১০ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৫০

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন

মাহাথিরের জোট বিজয়ী

মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে সর্বশেষ পাওয়া বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট পাকাতান হারাপান বিজয়ী হয়েছে। ২২২টি আসনের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ২২০ আসনের ফলাফলে বিরোধী জোট পেয়েছে ১১২টি আসন। আর প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল পেয়েছে ৭৯টি আসন। এ ছাড়া পাস ১৮ ও অন্যান্য দল ১১টি আসন লাভ করেছে। দ্য স্টার অনলাইন এ খবর জানায়।
দেশটিতে সরকার গঠনে প্রয়োজন ১১২ আসন। স্ট্রেইটস টাইমস গভীর রাতে জানায়, মাহাথির মোহাম্মদ তার নেতৃত্বাধীন জোট ১১২টি আসনে জয়ী হয়েছে বলে দাবি করেন। আজ বৃহস্পতিবার নতুন সরকার শপথ নিতে পারে বলেও তিনি জানান। এ ছাড়া তিনি তিন দিনের সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করেন।
এর আগে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, বেশির ভাগ আসনের ভোট গণনা শেষ হয়েছে।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দৃশ্যত মনে হচ্ছে, আমরা কার্যত ১১২ আসনের টার্গেট অর্জন করেছি। আর বারিসান ন্যাশনালের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা তার অনেক কম। আমাদের আসনসংখ্যা ছোঁয়ার কোনো সম্ভাবনা তাদের নেই।’
মাহাথির আরো বলেন, ‘এটা ভুয়া সংবাদ নয়। তারা অনেক পেছনে। দৃশ্যত সম্ভাবনা হলো তারা সরকার গঠন করছে না। আমাদের বিশ্বাস কিছু বৈঠক, আলোচনা চলছে। আর এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য আসলে কী তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’ এতে বড় বড় কিছু নাম যুক্ত আছে বলেও তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, অনানুষ্ঠানিক ফল অনুযায়ী এবারের ভোটে মতাসীন বারিসান ন্যাশনালের শক্ত ঘাঁটি বিবেচিত বেশ কয়েকটি আসনে জয়লাভ করেছে মাহাথিরের পাকাতান হারাপান। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ২২২ আসনে এবং ১৩ রাজ্যের মধ্যে ১২ রাজ্যের ৫০৫টি আসনে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। একটি রাজ্যে বুধবারই ন্যাশনাল ফ্রন্ট বিজয়ী ঘোষিত হয়েছে। মালয়েশিয়াতে ভোটার দেড় কোটি। এর মধ্যে তিন লাখ পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। ৫ মে তাদের ভোট প্রদান করেছেন।
মালয়েশিয়ায় বুধবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমর্থন নিয়ে জয়ের প্রত্যাশা করছে বিরোধী দল।
মালয়েশিয়ার সাবেক শক্তিশালী নেতা মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী পদে বিরোধী দলের হয়ে লড়াই করায় এই প্রত্যাশা আরো জোরালো হয়। এর আগে মাহাথির মোহাম্মদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার এক সময়ের শত্রু কারারুদ্ধ বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। নাজিবের আর্থিক কেলেঙ্কারি দিন দিন বেড়ে চলায় অবসরে চলে যাওয়া তার এক সময়ের গুরু মাহাথির মোহাম্মদ বিরোধী জোটে ভিড়েছেন। হাত মিলিয়েছেন পুরনো শত্রু আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে।
এ দিকে দলের পরাজয়ের আঁচ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দলীয় কার্যালয়ে না গিয়ে তার সরকারি বাসভবনে ফিরে যান এবং দলের নেতা ও মন্ত্রীদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন বলে স্ট্রেইট টাইমসের খবরে বলা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
মালয়েশিয়ার তিন কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মালয় জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। তারা নির্বাচনে বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই মালয়রাই নাজিবের জোট বারিসান ন্যাশনালের (বিএন) সমর্থনের মূল ভিত্তি।
বিএন দেশটির আদিবাসী চীনা ও আদিবাসী ভারতীয়দের চেয়ে মালয়দের বেশি সুবিধা দেয়াসহ সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু টানা ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করা মাহাথির বিরোধী জোটে ভেড়ায় নাজিবের সমর্থনের ঘাঁটিতে বড়সড় একটা ধাক্কা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ওপর এমনিতেও ােভ জন্মেছে জনগণের।
গত মাসে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, বিএন ৮ শতাংশ মালয় সমর্থন হারিয়েছে। কিন্তু মালয়দের সমর্থনে পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও বিরোধীদল জয়ী হবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না অনেক বিশ্লেষকই।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালয়েশিয়ায় ইউএমএনও নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে কখনোই হারেনি।
ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার মালয়েশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস চিন বলেন, সমর্থন পরিবর্তন করা অনেক েেত্রই কঠিন ঠেকতে পারে অনেক মালয়ের কাছে। এ দিকে গত সোমবার কুয়ালালামপুরের এক হাসপাতাল থেকে এক বিবৃতিতে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য জনগণের আন্দোলনে শামিল হতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি মাহাথিরকে ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্প্রতি তার কাঁধের অপারেশন হয়েছে। কারারুদ্ধ হলেও কয়েক মাস ধরে হাসপাতালেই আছেন আনোয়ার। এ দিকে সোমবার রাতে সরকারপন্থী টেলিভিশনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাজিব রাজাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ঘাঁটি এখনো শক্তিশালী ও অত। এ কারণে আমি আশাবাদী। কারণ আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।’

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/317180