৫ মে ২০১৮, শনিবার, ১০:০২

রোজা না আসতেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া

পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারদের জিম্মি করে মুনাফা লুটে নিতে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনো কারণ ছাড়াই তারা বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু দিন থেকেই ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় চাল, চিনি, মুরগি, সবজি প্রভৃতির দাম। নতুন করে দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদার। দেশী ও ভারতীয় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম চলতি সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে দাম বেড়েছে আদা-রসুনেরও। এ নিয়ে সাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। টিসিবির পক্ষ থেকে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এতেও তেমন প্রভাব পড়ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা চীনা রসুন কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশী রসুনের দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখন প্রতি কেজি দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে এবার পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন হওয়ার পরও ভরা মওসুমে তিন কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথমত, বছরজুড়ে সংরণের জন্য স্থানীয় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুদ করায় সৃষ্ট বাড়তি চাহিদা। দ্বিতীয়ত, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ নিয়ে চাষিরা হাটে না আসায় সরবরাহে টান পড়া। তৃতীয়ত, ভারতে দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব। তবে রমজান উপলক্ষে বাড়তি মুনাফা তুলে নিতে যারা পেঁয়াজ মজুদ করেছিল তারাই যে বর্তমানে বাজারের মূল নিয়ন্ত্রক সে বিষয়ে দ্বিমত করেননি কোনো ব্যবসায়ীই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে এক লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে তিন লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। বাড়তি এ জোগান সত্ত্বেও বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা আড়তদারদের দায়ী করলেও বাস্তবতা হলো, পাইকারির চেয়ে খুচরা দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ জন্য ব্যবসায়ীদের অতিলোভী মানসিকতাকেই দায়ী করেন বিশ্লেষকেরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা ও খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ দিকে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আগামীকাল রোববার থেকে ডাল, তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এরই মধ্যে এগুলোর দর নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। এবার মাঝারি দানার মসুর ডাল ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা। বর্তমানে বাজারে এ মানের ডাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এবার রমজানে টিসিবির প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮৫ ও প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায় পাওয়া যাবে। ছোলা ৭০ ও খেজুর ১২০ টাকা কেজিতে খোলাবাজারে বিক্রি করা হবে। সারা দেশের ১৮৪ ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হবে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৩২ স্থানে, চট্টগ্রামের ১০ স্থানে, বিভাগীয় শহরের পাঁচ ও জেলা শহরে দুই ট্রাকে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া ১০টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র ও দুই হজার ৭৮৪ ডিলারের কাছে পাওয়া যাবে এসব পণ্য।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/315667