৪ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২৮

ইসলামে শ্রমিকের প্রতি আচরণ ও অধিকার

ড. মোবারক হোসাইন : ॥ ২ ॥ মানুষের প্রয়োজনীয় কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। মুচি জুতা সেলাই করেন, নাপিত চুল কাটেন, দর্জি কাপড় সেলাই করেন, ধোপা কাপড় পরিষ্কার করেন, জেলে মাছ ধরেন, ফেরিওয়ালা জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাঁতী কাপড় বুনেন, কুমার পাতিল বানান, নৌকার মাঝি মানুষ পারাপার করেন। এসব কাজ এতই জরুরি যে, কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজগুলো করতে হবে। কেউ যদি এসব কাজ করতে এগিয়ে না আসতেন, তা হলে মানবজীবন অচল হয়ে পড়ত। কোনো কাজই নগণ্য নয় এবং যারা এসব কাজ করেন, তারাও হীন বা ঘৃণ্য নন। ইসলামী আদর্শের কাছে মনিব-গোলাম, বড়-ছোট, আমির-গরিব সবাই সমান। ইসলামী সমাজে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সমাজপতি, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদের আলাদাভাবে মর্যাদার একক অধিকারী হওয়ার সুযোগ নেই। অধীনস্থরাও ইনসাফের দাবি করার অধিকার রাখে। একমাত্র ইসলামই শ্রমিকদের সর্বাধিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার কথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম, অন্য কোনো মানবরচিত মতবাদ বা আদর্শ ইসলামের মতো শ্রমিকদের অধিকার দিতে পারে না। ইসলামের দাবি অনুযায়ী, গোলামের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না।
শ্রমিকদের সাথে আচরণ
‘মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব। তার প্রধান দুটি সত্তা রয়েছে- একটি বাহ্যিক ও অন্যটি অন্তর্গত। শিক্ষা, জ্ঞানার্জন, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সে তার এই দু’টি সত্তার উন্মেষ ঘটিয়ে থাকে। এ দু’টি একটি অপরটির পরিপূরক হলেও অন্তর্গত সত্তাটি সমাজের মানুষের ভাল-মন্দ পরিচয় নির্ভর করে প্রধানত তার বাহ্যিক সত্তার ওপর। আর এই বাহ্যিক স্তরটি প্রকাশিত হয় অন্যের প্রতি তার আচরণ ও সৌজন্য প্রকাশের মাধ্যমে। কথায় আছ, “Courtesy pays a lot, but costs nothing”। সাধারণত মানুষ তার কার্যাবলি সম্পাদনের সময় যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তাকেই আমরা আচরণ বলে থাকি। অর্থাৎ কাজের দ্বারা মানুষের আচরণ প্রকাশ পায়। তাই বলা যায় ‘Behavior is a way of action’ অর্থাৎ আচরণ হলো কার্যের একটি পন্থা বা উপায়। মানুষ মনে মনে যা চিন্তা করে এবং যেসব কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় তাকেই আচরণ বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভালো-মন্দ পরিচয় নির্ভর করে সুন্দর আচরণের ওপর। শ্রমিকদের সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে কাজের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। ইসলাম সাধ্যানুযায়ী ও রুচি অনুযায়ী কাজ করার জন্য মানুষকে জন্মগত অধিকার দিয়েছে।
হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, “অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবশে করবে না।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্) রাসূলুল্লাহ্ (সা) মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন কর্মচারী, শ্রমিক ও অধীনস্থদের সাথে সন্তান-সন্ততির ন্যায় আচরণ করে এবং তাদের মান-সম্মানের কথা স্মরণ রাখে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, “তাদের এভাবে সম্মান করবে যেভাবে নিজের সন্তানদের কারো এবং তাদেরকে সে খাবার দিবে যা তোমরা নিজেরা খাও।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্) নবী (সা) আরো বলেন, ‘তোমরা অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোন কষ্ট দিবে না। তোমরা কি জান না, তোমাদের ন্যায় তাদেরও একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্ট বোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন কর না।’

রাসূল (সা) এরশাদ করেন, তোমাদের চাকর-চাকরানি ও দাস-দাসীরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ভাই। তাদের আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, সে তার ভাইকে যেন তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়, তাকে পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ যেন তার ওপর না চাপায়। একান্ত যদি চাপানো হয়, তবে তা সমাধান করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করা উচিত। (বুখারি ও মুসলিম) পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, আমি তোমার ওপর কোনোরূপ কঠোরতা করতে চাই না, কোনো কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজ তোমার ওপর চাপাতেও চাই না, আল্লাহ চাহে তো তুমি আমাকে সদাচারী হিসেবেই দেখতে পাবে। (সূরা কাসাস : ২৭)

