৬ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:৫১

রমযানের আগেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী

চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও রমযানের আগেই দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিঁয়াজ, চিনি এবং ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত । অথচ রমযানকে সামনে রেখে এসব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিলো কয়েক মাস আগেই। এমনকি বন্দর থেকে খালাস হয়ে অধিকাংশ পণ্য ব্যবসায়ীদের গুদামে পর্যন্ত চলে এসেছে। এ অবস্থায় দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছে সাধারণ ভোক্তারা।
দেশের সবচে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার ঢাকার কাওরান বাজারে গত সপ্তাহে পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। মে মাসের শুরুতে পিঁয়াজরে দাম ছিলো ২৫ টাকারও কম। শুধু পিঁয়াজ নয়, দাম বেড়েছে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে চিনির দাম কেজি প্রতি ৩ টাকা বেড়েছে হয়েছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।
কাওরান বাজার ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিবছর রমযানের আগে মিলগুলোর সরবরাহটা স্বাভাবিক থাকে না। আর যদি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে তবে চিনির দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।'তবে বোতলজাত তেলের দাম না বাড়লেও ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে বেড়ে গেছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি সয়াবিনের ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, আসছে রমযান মাসে যদি আমরা ঠিক মতো মাল পাই, তাহলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।' কিন্তু বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। রমযান শুরুর এখনও প্রায় দুই সপ্তাহ বাকী কিন্তু বাজারের মূল্য বাড়ছে হুহু করে। অথচ গত মার্চ মাস থেকেই দেশে আসতে শুরু করে রমযানকে সামনে রেখে খোলা এল সি’র সবধরনের আমদানি পণ্য।
এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা রোধে দ্রুত বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছে ভোক্তাদের অনেকেই। ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী রমযানে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল এবং পুরো মাসে দেড় লাখ টন ছোলার চাহিদা রয়েছে।
মাছের বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কই, পাঙ্গাস, রুই, কাতলার পাশাপাশি চিংড়ি, ইলিশ, লইট্টা মাছও কিনছেন অনেকে। অন্যদিকে একেবারে উল্টো চিত্র গোশতের বাজারে। ক্রেতা নেই বললেই চলে। হাতেগোনা যে কয়েকজন আছেন তারা গোশতের দামদর জেনে নিচ্ছেন।
বাজারের এই চিত্র দেখে বুঝতে বাকি থাকে না শুক্রবারের গোশতের বাজার কিছুটা চড়া। ঢাকার হাতিরপুল ও যাত্রাবাড়ি এবং কাওরান বাজারের কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকায়। যা দিন চারেক আগেও বিক্রি হয়েছিল ৪৫০টাকা কেজিতে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজার তদারকির অভাবে সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো গরুর গোশতের দাম বাড়াচ্ছে। আরও দাম বাড়চ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগপ্রণ্যের। ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ বাজার মনিটরিং করতে আসেনি। তারও প্রমাণ মিলেছে সিটি করপোরেসন ও টিসিবি বাজার মূল্য প্রতিদিন আপডেট করার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিনের বাজার মূল্য আপডেট করা হচ্ছে না যে কারণে অসাদু ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়ি পণ্য বিক্রি করছে।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে গোশত কিনতে এসেছিলেন আবুল কালাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। দোকানি গরুর গোশতের দাম প্রতিকেজি ৫২০ টাকা চাওয়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, মাত্র চারদিন আগে ৪৫০ টাকায় গরুর গোশত নিয়ে গেছি। এ সময় দোকানি মো.ইউনূচ মিয়া বলেন , ‘এই দাম আর কমবে না স্যার। বরং বাড়তেই থাকবে।’ সামনে রমযান তাই দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শুধু গরুর গোশত নয়, ছাগলের গোশত ও দেশী মুরগির দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ছাগলের গোশত ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭৫০ টাকায়। দেশী মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। এছাড়া ফার্মের মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫৫টাকায়।
বাজারে গত দু’সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা মাছের দাম এ সপ্তাহে এসে কিছুটা কমেছে। আকারভেদে চিংড়ি মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতলা মাছ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে থেকে ৩৫০ টাকায়। এছাড়া ইলিশ মাছ কেজিতে ৬০০ ও ৮০০ টাকা, রুই মাছ (মিয়ানমার) ২৫০ টাকা, কই মাছ ফার্মের ১৫০ টাকা ও পাঙ্গাস মাছ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গুইল্লা মাছ কেজিতে ৬০০ টাকা ও বাটা মাছ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কাওরান বাজারের মাছের দোকানি মো.জাফর বলেন, সামনে রমযানের কারণে দেশি মাছের দাম বাড়তে থাকবে। সিন্ডেিকট বাজারের মাছ মওজুত করছে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে প্রায় অর্ধেক। গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া বাজারে কাকরোল, বেগুন ৫০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, পটল ৪০, লাউ ৪০, আলু ১৮, টমেটো ৩০ থেকে ৫০ ও তিত করলা ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বরবটি ও শসা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
কাওরান বাজারে সবজির দোকানি আবুল কাশেম বলেন, ‘সবজির সরবরাহ মোটামুটি ভাল তাই দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সামনে রমযানের কারণে বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমতে পারে। আমদানি করা রসুনের দাম আরেক দফা কমলেও বেড়েছে আলু, দেশি রসুন ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। পাইকারদের অভিযোগ, রমযানে দাম বাড়ার আশঙ্কায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে সব ধরনের ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দাম বেড়েছে ছোলার ।
রাজধানীর পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ চালের দাম স্বাভাবিক থাকলেও কিছুটা দাম বেড়েছে নাজিরশাইলের। আর অন্যান্য চালের মধ্যে প্রতিকেজি মিনিকেট ৫০ থেকে ৬০, আটাশ ৪৫ থেকে ৫০ এবং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি।
বাজারে সব ধরনের ডালের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতিকেজি দেশি মসুর ৯০, খেসারি ৬০, মুগ ৭০ থেকে ৮৫ এবং ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। আদা ৯০ টাকা কেজি, রসুন ৭০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারদের অভিযোগ, রমযানে দাম বাড়ার আশঙ্কায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে সব ধরনের ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দাম বেড়েছে চিনির। তবে দাম বেড়েছে দেশি রসুন ও ভারতীয় পেঁয়াজের। আসন্ন রমযানে চিনি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কাওরান বাজারে বিভিন্ন ধরনরে শাক বিক্রি হচ্ছে কম দামে, পুইশাক আটিঁ ২৫ টাকা, পাটশাক আটিঁ ৬ টাকা, লালশাক, পালংশাক ও কলমিশাক ১০ থেকে ১৫ টাকা করে আটিঁ বিক্রি হচ্ছে।
জালি কুমড়া ৩০ টাকা পিস এবং লাউ ৪০ টাকা পিস করে বিক্রি হচ্ছে লেবু ১৫ থেকে ২০ টাকা হালি করে বিক্রি হচ্ছে। আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি, পাতা কপি ২০ থেকে ৩৫ টাকা পিস, কচুর লতা ৫০ টাকা কেজি, ঝিংগা ৬০ টাকা কেজি, চিচিঙগা ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৫০ টাকা কেজি, শিম ৬০ টাকা কেজি, পেপেঁ ৫০ টাকা কেজি, গাজর ৫০ টাকা কেজি, ডিম হালি লাল ২৪ ও সাদা ২০ টাকা হালি করে বিক্রি হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/329352-