২৭ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৪৫

কোটা বাতিল হরিষে-বিষাদ নয় তো?

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : সরকারি চাকরিতে গোটা পদ্ধতির সংস্কারকে কেন্দ্র করে রাজপথ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মাত্র কয়েক দিন আগে। সরকার প্রথম দিকে এই আন্দোলনের দাবি-দাওয়া নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে তার অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটাবিধি সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তার চেয়ে বেশীই দিয়ে ফেলেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তিনি তার বক্তৃতায় পুরো কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষেই কথা বলেছেন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল নয় বরং সংস্কারের দাবিতেই আন্দোলন করছিলেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় চাওয়ার চেয়ে প্রাপ্তিটাই বেশি হয়েছে বলেই বলা যায়।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিসিএসে মেধাতালিকা থেকে ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ আসে কোটা থেকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি) ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫। এ ছাড়া এসব কোটা পূরণ না হলে সেখানে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য। আর যদি সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে এসব প্রাধিকার কোটা পূরণ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে প্রতিবন্ধীর কোটা পূরণ করা হয়। নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিলেন মাত্র।

আসলে প্রধানমন্ত্রী অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এমনটি করলেন কি না তা নিয়ে অবশ্য মহল বিশেষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাই বিষয়টিকে কেউ কেউ ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’র সাথে তুলনা করেছেন। এটাকে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা, আবার কেউ চাতুরীপূর্ণ বলেও মন্তব্য করতেও কসুর করছেন না। আসলে কোনটা সঠিক তা বলার সময় এখনও আসেনি। প্রকৃত সত্যটা উপলব্ধি করতে আমাদেরকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে বিষয়টি হরিষে-বিষাদও হতে পারে কেউ কেউ ধারণা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতি বাতিল সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে বলেন, সরকারি চাকরিতে আর কোটা রাখারই দরকার নেই। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এরপর বেশ কয়েকদিন গত হলেও এখন পর্যন্ত কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি বা সহসাই করা হবে এমন কোন আলামতও পাওয়া যাচেছ না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিল সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়ার পর এতদবিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারির পূর্ব পর্যন্ত চলমান আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে চোখে পড়ার কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা এখনও দেখা যায়নি। এমনকি এতদবিষয়ে সহসাই কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এমন লক্ষণও আপাতত দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না বরং পরিস্থিতির যত দ্রুতি অবনতি হচ্ছে তাতে আগামী দিনে এই বিষয় নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয় কি না সে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সদ্য সংঘটিত একটি ঘটনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, আমরা সমস্যা ও সংকটের সমাধানের পরিবর্তে উল্টো পথেই হাঁটছি বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এখন যা হচ্ছে তা যেমন কাক্সিক্ষত ছিল না, ঠিক তেমনিভাবে কোন পক্ষের জন্য কল্যাণকরও নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দেয়ার পর আন্দোলনকারীদের অন্যতম তিন নেতাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তুলে নেয়ার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যা সচেতন মহলকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।

গত ১৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার না হলে ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর আবারও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের এমন ঘোষণার মাত্র কিছুক্ষণ মধ্যেই আন্দোলনরত ছাত্রনেতা নুরুল হক নূর, মোহাম্মদ রাশেদ খান ও ফারুক হাসানকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। অবশ্য পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কারো কাছে অপ্রকাশ্য থাকেনি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী তিন ছাত্রনেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু মুক্তিপ্রাপ্ত ছাত্রনেতাদের বক্তব্যে ভিন্নসূর লক্ষ্য করা গেছে। মুক্তিপ্রাপ্তরা জানিয়েছে, তাদেরকে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। যা তারা মোটেই স্বাভাবিক মনে করছেন না বরং তাদের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেপক্ষ যে কথাই বলুক ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’ তা মোটামোটি নিশ্চিত।
যাহোক আইনশৃঙ্খলবাহিনী কর্তৃক ছাত্রনেতাদের তুলে নেয়া ও পরবর্তীতে মুক্তির বিষয়টি খুব সহজভাবে নিচ্ছেন না দেশের আত্মসচেতন মানুষ। বিষয়টি সরকারের নিবর্তনমূলক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, এর আগে অনেককে গোয়েন্দা তুলে নিয়ে গেলে তাদের আর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না-এমন অভিযোগও আছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এমনকি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে এঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে আটক নুরুল হক নূর, রাশেদ খান ও ফারুক হাসানকে ছেড়ে দেয়ার পর। এ শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাবার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-এর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাবা নবাই বিশ্বাসকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে থানায় নিয়ে নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সন্তানের কোন অপরাধের জন্য তার পিতাকে আটক করা হবে এটাকেও কেউ স্বাভাবিক মনে করছে না বরং এটিকে রীতিমত বাঁকা চোখেই দেখা হচ্ছে। এদিকে নবাই বিশ্বাসকে আটকে সারাদেশেই এক অজানা অতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল হতে জটিলতর করে তুলছে। যা কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে মোটেই কাম্য নয়।

