১০ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৯

নির্বাচনী বছরের এডিপিতে প্রকল্পের ছড়াছড়ি

অর্থের অপচয় হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রকল্পের ছড়াছড়ি চলছে নতুন এডিপিতে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী এডিপিতে ৩২৯টি বা ৩২ শতাংশ প্রকল্প বেশি থাকছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার নির্বাচনী বরাদ্দ দিয়ে বিশালাকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে সর্বোচ্চ ২৯৮টি প্রকল্প থাকছে। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তবে এডিপির আকার এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এ দিকে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার এই অবাস্তবায়নযোগ্য ও উচ্চাভিলাষী এডিপি নিচ্ছে। মূলত এটি বাস্তবায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভবপর না। সরকারের উচিত বাস্তবসম্মত উন্নয়ন কর্মসূচি নেয়া; যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালে বর্তমান সরকার যখন তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে সে সময় তারাই ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে। ওই অর্থবছরে সরকার ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়। তখন এক হাজার ১৭৬টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব করা হচ্ছে। এবার প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৩৪৬টি প্রকল্প, যেখানে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে রয়েছে এক হাজার ২৭টি প্রকল্প। আর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে ১০৫টি প্রকল্প। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার ১৯ হাজার ৬৬৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেশি।

কমিশন সূত্র বলছে, এডিপিতে স্থানীয় অর্থায়ন ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতেও এবার প্রকল্প থাকছে বেশি। চলমান প্রকল্পের সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রকল্প। ফলে প্রকল্পের সংখ্যা হবে ২১৮টি। এ দিকে আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এডিপির বাস্তবায়ন হার ছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ বছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এই ১০ মাসে ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদের মতে, সামনে নির্বাচন তো আছেই, তা ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, দলীয় নেতাদের সুবিধা দেয়ার জন্য প্রকল্প নেয়া হয়। গতবারের মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হয়নি, যার কারণে এবার বেশি প্রকল্প স্বাভাবিকভাবেই থাকবে। তিনি বলেন, তারা বলবে বড় প্রকল্পগুলো শুরু করেছি শেষ করতে পারিনি। এটা তারা বলবে। তাই এত প্রকল্প। এত প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালক কোথায় পাওয়া যাবে তাই প্রকল্প মনিটরিং করা কঠিন হবে। এ ছাড়া এত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতাও আমাদের আসেনি। তিনি বলেন, এখানে অর্থের অপচয়ই হবে। করের বোঝা বাড়বে। অবকাঠামো ও নদীখনন প্রকল্প শুরু করে স্থগিত হয়ে থাকে। এক বা দুই বছর পর আবার সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে সেই কাজ শুরু করা হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/317182