বদিউল আলম মজুমদার; সাখাওয়াত হোসেন
৯ মে ২০১৮, বুধবার, ৮:০৮

ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনি মোকাবেলায় অনীহা

একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথেই সিইসির নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠেÑ সচিব পদে দায়িত্ব পালন না করার, জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকার। তার কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে নিজের নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে সাফাই গান তিনি। আশ্বাস দেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করণীয়, সাংবিধানিকভাবে ও আইনকানুনের ভিত্তিতে সব কিছুই করবে তার কমিশন। কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার ঘোষণা দেন তিনি।
কিন্তু দায়িত্ব পালনের মাত্র দেড় বছর পার হতে না হতেই একের পর এক নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পরও কার্যকর কোনো ভূমিকা না নেয়া, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না করা, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কারণে সীমানা পুনর্নির্ধারণ থেকে পিছু হটা এবং বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি সত্ত্বেও ভোটে সেনা মোতায়েন না করা, ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যর্থতা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাসহ বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কার স্বার্থে কাজ করছে; তারা জনস্বার্থে কাজ করছে কি নাÑ এ নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ আছে। ঢাকা সিটির নির্বাচন নিয়ে নাটক হলো। আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে। এগুলো তো জনস্বার্থের পরিপন্থী। এর মাধ্যমে ভোটারদের ভোটাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। জনগণ দারুণভাবে সংক্ষুব্ধ। এ ছাড়াও সীমানা পুনর্নির্ধারণ, সিটি করপোরেশনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ এবং নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই না করে ইসি প্রমাণ করেছে তারা জনস্বার্থে কাজ করছে না। তারা বিশেষ পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করছেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশের পর নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে আমি শিথিলতা লক্ষ করেছি। এর আগেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একই ঘটনা ঘটেছিল। গাজীপুর তারই কার্বন কপি।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট স্থগিত করলেও তার ওপর তো অ্যাপিলেট ডিভিশন আছেন; চেম্বার জজ আছেন। সেখানে যেতে পারে ইসি। কিন্তু ইসি তা করছে না। তারা বলছে, রায়ের লিখিত কপি না এলে কিছু করবে না। কিন্তু লিখিত কপি না এলেও আপনারা (ইসি) রায়ের কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের সব কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও কোনো অগ্রগতি দেখছি না। এতে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি ইসি। গত বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশের কথা থাকলেও তা করেছে ৩০ এপ্রিল। ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরে শুনানি শেষে ২৫টির পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সংসদীয় সীমানা বিশ্লেষণ করে দেখে গেছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা খসড়া তালিকাতে থাকলেও পরে তাতে পরিবর্তন আনা হয়নি। এ কারেণে বিএনপি ইসির নতুন সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।

গত ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচটি আইন ও ৯টি বিধিমালার সংস্কার চূড়ান্তের কথা থাকলেও এগুলোর কোনোটি এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়াও নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংলাপ শেষ করতে পারলেও সময়মতো এর সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি। গত ডিসেম্বরের মধ্যে সংলাপের সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও তা শেষ করতে এপ্রিল পার হয়ে যায়।

এ দিকে নির্বাচনে গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্ব পালনের পরিধি নির্ধারণ করে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় সোস্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি ও অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এ লক্ষ্যে গতকাল নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সোস্যাল মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে তারা।
গণমাধ্যম কর্মীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে জানান, ভোটকে সামনে রেখে আকস্মিকভাবে নীতিমালা প্রণয়নের তৎপরতায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/316924