৬ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:৫১

নগরবাসীর ভোগান্তি কমেনি এতটুকুও

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তিন বছর পার হয়েছে। এ সময়ে দুই মেয়র কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। যানজট কমাতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সড়ক-ফুটপাথ থেকে অবৈধ দখলদার সরাতে চালানো হয় অভিযান। পরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে নতুন করে চার হাজার বাস নামানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও আনিসুল হকের মৃত্যুতে সে প্রকল্প এখন হিমঘরে। পুরনো সড়কবাতি পরিবর্তন করে উজ্জ্বল এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে। অলিগলিতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। ময়লা আবর্জনা সরাতে ওয়েস্টবিন, এসটিএস, ফেন্সিংসহ বেশ কিছু কার্যক্রম চলছে। খেলার মাঠ, পার্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আধুনিক গণশৌচাগার। তার পরও নগরবাসীর ভোগান্তি কমেনি। সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় রাজধানীজুড়েই খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাস্তা-ফুটপাথ। এ কারণে গ্রীষ্ম মওসুমে ধুলার যন্ত্রণা আর একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা ও কাদাপানিতে একাকার অবস্থা। নগরবাসীর অভিমত, মেয়র আসে মেয়র যায়। বছরের পর বছর ধরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয় এ প্রকল্প সে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এ জন্য সারা বছরই খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। তখন স্বপ্ন দেখানো হয় এই তো আর কিছু দিন পরই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সমাধান আর হয় না। একটি সমস্যা শেষ হলেই শুরু হয় আরেকটি সমস্যা। 

ডিএসসিসি : ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ওই বছরের ৬ মে তিনি মেয়র হিসেবে শপথ নেন। মেয়র হওয়ার আগে অনেক আশা ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। গত তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে মেয়র সাঈদ খোকন নাগরিকবান্ধব কয়েক ডজন উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু উদ্যোগ সফল হলেও অনেকগুলো সম্পূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারছেন না নগরবাসী। এ সময়ে অবৈধ বিলবোর্ড ব্যানার উচ্ছেদ, রাস্তার পাশে ওয়েস্ট বিন স্থাপন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিনামূল্যে ওয়াইফাই চালু, বর্জ্য ফেলার জন্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ, বুড়িগঙ্গার আধুনিকায়ন, বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান, এলইডি বাতি ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অটোমেশন পদ্ধতি চালু, পার্ক উন্নয়ন, আধুনিক টয়লেট নির্মাণ, খেলার মাঠ, ফুটপাথ-ফুটওভারব্রিজের আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান। কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুর অপোয়। তার পরও দৃশ্যমান বড় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি ডিএসসিসি এলাকায়। পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি এখনো চালু হয়নি। মূল সড়ক থেকে অনেক অলিগলির ভাঙাচোরা। বিভিন্ন স্থানে বর্জ্যরে স্তূপ। সাম্প্রতিক সময়ে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন নগরবাসী। এডিস মশার যন্ত্রণায় গত বছর চিকুনগুনিয়া মহামারী আকার ধারণ করে। জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাননি নগরবাসী। ঠিকাদারি কাজের েেত্র অস্বচ্ছতার অভিযোগ এখনো রয়েছে। বিলের জন্য নগর ভবনে ঠিকাদারদের প্রায়ই দেন-দরবার করতে দেখা যায়। ফান্ডে চলছে আর্থিক সঙ্কট। তিন বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় নগরবাসী অতিষ্ঠ। বিভিন্ন সড়কে ফুটপাথ দখল করে হকারদের দৌরাত্ম্য প্রকট। অবৈধ বিলবোর্ড তেমন না থাকলেও ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ে অহরহ। রাজপথ দখল করে অবৈধ পার্কিংও চলছে। খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তির কোনো অবসান তো হয়নি। বরং চার-মাস ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঘিঞ্জি এলাকাগুলোর আধুনিকায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। নাগরিক সেবাপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি। পাবলিক টয়লেট, খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, কাঁচাবাজারের স্বল্পতার মতো অনেক সমস্যা তো রয়েছেই। কিছু আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হলেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ওয়েস্ট বিনগুলো তো ফুটপাথ থেকে প্রায় হাওয়াই হয়ে গেছে। বিনামূল্যের ওয়াইফাইগুলোও ঠিকমতো কাজ করে না। অনেক স্থানে ভালো ফুটপাথ ভাঙা হলেও অন্য দিকে নজরই পড়ছে না কর্তৃপরে। ডিএসসিসির মার্কেটগুলোতে কেবলই অবৈধ দোকানপাটের ছড়াছড়ি। এমনকি পার্কিং স্পেসকেও দোকান বানিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও সন্তোষজনক নয়।
