৬ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:৫০

ডেমু ট্রেন নিয়ে বিপাকে রেলপথ মন্ত্রণালয়

রুট পুনর্বিবেচনা ও ওয়ার্কশপ তৈরির পরামর্শ

চীনে নির্মিত ডেমু ট্রেন দ্রুত থামানো, চালু করা ও গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিন ঘুরানোর প্রয়োজন পড়ে না বিধায় বিশ্বে এ ট্রেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু পাঁচ বছর পর বাংলাদেশে এই ট্রেন পরিচালনা ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মহাবিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়। শুধু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নন, এই ট্রেনে ভ্রমণকারী বিভিন্ন রুটের ট্রেন যাত্রীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্রেনের রুট পুনর্বিবেচনা করা ছাড়াও ঢাকার অদূরে একটি ওয়ার্কশপ তৈরির প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী মো: মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে ডেমু ট্রেন সচল রাখার করণীয় নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডেমু ট্রেন নিয়ে পরিচালক (এমন্ডসিপি) একটি সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভায় মন্ত্রী বলেন, ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে ডেমু ট্রেন ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু ডেমু ট্রেন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যথাযথ সার্ভিস দিতে না পারায় দেশের পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ডেমু ট্রেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে না পারলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœœ হবে।
সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) বলেন, জিওবি অর্থায়নে চীন থেকে ২০১৩ সালে ২০ সেট ডেমু ক্রয় করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ডেমুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান অবকাঠামোতে এটি রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়। ডেমুর ইঞ্জিন কোচের নীচে থাকায় সাধারণ ডিজেল ওয়ার্কশপে এটি মেরামত করা কষ্টসাধ্য। তাই ডেমু ট্রেন মেরামতের জন্য একটি নতুন ওয়ার্কশপ প্রয়োজন। ওয়ার্কশপটি নারায়ণগঞ্জে তৈরির জন্য তিনি প্রস্তাব দেন। একই সাথে ডেমু ট্রেনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাংসান রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (টিআরসি) চায়না এরই মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করেছে এবং ওয়ারেন্টি পিরিয়ডও শেষ হয়েছে। ডেমুর ধারণা নতুন হওয়ায় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কৌশলে দক্ষতা অর্জনের জন্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। যেহেতু এই ট্রেনের খুচরা যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রাংশের ক্যাটালগ এখনো পাওয়া যায়নি তাই এর জন্য চায়নার সাথে চুক্তি করা যেতে পারে বলে তিনি তার মতামত তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান বলেন, ২০ সেট ডেমু ট্রেন দিয়ে ঢাকায় ১০ সেট, চট্টগ্রামে আট সেট ও লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে দুই সেট দেয়া হয়। পুরো ২০ সেটই চালানো হচ্ছে। ফলে বিশ্রামে রাখার মতো ট্রেন থাকছে না। ডেমু ট্রেন স্বল্প দূরত্বে চলাচল উপযোগী হলেও দূরপাল্লার রুটে ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে চলাচল করছে। ডেমু ট্রেনের বিদ্যমান রুটগুলো পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ডেমু ট্রেন যথাযথভাবে পরিচালিত হয়নি। ডেমু স্বল্প দূরত্বে চলাচল করলে এত সমস্যা হতো না। তিনি বলেন, ২০ কিলোমিটারের বেশি দূূরত্বে ট্রেন চলতে পারবে না, আর ২০ সেটের মধ্যে ১৬ সেটের বেশি চালানো যাবে না। সচিব তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, মেরামত ও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডেমু ট্রেন সচল রেখে পরিচালনা করা দরকার।
পাশাপাশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ দিকে ডেমু ট্রেন ক্রয় করার পর থেকেই যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে, ডেমু ট্রেনে উঠতে সমস্যা। দুই ডেমুর জানালা নামানো যায় না। এতে গরমের দিনে যাত্রীরা ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যান। এ ছাড়া রয়েছে আরো নানা সমস্যা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ডেমু ট্রেন কেনার সময় তারা সব কিছু বুঝে নেয়নি। দুই বছর পর একই জিনিসের জন্য তারা নতুন করে আবার টাকা খরচ করবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/315995