৮ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:৫৮

পাহাড়ে আরো হানাহানির শঙ্কা

মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাঙ্গামাটিতে ৬ খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অপর দুই পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে। বর্তমানে এসব এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। উপজাতি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র গ্রুপগুলো যেকোনো সময় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। মূলত প্রতিশোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। পার্বত্য জেলা নিয়ে কাজ করা শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে সামনে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে তৎপরতা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাও নজরদারি বাড়িয়েছে পাহাড়ে।
৩রা মে জেএসএস (সংস্কার) সমর্থিত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় আরো ৫ জনকে। নিহতরা হলেন- ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, জেএসএস (সংস্কার) এর সদস্য প্রিয় চাকমা, সুজন চাকমা, সেতু লাল চাকমা, বাঙালি মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদার। ওই ঘটনায় ৮ জন গুরুতর আহত হন। আরো খুনের শঙ্কা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মূলত খুন হয়েছেন দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ওই ঘটনার পর অপর শীর্ষ নেতারা নিজেদের নিরাপত্তা বাড়িয়েছেন। কেউ বা আবার নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় হানাহানির শিকার হতে পারেন পাহাড়ি সংগঠনের মাঠের নেতাকর্মীরা।

শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ও এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গ্রুপগুলোর মধ্যে হানাহানির শঙ্কা বেড়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আরো সংঘাতের শঙ্কার কারণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের ১৫ই নভেম্বর ইউপিডিএফ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর মূলত পাহাড়ে হানাহানি বেড়ে যায়। এর মূল উদ্দেশ্য চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার আর জাতীয় নির্বাচন। আগামী নির্বাচনে রাঙামাটিতে জেএসএস সংস্কার নেতা শক্তিমান চাকমা সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। এই আঙ্গিকে বিচার করলে নানিয়ারচরের আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল রহস্য সমাধানে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। নানিয়ারচরের সামপ্রতিক দুই হত্যাকাণ্ডের পরপরই জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের পক্ষ থেকে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপকে দায়ী করা হয়। পার্বত্য জেলা নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন জানিয়েছে, পাহাড়ে কোনো রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটলে টক-শো থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কেউ কেউ বলে থাকেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। আসলে এটা ঠিক নয়। শান্তিচুক্তি ছিল দুই পক্ষের চুক্তি। তাই এটা বাস্তবায়ন শুধু সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বলা হয়, জেএসএস অস্ত্র জমা দিয়েছে। তাহলে এখন যেসব অস্ত্র দিয়ে খুনোখুনি হচ্ছে এসব কোথা থেকে এলো। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার রাউন্ড গোলাগুলি হচ্ছে। উদ্ধার হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। এসবের আসলে সোর্স কি? কারা জড়িত? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর সন্তু লারমার কাছে নেই। আর এ ধরনের প্রশ্নও তাকে কেউ কখনও করে না। তাহলে কি তারা সব অস্ত্র জমা দেয়নি? সংগঠনগুলো জানিয়েছে, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পার্বত্য এলাকায় রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করতে হবে। যুক্তি তুলে ধরে তারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের সময় এখানে প্রার্থী পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ইউপিডিএফ, জেএসএস রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত করেনি। তারা আসলে পার্বত্য এলাকায় বিরাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়ানো না হলে এখানে টার্গেট কিলিং চলতেই থাকবে। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর কাছে তিন হাজারের বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে এম-১৬ (আমেরিকা ও চাইনিজ), একে-৪৭, একে-২২, লাইট মেশিনগান, এম-৪, একে-৫৬, একে-৮১, এম-৩৩সহ স্নাইপার রাইফেলও রয়েছে। সংগঠনগুলোতে রয়েছে আর্ম ক্যাডার ও সেমি আর্ম ক্যাডার বাহিনী। এর মধ্যে আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। অন্যদিকে সেমি আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সেমি আর্ম ক্যাডাররা অস্ত্র প্রশিক্ষিত। তারা ভবিষ্যতে সংগঠনগুলোর জন্য কাজে লাগে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীসহ অন্য বাহিনীর ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেয়ার পর থেকে পার্বত্য জেলাগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পার্বত্য চুক্তির আগে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের ৫৫২টি ক্যাম্প ছিল। বর্তমানে রয়েছে ২১৮টি ক্যাম্প।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=116431