মূলত চাকরিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু সে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য সরকারি দলের নেতাদের পক্ষে এজন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ি করা হয়েছিল। যা কোনভাবেই যৌক্তিক মনে হয়নি বরং শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। আসলে সরকারি দলের কিছুসংখ্যক নেতার দায়িত্বহীন ও অমার্জিত বক্তব্যের কারণে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে এবং সরকার দ্রুততার সাথেই পূর্বাপর না ভেবেই বা পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। ফলে মনে করা হয়েছিল যে, সরকার এ ক্ষেত্রে বেশ যুতসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার পর নতুন করে যে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে তা পরিকল্পিত ও সরকারের নিবর্তনমূলক কর্মকান্ড বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। যা সরকারের জন্যই হিতেবিপরীত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি কোটা বাতিল সংক্রান্ত সরকারের ঘোষণাকে এখন ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলেও কাউকে কাউকে মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে।
কোটা সংস্কারের দাবির মুখে পুরোপুরি কোটা বাতিল নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও বেশ প্রশ্ন উঠেছে। আন্দালনরত পক্ষগুলো কিন্তু পুরোপুরি কোটা পদ্ধতি বাতিল চায় নি বরং তাদের দাবি ছিল সংস্কারের। কিন্তু সরকার পক্ষ অতি আগ্রহী হয়ে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে কথা বলেছে। যা সরকারের আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত না এর মধ্যে কোন ছলচাতুরি আছে কিনা তা নিয়ে এখন সরব আলোচনা চলছে। কোটা বাতিল সংক্রান্ত সরকারের ঘোষণার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটা সংস্কার বা বাতিল নিয়ে কাজ করার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শাখা থেকে ফাইলটি উঠানোর কথা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে কাজ শুরু করবেন তারা। কিন্তু এই বিষয়ে সহসাই যে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসছে না ভাবসাব দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।

গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। আট দিনের সফর শেষে ২৩শে এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। এমনকি আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা ও তাদের স্বজনদের আটক করে নাজেহাল করার ঘটনায় পরিস্থিতি নতুন রূপ নিয়েছে এবং কোটা বাতিল বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্তু দেশের আত্মসচেতন মানুষ মনে করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত জটিলতার একটা ন্যায়সঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসা উচিত। আর এজন্য দায়টা সরকারেরই বেশি। কিন্তু সরকার যদি সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর না হয়ে নতুন সংকটের তৈরি করে তবে তা তাদের জন্যই অকল্যাণ বয়ে আনবে বলেই মনে হয়।

এদিকে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিলের আইনগত ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা একে অসাংবিধানিক বলেই মত দিচ্ছেন। সরকার যদি এতদবিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করে তাহলে তা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে তা টিকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে সুযোগের সমতা অংশের ১৯-এর (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।’ একইভাবে সংবিধানের তৃতীয় ভাগে সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা অংশের ২৯-এর (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমতা থাকিবে।’ অনুচ্ছেদ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’

অনুচ্ছেদ (৩)-এ ‘এই অনুচ্ছেদের কোন কিছু (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে, (খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মালম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধানসংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে, (গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবিধানে সব নাগরিকের সমতা নিশ্চিতের জন্য বলা হয়েছে। সংবিধানের ৭-এর (২) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে তারা বলছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত সংবিধানে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোটা যদি শূন্য হয়ে যায়, তাহলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সমতা লাভের যে সুযোগ, সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হতে পারে। কাজেই সংবিধানের সমতার ধারণার সঙ্গে কোটা পদ্ধতি বাতিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। সংবিধানের ৭-এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইবে।’

আসলে কোটা সংস্কারের আন্দোলন, সরকার কর্তৃক কোটা বাতিলের ঘোষণা এবং তৎপরবর্তী ঘটনা প্রবাহে জনমনে নানা সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা সংস্কারের দাবি করলেও সরকার কর্তৃক অতিউৎসাহী হয়ে তা বাতিল ঘোষণা এবং পরবর্তীতে ছাত্র ও তাদের অভিভাবক আটক এবং নাজেহালের ঘটনায় এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে আইনগত ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিয়েও। তাই কোটা সংস্কারের আন্দোলন ও সরকার কর্তৃক কোটা বাতিলের ঘোষণার যতটা সহজ সমীকরণ করা হয়েছিল বিষয়টি তত সহজ হবে বলে মনে হয় না বরং তা আন্দোলনকারীদের জন্য হরিষে-বিষাদও হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষ করে সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ সেদিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করে।

http://www.dailysangram.com/post/328278