সু-আচরণ সম্পর্কে জনৈক ফ্রায়া স্টার্ক বলেন, “সু-আচার আচরণ অঙ্কশাস্ত্রের শূন্যের মতো, আপাতদৃষ্টিতে এর গুরুত্ব ততটা বোঝা যায় না, কিন্তু সবকিছুর সাথে এর সংমিশ্রণ বিরাট মূল্য পরিবর্ধন করে।” বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কবরিহ খবরিহ মানুষের আচরণ সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রচার করেছেন। তাঁর মান অনুসারে তত্ত্বটি K. Lewin মডেল নামে পরিচিত। তিনি এখানে ব্যক্তির আচরণকে ব্যক্তির কার্যকলাপের প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মূলত মানুষের আচরণ তার পারিপাশির্^ক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। ব্যক্তি তার পরিবেশের সাথে সঙ্গতি রেখে তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কার্য সম্পাদনে প্রবৃত্ত হয় যা তার আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ লাভ করে। K. Lewin একটি গাণিতিক ফাংশনের মাধ্যমে তার মডেলটি উপস্থাপন করেছেন। মডেলটি- B=F (P*E)। যেখানে, B= Behavior, F= Function, P= Person, E= Environment
মহানবী (সা) শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য এক ঐতিহাসিক ভাষণে অনুপম শ্রমনীতি দিয়ে গেছেন- “হে মানবজাতি, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি যে, গোলামদের সাথে ভালো আচরণ করবে এবং তাদের কোন কষ্ট দিবে না। তোমরা কি জান না, তাদের একটি অন্তর আছে যা কষ্ট পেলে ব্যথা পায় এবং আরাম পেলে আনন্দিত হয়। তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা তাদেরকে হীন মনে কর এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর না! এটা কি জাহিলিয়াতের যুগের মানসিকতা নয়। অবশ্যই এটা জুলুম এবং বেইনসাফি।”

শ্রমের গুরুত্ব
শ্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক বিষয়। আর তা হলো, মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূলগণের প্রায় সবাই প্রত্যক্ষভাবে এই শ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুসনাদে আহমাদ শরিফের মতে, সব নবী-রাসূলই মেষ চরিয়েছেন; এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেও মেষ চরাতেন। “আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধীনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।” (সূরা আয-যুখরুফ : ৩২) প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ-তায়ালা মানুষকে একে অপরের ওপর মর্যাদা, বুদ্ধি-জ্ঞানে উন্নীত করে মানুষের মাঝে এই পার্থক্য ও তফাৎ এই জন্য রেখেছেন যে, যাতে বেশি মালের অধিকারী ব্যক্তি স্বল্প মালের অধিকারী ব্যক্তির কাছ থেকে, উচ্চ পদের মালিক তার চাইতে নিম্ন পদের মালিকের কাছ থেকে এবং অনেক বেশি জ্ঞান-বুদ্ধির মালিক তার চাইতে কম জ্ঞান-বুদ্ধির মালিকের কাছ থেকে কাজ নিতে পারে। মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ এই কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বজাহানের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যথা সকলেই যদি ধন-মালে, মান-সম্মানে, জ্ঞান-গরিমায় এবং বুদ্ধি-বিবেচনা ও অন্যান্য পার্থিব উপায়-উপকরণে সমান হত, তবে কেউ কারো কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতো না। মানবিক সমস্ত প্রয়োজন পূরণ ও ভারসাম্যের কারণে মালিক-শ্রমিক শ্রেণী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক শ্রেণী না থাকলে ছোট মানের ও তুচ্ছ মনে করা হয় এমন কাজও কেউ করত না। মহান আল্লাহ প্রত্যেককে পার্থক্য ও তফাতের মাঝে রেখেছেন এবং যার কারণে প্রত্যেক মানুষ অপর মানুষের মুখাপেক্ষী হয়।

রাসূল (সা) বলেছেন, ‘যে কোন মজুরকে খাটিয়ে নিজের পুরোপুরি কাজ আদায় করে নেয় কিন্তু তার মজুরি দেয় না কিয়ামতের দিন আমি তার দুশমন হবো। আর আমি যার দুশমন হবো তাকে আমি লাঞ্ছিত ও বিপদগ্রস্ত করেই ছাড়বো। মালিককে সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ ইসলাম মালিকদেরকে শ্রমিকের সমস্যা বিবেচনার ক্ষেত্রে তাদেরকে আল্লাহর বান্দাহ, প্রতিনিধি ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতে বলে। হযরত (সা) বলেন, ‘মজুর-চাকরদের অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্ত্বের লক্ষণ। তাদের অপরাধ প্রত্যেক দিন সত্তর বার হলেও ক্ষমা করে দিও।’ শ্রমিকদের প্রতি মালিকের দায়িত্ব প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কোন ভৃত্য তোমাদের জন্য যখন খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে, তখন তাকে হাতে ধরে খেতে বসাও। সে যদি অস্বীকার করে তবে দু-এক মুঠো খাদ্য তাকে অবশ্যই দিবে।’

