৮ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:৫১

দেশজুড়ে আবারো ব্যাপক ধরপাকড়

দিশেহারা বিরোধী নেতাকর্মীরা

দেশজুড়ে আবারো শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। গ্রেফতারের হাত থেকে শীর্ষ নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা। সামাজিক বৈঠক থেকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে অনেককে। ফলে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

নিজ নিজ এলাকায় টিকতে না পেরে অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় এসে আশ্রয় নিলে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে তাদেরও ধরা হচ্ছে। ফলে দেশের কোনো অঞ্চলই এখন আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জন্য নিরাপদ নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আছে। তাদের আন অফিসিয়াল ভাষ্য মতে ‘মাটির গর্তে লুকালেও তাদের বের করে আনা হবে’। এই অবস্থান অপরাধীদের ক্ষেত্রে তেমন একটা কার্যকর না হলেও বিরোধী মতাদর্শের রাজনীতিকদের জন্য প্রযোজ্য।

খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা যখন অনেকটা উজ্জীবিত ঠিক সেই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশজুড়ে আবারো শুরু করেছেন গ্রেফতার অভিযান। প্রতিদিনই দেশের কোথাও-না-কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। গত ২ মে খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এই ঘটনার প্রতিবাদে খুলনার মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনে সব ধরনের প্রচারকার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। মঞ্জু অভিযোগ করেন, নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও পুলিশ দুর্ব্যবহার করছে। গাজীপুরেও ধানের শীষের পক্ষে প্রচারাভিযানে অংশ নেয়ায় অনেক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ আছে। গত শুক্রবার রাতে টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেটে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আফজাল হোসাইন নামে এক বিএনপি নেতাকে আটক করে সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতে টঙ্গী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আকবর হোসেন ফারুক এবং গাজীপুর সদরের বিএনপির কানাইয়া গ্রাম কমিটির সভাপতি ও গ্রাম কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সোবহানকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক টিভি নাট্য অভিনেতা আশরাফ হোসেন টুলু ও জেলা ছাত্রদল নেতা উজ্জ্বলকে জয়দেবপুর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারের ভয়ে এলাকার অনেক নেতা পার্শ্ববর্তী উত্তরা এলাকায় আশ্রয় নিলে সেখান থেকেও তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল উচ্চ আদালত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করা হয়। গাজীপুরের বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতাকর্মী বলেছেন, এখন তারা আরো আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। গতকাল অনেকেই বাড়িতে ছিলেন না। তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। রাতে টঙ্গী-গাজীপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এভাবেই নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠান থেকেও অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। গত ২৯ এপ্রিল বাংলামোটরের এমন এক অনুষ্ঠান থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গেছে সেখানে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান চলছিল। গত শুক্রবার উত্তরার এক সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করা হয় অন্তত পাঁচজনকে। একটি সামাজিক বিচার নিয়ে তারা এক অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন। গ্রেফতারের পর ২০১৫ সালের একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে তাদেরই গ্রেফতার করা হয়। তারা কোন দল বা জোটের নেতাকর্মী কি না পুলিশ তা দেখে না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/316631