৯ মে ২০১৮, বুধবার, ৮:০৯

দেশজুড়ে বাড়ছে খুন আতঙ্কিত মানুষ

লাশ আর লাশ। দেশজুড়ে চলছে খুনের মচ্ছব। হঠাৎ করে বেড়ে গেছে খুনখারাবির ঘটনা। কোনো কোনো লাশের পরিচয় মিললেও অনেকের পরিচয় পর্যন্ত মিলছে না। পার্বত্য অঞ্চলে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ছয় ব্যক্তিকে। বগুড়ায় ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ। দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী, খাল-বিল, মাঠ, ঝোপ-জঙ্গল থেকে এভাবেই লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাইবার ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। যার ফলে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। উপরন্তু হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় মানুষ সহজেই খুনের মতো ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েক মাসের অপরাধচিত্রে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। খুন হওয়াদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। গত কয়েক বছরে খুনের ঘটনা কমে এলেও হঠাৎ করেই খুনের ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।

গত ৪ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জেএসএসের (এমএন লারমা) সহসভাপতি ও নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা। প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। দুর্বৃত্তদের গুলিতে মোটরসাইকেল চালক সংগঠনের নানিয়ারচর উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রূপম চাকমাও গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ৫ মে গুলিতে পাঁচজন নিহত ও ৯ জন আহত হন। শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে খাগড়াছড়ির বেতছড়ি এলাকায় গাড়িবহরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে নিহত হন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা, দলের নেতা সুজন চাকমা, প্রণব চাকমা, সেতু চাকমা ও তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক মো: সজীব। পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়ই এভাবে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে।

গত ৪ মে নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ীতে প্রকাশ্যে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে (৭৫) কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। উপজেলার আলীনগর আড়াকান্দায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সিরাজুল হক বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা সাতবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই এলাকায় প্রতিপক্ষ দু’টি গ্রুপ রয়েছে। যারা বছরের পর বছর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত। তাদের এই কোন্দলে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ৫ মে রাজধানীর দারুস সালাম থানার লালকুঠির এক বাসা থেকে শাহানা আলম খান বিউটি (৪৫) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। বিউটির স্বামী কামাল হোসেন পুলিশের একজন এএসআই।

বগুড়ার শিবগঞ্জের বাদলাদিঘি গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে গত ৭ মে চার যুবকের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। সকালে লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে। কে বা কারা তাদেরকে গলা কেটে হত্যার পর লাশগুলো ওই ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনার পর ওই এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার মানুষ অতীতে কোনো দিন এমন ভয়ানক খুনের ঘটনা দেখেনি।
এ দিকে ৬ মে রাতে ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকায় একই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারুক হাসান ও সাজিয়া বেগম নামের এক কলেজশিক্ষিকার লাশ। পুলিশ সূত্র বলেছে, ফারুকের লাশ পাওয়া যায় ঝুলন্ত অবস্থায়। আর সাজিয়ার ক্ষতবিক্ষত লাশটি পড়েছিল ঘরের মেঝেতে। ফারুকের লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন জাকির হোসেন (২৫) নামের এক যুবক। কয়েক মাস আগেও এই যুবককে স্থানীয় কিছু বখাটে কুপিয়েছিল। সে যাত্রা বেঁচে গেলেও এবার দুবর্ৃৃত্তদের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি জাকির। সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় খুন হন সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভাই দুখু। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও গত দুই সপ্তাহে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিনে গড়ে ১০-১২ জন খুন হচ্ছে। অনেক স্থানেই বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত তিন মাসে গুম হয়েছেন ১৪ জন।
এ দিকে একের পর এক খুনের ব্যাপারে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের কারণেই বেশির ভাগ খুনের ঘটনা ঘটছে। সেসব ঘটনায় মামলা দায়ের হচ্ছে এবং অপরাধীরা ধরাও পড়ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/316922