনা মুরমু (৩৫)। উপজেলা দুর্যোগ। তানোর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শওকাত আলী বলেন, উপজেলার দুই ইউনিয়নের বজ্রপাতে দুইজন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী (ভ‚মি) কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পাঠানো হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের চরে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহর আলী (৩৫) উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। উদাখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র দগ্ধ হয়েছে। সমতুল্লাহ উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আহত শাকিল একই উপজেলার খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।

সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তিলাব গ্রামে বজ্রপাতে কুলফি আক্তার (০৮) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কুলফি ওই গ্রামের শাহ কামালের মেয়ে।
স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীর মনোহরদীতে বজ্রপাতে পিয়ারা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার বড়চাপা ইউনিয়নের চরতারাকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া একই উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের তারাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ঘেঁষে একটি বজ্রপাত হয়। এ সময় বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণির ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। তারাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার মুরাদনগরে পৃথক দু’টি বজ্রপাতের ঘটনায় তিন ধান কাটা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেল অনুমান ৪টায় উপজেলার যাত্রাপুর ও কড়–ইবাড়ী গ্রামে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-যাত্রাপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছলে সেলিম মিয়া (১৭), একই গ্রামের হামিদ মিয়ার ছলে ইমন মিয়া (১৫) ও কড়–ইবাড়ী গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে রুবেল মিয়া (২৭)। নিহতরা সকলেই বাড়ীর পাশের জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরছিল। উক্ত ঘটনায় এলাকা দু’টিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

https://www.dailyinqilab.com/article/130523