৮ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:৫৩

সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার

গত তিন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে

আগামী অর্থবছরে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকেই ঋণ নেয়া হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেশি। ব্যয়বহুল এ ঋণের কারণে সরকারকে আগামী অর্থবছরে বেশ মোটা অঙ্কের সুদের দায়ও বহন করতে হবে। আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই সরকারকে মোট ব্যয় করতে হবে প্রায় অর্ধলক্ষ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক কমে গেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র সুদের হারের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক মাস খানেক আগেও দীর্ঘমেয়াদি আমানতের জন্য সুদ দিয়েছে সর্Ÿোচ্চ ৭ শতাংশ। অন্য দিকে, সঞ্চয়পত্রে প্রকারভেদে মুনাফার হার রয়েছে ১০ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ। তাই নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছেন বেশি। তাই প্রতি বছর বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ সেই লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেটিও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি, সে বছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকায়।
একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে বলে ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাপক হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৪ হাজার ১০১ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ চলতি অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান অর্থবছরের ৯ মাসে ৬০ হাজার ১২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তবে সরকার এ সময়ে এ খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে এ খাত থেকে গোটা অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অথচ ৯ মাসেই সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৪১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুধু মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু মার্চ মাসেই সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের আমানতের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে গেছে। আমরা মনে করছি, আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে যদি সঞ্চয়পত্রে সুদের হার হ্রাস করা হয়, তবে এর বিক্রি আরো কমে যাবে। তাই আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/316660