৯ মে ২০১৮, বুধবার, ৮:১৩

ভোটে সাংবাদিকদের কাজের গণ্ডি নির্ধারণ করে দিতে চায় ইসি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুপারিশের প্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্ব পালনের পরিধি নির্ধারণ করে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে গতকাল নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচনের খবর সংগ্রহে বেশ কিছু সুপারিশ গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে উপস্থাপন করে তাদের মতামত চাওয়া হয়। মতামত প্রদানকালে নতুন করে কোনো নীতিমালা প্রস্তুত না করার জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতি নিয়ন্ত্রণমূলক কোনো নীতিমালা চাপিয়ে না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গণমাধ্যমের জন্য নতুন কোনো নীতিমালা করা হচ্ছে না বলে সভায় জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।

তবে ভোটের দিন সংবাদ সংগ্রহ, সরাসরি সমপ্রচার ও ভোটকেন্দ্রে ইসির দেয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান তিনি। খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালার প্রস্তাব আসে পুলিশের পক্ষ থেকে। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসির সংলাপে গণমাধ্যমের কাজের পরিধি নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নির্বাচনে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার, প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহ, প্রকাশ-প্রচার বিষয়ক একটি নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় উপস্থাপিত কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়- প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না। সাংবাদিকরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন। প্রস্তাবিত নীতিমালায় নতুন কিছু প্রস্তাবে সংযোজন করা হয়। তাতে বলা হয়- ভোটদানের ছবি তোলা যাবে না, ভিডিও করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে কর্মরতদের সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না। পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সমপ্রচার করা যাবে না। ভোট গণনার কার্যক্রম সরাসরি সমপ্রচার করা যাবে না এবং একই সঙ্গে একাধিক সাংবাদিক একই কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে জানান, ভোটকে সামনে রেখে আকস্মিকভাবে নীতিমালা প্রণয়নের তৎপরতায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে বেশ সচেতনভাবেই কাজ করছেন। বিদ্যমান আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ হলে নীতিমালার প্রয়োজন পড়বে না। পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মেনে ও সাংবাদিক পরিচয়পত্রের মধ্যে থাকা নির্দেশনা অনুসরণ করেই কাজ করছে গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা না করে অবাধ, সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করার বিষয়ে কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের পরামর্শ দেন তারা। পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, গণমাধ্যমের জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালা করা হচ্ছে না। নতুন কোনো বিধি-নিষেধ আরোপের উদ্দেশ্য আমাদের নেই। গণমাধ্যম আমাদের সহায়ক শক্তি। আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে ভোটের সংবাদ আরো কীভাবে সুচারুভাবে প্রচার করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে কর্মরতদের সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না-এমন বিষয় যুক্ত রাখা হবে না। স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমকর্মীরা কাজ করে, নিজেদের নীতিমালা মেনে কাজ করে। আগামীতে এ কাজ আরো সুন্দর হবে আশা করি। কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি যেন না ঘটে সে বিষয়ে নজর রাখা হবে।

যে কোনো অনিয়মের বিষয়ে কমিশন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান সচিব। গণমাধ্যমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভোটের দিন অনিয়মের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন দেখেই ভোট বন্ধ করে দেয়া হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় সেল থাকে। সেক্ষেত্রে ফল প্রচার ও সুব্যবস্থাপনায় একযোগে কীভাবে কাজ করা যায় তাও দেখা হবে। এ সময় ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান খন্দকার, এসএম আসাদুজ্জামান, ফরহাদ আহাম্মদ খান, উপসচিব ফরহাদ হোসেন ও তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আশিক রহমান, আশিস সৈকত, জ ই মামুন, মোস্তফা ফিরোজ, জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েল, মনজুরুল হক প্রমুখ। এদিকে ভোটের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি। বৈঠক প্রসঙ্গে ইসির উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবগুলো তাদের দেয়া হয়েছে। ফেসবুক বন্ধ করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়ে ইসি মতামত চায়। বিটিআরসি জানিয়েছে, ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি নেই। ইসি যদি নির্দিষ্ট করে অভিযোগ করে তাহলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে বিটিআরসি বলেছে, ভোটের সময় তথ্য আদান প্রদান করতে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া টেলিভিশনগুলো লাইভ সম্প্রচার করে। ফলে ওই সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা সম্ভব না। ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক আলোচনা করেছি। কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এই আলোচনা থেকে। গত ২৭শে এপ্রিল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর আশংকার কথা জানায় ইসি। এ আশংকার ভিত্তিতে ইসি সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দুই সিটি নির্বাচনের আগে তাই বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয় সাংবিধানিক সংস্থাটি। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে ইসি সচিবভোটেও অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। ওই সময় ইসি সচিব বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি। সেজন্য কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা গুজব ছড়ানো বন্ধ করা যায় তা নিয়ে এ মতবিনিময় করা হবে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন বলে মন্ত্তব্য করেন তিনি। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে বসবেন বলে জানান ইসি সচিব।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=116568