৪ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩০

এসএসসিতে ১২ বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস : বাতিল হচ্ছে না পরীক্ষা

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সমাপ্ত এসএসসি পরীায় ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ে শুধু এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) অংশের ‘খ’ সেট প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে সৃজনশীল অংশের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ৪-৫ হাজার পরীক্ষার্থী পেয়ে থাকতে পারে। এ জন্য ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মতামত ও সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি।
কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পরে তাদের ফল বাতিলসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, বিষয়টি খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তবে চিহ্নিত করা গেলে অবশ্যই আগামীতে তাদের সনদ বাতিল করা যেতে পারে। বিষয়টিকে মনিটরিং করা হবে কি না জানতে চাইলে তারা দু’জনই এড়িয়ে যান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল বিকেলে শিা মন্ত্রণালয়ে কমিটির প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রতিবেদনের সংপ্তি তথ্য তুলে ধরেন।
এ দিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা ও মনিটরিং কমিটির সভা হয়। সভায় আগামীতে যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে দ্রুত ও ত্বরিত বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) বাদ দেয়া এবং যত্রতত্র পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদন না দেয়া। বিদ্যমান অরক্ষিত কেন্দ্র বাতিল করা। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কোজ গ্রুপে এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এই গ্রুপের মাধ্যমে বড়জোর সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার পরীার্থী পরীা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রশ্ন পেয়ে থাকতে পারে। এ জন্য কমিটি ২০ লাখ পরীার্থীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে পরীা বাতিল করে আবার পরীা না নেয়ার সুপারিশ করে। এ ব্যাপারে শিামন্ত্রী বলেন, ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর আবার পরীা নিয়ে তাদের অভিভাবকদেরও বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্মুক্তভাবে কোনো পরীার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু কোজ গ্রুপের মাধ্যমে নগণ্যসংখ্যক পরীার্থী পরীা শুরুর ২০ মিনিট আগে বা কাছাকাছি সময়ে প্রশ্ন পেয়েছে। এ ধরনের কোজ গ্রুপের একেকটিতে ১০ থেকে ১০০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। তবে পরীা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। ফলে ১৫-২০ মিনিটি আগে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও এতে সামগ্রিকভাবে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। পরীায় এমসিকিউ অংশে মোট চার সেট প্রশ্ন থাকে। এমসিকিউ অংশের মোট নম্বর ৩০।

উল্লেখ্য, গত ১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসির লিখিত পরীা অনুষ্ঠিত হয়। পরীা চলাকালে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও সরকারি দলে এবং জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির মুখে মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত মার্চ মাসেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এবং তা প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য, আগামী ৬ মে এ পরীার ফল প্রকাশ করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/315421