মানুষের উন্নতির চাবিকাঠি হলো শ্রম। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। সব ধরনের শ্রমিককেই মর্যাদা দিতে হবে। একজন দিনমজুরের শ্রম, কৃষকের শ্রম, শিক্ষকের শ্রম, অফিসারের শ্রম, ব্যবসায়ীর শ্রমÑ সবই সমান মর্যাদার অধিকারী। শ্রমের মর্যাদা সমাজের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। শ্রমের ব্যাপারে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “অতঃপর যখন নামাজ শেষ হবে, তখন তোমরা জমিনের বুকে ছড়িয়ে পড় এবং রিজিক অন্বেষণ কর।” (সূরা জুমা : ১০) ইসলামে শ্রমের মর্যাদা অত্যধিক। শ্রম দ্বারা অর্জিত খাদ্যকে ইসলাম সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং জীবিকা অন্বেষণকে উত্তম ইবাদত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মহানবী (সা) বলেছেন, “ফরজ ইবাদতের পর হালাল রুজি অর্জন করা একটি ফরজ ইবাদত।” (বায়হাকি) এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তিনি তোমাদের জন্য ভূমি সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিজিক থেকে আহার কর।” (সূরা মুলক : ১৫) শ্রম ও শ্রমিকের ব্যাপারে মহানবীর (সা) সবচেয়ে তাৎপর্যম-িত ঘোষণাটি হলো- আল কাসিবু হাবিবুল্লাহ অর্থাৎ শ্রমিক হচ্ছে মহান আল্লাহর বন্ধু। পবিত্র কুরআনে মানুষকে চিত্রিত করা হয়েছে শ্রমের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য দিয়ে। ইরশাদ হচ্ছে- লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি কাবাদ অর্থাৎ “সুনিশ্চিতভাবে মানুষকে আমি শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা বালাদ : ৪)

কুরআন-হাদীস, ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায়, নবী-রাসূলগণ শ্রমিকদের কত মর্যাদা দিয়েছেন। ইসলামের সব নবী ছাগল চরিয়ে নিজে শ্রমিক হয়ে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মালিক হযরত শোয়াইব (আ) তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়ে শ্রমিক নবী মূসাকে (আ) জামাই বানিয়েছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) শ্রমিক যায়েদ (রা)-এর কাছে আপন ফুফাতো বোন জয়নবের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বনবী (সা) যায়েদকে (রা) মুতারের যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিন বানানো হয়েছিল শ্রমিক হজরত বিলালকে (রা)। মক্কা বিজয় করে কাবা ঘরে প্রথম প্রবেশের সময় মহানবী (সা) শ্রমিক বেলাল (রা) ও শ্রমিক খাব্বাবকে (রা) সাথে রেখে ছিলেন। নবীজি কখনো নিজ খাদেম আনাসকে (রা) ধমক দেননি এবং কখনো কোনো প্রকার কটুবাক্য ও কৈফিয়ত তলব করেননি।

রাসূল (সা) বলেছেন, “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা-ই খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তা-ই পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান কর।” (বুখারি, আবু হুরাইরা রা)। হজরত আবু বকর (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “ক্ষমতার বলে অধীন চাকর-চাকরানী বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (ইবনে মাজাহ) তিনি আরো বলেন, “কেউ তার অধীন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কেয়ামতের দিন তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে।”
শ্রমিকের দায়িত্ব চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা। ইরশাদ হচ্ছে, ‘শ্রমিক হিসাবে সেই ব্যক্তি ভালো, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সূর কাসাস : ২১৬) শ্রমিক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দিবে এটা তার কর্তব্য। আর এ কর্তব্য সুচারুভাবে পালন করলে তার জন্য দ্বিগুণ পুণ্যের কথা রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের দ্বিগুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হলো যে নিজের মালিকের হক আদায় করে এবং আল্লাহর হকও আদায় করে।’ কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে মানবজাতি, তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ, তিনি অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা আল-ফাতির : ১৪)
শ্রমিকের অধিকার
ইসলাম শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রর্দশন করে। শ্রমিককে কষ্ট দেয়া জাহেলিয়াতের যুগের মানসিকতা মনে করে। এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী করিম (সা) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী, না বলে। কেননা আমরা সবাই আল্লাহর দাস-দাসী।” ওমর ইবনে হুরাইস (রা) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হালকা কাজ নিবে তোমাদের আমলনামায় ততটা পুরস্কার ও নেকি লেখা হবে।”

http://www.dailysangram.com/post/329108