এসব প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, শান্তিনগর এলাকায় গত ৩০ বছর ধরে মানুষ ভোগান্তি পেয়েছেন। এ বছর সেখানে কোনো জলাবদ্ধতা নেই। নাজিমউদ্দিন রোডে কাজ চলছে। এটি শেষ হলে এলাকাবাসীর ৩০-৪০ বছরের কষ্টের অবসান হবে। তবে নতুন করে কিছু এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এর মধ্যে মতিঝিল, আরামবাগ, রাজারবাগ অন্যতম। এগুলো নিরসনের জন্যও চেষ্টা চলছে।
সাঈদ খোকন বলেন, মূলত বর্ষাজনিত পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসার। তবে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিছু কাজ করে থাকি।
বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নয়নকাজের কারণে কিছু ভোগান্তি হচ্ছে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে গেলে মানুষ সুফল পেতে শুরু করবেন। নগরীর ৮৫ ভাগ রাস্তা ভালো রয়েছে বলে তিনি জানান। রাস্তা-ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাত-আট মাস নগরী হকারমুক্ত ছিল। কিন্তু সামনে রমজান। এ জন্য এখন আর কোনো অভিযান চালানো হচ্ছে না।
মেয়র বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মোবাইল ও সিম কার্ড দেয়া হয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ভোরবেলা রাস্তায় থাকেন। এমনকি সর্বোচ্চসংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গিনেজ বুকে রেকর্ডও করেছে ডিএসসিসি। কয়েকটি এসটিএস নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটির নির্মাণকাজ চলছে। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও উন্নতি হয়েছে। নীলতে থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ককে মডেল সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ৩৬ হাজার এলইডি বাতি লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। জল-সবুজে ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ১২টি খেলার মাঠের আধুনিকায়ন চলছে। চলতি বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য ৩০টা বাস বে ও ইন্টারসেকশনের কাজ চলছে। স্বচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণ করা হয়েছে। ডিএসসিসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আটটি ইউনিয়নে ৭৩৪ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। আরো ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে।
তিনি বলেন, নগরীর পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ জন্য সময়ও আছে। আশা করি একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দিতে পারব।
ডিএনসিসি : গুলশান-বারিধারায় বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাস ফুটপাথের জায়গা দখল করে সেখানে নিরাপত্তা চৌকি গড়ে তুলেছিল। নিরাপত্তার নামে কংক্রিটের ব্লক বসানোয় ফুটপাথে পথচারী চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেসব নিরাপত্তা ব্লক অপসারণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে থাকা প্রভাবশালী দেশগুলোর দূতাবাসের গড়ে তোলা তথাকথিত নিরাপত্তা স্থাপনা অপসারণ করা সম্ভব হবে- নগরবাসী তা কল্পনাও করতে পারেননি। এখন এসব এলাকার ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছেন নগরবাসী। কাজটি করেছিলেন মরহুম মেয়র আনিসুল হক। ঠিক এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর তেজগাঁওয়ে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে অবরুদ্ধ হন আনিসুল হক। শেষ পর্যন্ত তেজগাঁও সাত রাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত মূল সড়কের ওপরের অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে সমর্থ হন।
পরে সড়কটির আধুনিকায়ন করে দৃষ্টিনন্দন সড়ক বিভাজক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আনিসুল হকের সেই অর্জন ম্লান হতে বসেছে। মাঝে মধ্যেই সেখানে আবারো রাস্তা দখল করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে থাকতে দেখা যায়। আনিসুল হক গাবতলী, মোহাম্মদপুরসহ আরো ১০টি জায়গায় গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু সেগুলোও এখন বাস্তবায়ন করা হয় না ঠিকমতো।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ডিএনসিসির আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। পরে ৬ মে এই দিনে মেয়র হিসেবে শপথ নেন ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আনিসুল হক। কিন্তু গত বছরের ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীা-নিরীায় তার মস্তিষ্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস রোগ ধরা পড়ে। গত ৩০ নভেম্বর লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। আনিসুল হকের অনুপস্থিতিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওসমান গণিকে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। ১৪ নভেম্বর তিনি প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
