২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৯

আমদানিকারকরা বিপাকে অস্থির ডলার বাজার

লাগামহীনভাবে বাড়ছে ডলারের দাম। কিছুতেই থামছে না। দফায় দফায় বৈঠক করেও ঠেকানো যাচ্ছে না মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এতে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। চলতি সপ্তাহে ডলারের দাম হঠাৎ এক লাফে ৮৬ টাকায় উঠে যায়। যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ ডলারের দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় ৬ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) নেতা মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, ডলারের উচ্চদামে আমাদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তবে লাভবান হচ্ছেন যারা রফতানিকারক। তিনি বলেন, বিষয়টি ভারসাম্য পর্যায়ে থাকা দরকার।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কয়েকটি ব্যাংকে এটি বেশি হচ্ছে। বারবার সতর্ক করার পরও শুনছে না। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৬ মে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আরও কিছু নির্দেশনা আসতে পারে।

বুধবার দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সর্বনিু দর ছিল ৮৪ টাকা। ২৯টি ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। একই দিন আমদানি পর্যায়ের ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্রিটিশ পাউন্ডের দরও। বুধবার পাউন্ডের দর বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ১২১ টাকা ৮৫ পয়সা। দীর্ঘদিন ডলারের দর স্থিতিশীল থাকার পর গত বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ডলারের দর বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকায়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে মাহে রমজান সামনে রেখে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীদেরও খরচ বেড়ে যাচ্ছে। টাকা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানিকারকরা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কাটবে আমদানিকারকরা।
ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ডলারের চাহিদার কারণে দাম বাড়ছে। প্রচুর এলসি পেমেন্ট হচ্ছে। এছাড়া আগামী কয়েক দিন টানা ছুটি। সেটারও তাৎক্ষণিক একটা প্রভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে ডলারের দাম বেড়েছে। তবে পাউন্ডের দাম পৃথিবীর সব জায়গায় বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পণ্য ও সেবা খাতে প্রচুর পরিমাণ আমদানি ঋণের দায় পরিশোধ হচ্ছে। তাই সামগ্রিকভাবে এক ধরনের টান সৃষ্টি হয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্র“য়ারি) খাতটিতে টান পড়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, বুধবার নগদ ডলারের দর সবচেয়ে বেশি উঠেছে বিদেশি খাতের সিটিব্যাংক এনএ’র। ব্যাংকটিতে এদিন দর ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা। ব্যাংক আল ফালাহ ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা, আইএফআইসি ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা ও যমুনা ব্যাংক ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করে। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকই ৮৪ থেকে ৮৫ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। বুধবার সর্বনিু ৮৪ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে চারটি ব্যাংক। তবে আমদানি পর্যায়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের ডলারের দর ছিল ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। আমদানি পর্যায়ে ডলারের সর্বনিু দর ছিল ওরি ব্যাংকে ৮২ টাকা ৬০ পয়সা।

একইভাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামও বেড়েছে ব্যাংকগুলোতে। বুধবার ব্র্যাক ব্যাংক প্রতি পাউন্ড বিক্রি করেছে ১২১ টাকা ৮৫ পয়সায়। তবে ব্যাংকগুলোর চেয়ে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে ডলার বিক্রি করছে। রাজধানীর কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা কয়েক দিন ধরে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি করছেন।
ডলারের দর বাড়ায় সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে এডি ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার পক্ষ থেকে ডলারের দর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে আমদানির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই আন্তঃব্যাংক দরের দুই টাকা বেশি রাখা হবে না বলে জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে ব্যাংকগুলো এ শর্ত মানলেও নগদ ডলারের দর আন্তঃব্যাংক দরের অনেক ওপরে উঠে গেছে। বুধবার আন্তঃব্যাংক ডলারের দর ছিল ৮২ টাকা ৫০ পয়সা। বিষয়টি নিয়ে আগামী ৬ মে বাফেদা আবারও বৈঠক ডেকেছে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/42317