আনিসুল হকের আড়াই বছর ও মো: ওসমান গনির ছয় মাসের দায়িত্ব পালনের সময়কাল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আনিসুল হকের নেয়া উদ্যোগগুলোরই বর্তমানে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নে চলছে ধীরগতি। দাফতরিক কাজেও সৃষ্টি হয়েছে গতিহীনতা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও এখন ঢিলেমি ভাব। ঠিকাদারেরা যথাসময়ে বিল পাচ্ছেন না। ঠিকাদারি কাজের স্ব^চ্ছতা ও মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা উঠছে। নাগরিক সেবাদান কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। টেবিলে টেবিলে জমছে ফাইলের স্তূপ। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত কেউ দিতে পারছেন না। বিভিন্ন কাজেও নানা দফতর থেকে বাধা আসছে। অসাধু কর্মকর্তারা এত দিন কিছুটা দমে থাকলেও আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছেন। আমিনবাজার-শ্যামলী সড়ককে পার্কিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও সেখানে হরহামেশাই পার্কিং করতে দেখা যাচ্ছে। আবদুল্লাহপুর থেকে তেজগাঁও সাত রাস্তা পর্যন্ত আটটি ইউটার্নের নির্মাণকাজ সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধায় বন্ধ আছে। চার হাজার বাস নামানোর বিষয়টি থমকে গেছে। কয়েকটি কোম্পানির আওতায় এনে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কাওরানবাজারকে মহাখালীতে স্থান্তরের কোনো কার্যকর পদপে নেই। মহাখালীতে বিশাল বহুতল ডিএনসিসি মার্কেটটি বছরের পর বছর ফাঁকা পড়ে আছে। বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে নির্মিত ফুডকোর্টের অবস্থাও একই রকম। ফুটওভার ব্রিজগুলোতে যে সবুজায়ন করা হয়েছিল, সেই গাছগুলোর প্রায় সবই মরে গেছে। ঠিকাদারেরা যাতে ঠিকমতো বিল পান, এ জন্য প্রত্যেকটি বিলের চেক কর্মচারীদের দিয়ে ঠিকাদারদের অফিসে পাঠিয়ে দেয়ার রীতি বন্ধ হয়ে গেছে। বিলবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুনের দৌরাত্ম্য বন্ধ হলেও বর্তমানে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটাতে দেখা যাচ্ছে। বর্জ্যব্যবস্থাপনার চেয়ে বিউটিফিকেশনের দিকে কর্তৃপরে এখন নজর বেশি। ফলে নগরীর অনেক স্থানেই এখন বর্জ্যরে স্তূপ চোখে পড়ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে আনিসুল হক যে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন, সেটা এখন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে ডিএনসিসি। জলাবদ্ধতা নিরসনে আনিসুল হক তিনটি পৃথক জলাধার তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেগুলোর কাজও এগিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ঢিলেমি ভাব। বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়েও বাড়ছে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি। দাফতরিক কাজেও দেখা দিয়েছে গতিহীনতা। ফুটপাথে হকারদের দৌরাত্ম্য আরো বেড়েছে। ফলে পথ চলতে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মিরপুর ও মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ চলছে অনেকটা ধীরগতিতে। মিরপুরের অনেক এলাকা খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। ওইসব এলাকায় নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত নেই। বনানী কবরস্থানের দ্বিতীয়পর্যায়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। অনেক এলাকার রাস্তাঘাটও বর্তমানে ভাঙাচোরা। ঠিকাদারি কাজে আবারো প্রকৌশলীদের অসাধুতা ও মানহীনতার প্রশ্ন উঠেছে। মশার যন্ত্রণায় আগের মতোই ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এসব প্রসঙ্গে প্যানেল মেয়র মো: ওসমান গণি বলেন, একটি কাজ করে সেটা রা করা আরো কঠিন। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্ত দখলমুক্ত রাখতে তিনি নিয়মতি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর কাজগুলো বুঝতে তার দুই মাস সময় লেগে গেছে। এ সময়ে ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। প্রত্যেকটি কাজেই গতি ফিরে এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কমিটি হয়েছে। কমিটিকে ডিএনসিসি সহযোগিতা করছে। এই কমিটিও রাজধানীর জলাবদ্ধতার সমস্যা গুরুত্ব সহকারে দেখবে। মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট ও বনানীর ফুডকোর্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু কাজ অতীতে ইমোশনালি করা হয়েছে বাস্তবতা পর্যালোচনা না করে। মহাখালীতে তো যমুনা ফিউচার পার্কের মতো মার্কেট চলবে না। কালাচাঁদপুরে আবার ফিউচার পার্কের মতো মার্কেট করলেও চলবে না। ফুডকোর্টের স্থলে বহুতল মার্কেট করে ডিএনসিসি রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারত। তবে এগুলোর দামও বেশি ধরা হয়েছে। বাস্তবসম্মত দাম ধরলে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট এত দিন বরাদ্দ দেয়া হয়ে যেত। এখন সেটাই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শেরেবাংলা নগর থেকে পল্লবী পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা সম্পর্কে বলেন, ওখানে মেট্রো রেল হচ্ছে। মেট্রো রেল প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব মেট্রো রেল কর্তৃপরে।
তিনি বলেন, আনিসুল হক অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে একটা চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে ডিএনসিসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে। সেখানে পরিকল্পনা রয়েছে প্রত্যেকটি ওয়ার্ড আধুনিকভাবে সজ্জিত করার। সেখানে যাতে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, মসজিদ, পার্ক, বর্জ্য রাখার স্থান (এসটিএস) রাখা যায় সেভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/316058